সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা কর

মুফতি আবদুর রহমান গিলমান

সুরা ফাতিহার ষষ্ঠ আয়াতটি হলো- “ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম”। অর্থাৎ- তুমি আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা কর। হিদায়াত অর্থ পথ প্রদর্শন করা। হিদায়াতের কয়েকটি স্তর রয়েছে। কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা এই স্তরসমূহ প্রমাণিত। হিদায়াথের প্রথম স্তর সাধারণ ও ব্যাপক। এতে সমগ্র সৃষ্টি অন্তর্ভুক্ত। জড় প্রদার্থ, উদ্ভিদ এবং প্রাণিজগতও এর অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে- ‘তিনি প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্ব দান করেছেন এবং সে অনুপাতে তাকে হিদায়াত দান করেছেন।’ অর্থাৎ তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য বিশেষ অভ্যাস ও বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন। আর সে অভ্যাস ও দায়িত্বানুযায়ী হিদায়াত দান করেছেন। এই হিদায়াতের কারণে সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বস্তুই নিপুণভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছে।

হিদায়াতের দ্বিতীয় স্তর প্রথমটির তুলনায় অনেকটা সংকীর্ণ। এই হিদায়াত দ্বারা উদ্দেশ্য- যারা বিবেকবান ও বুদ্ধিসম্পন্ন। অর্থাৎ মানুষ এবং জিন জাতি। এই হিদায়াত নবী রাসুল এবং আসমানী কিতাবের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের নিকট পৌঁছেছে। কেউ তা গ্রহণ করে মুমিন হয়েছে আবার কেউ একে প্রত্যাখ্যান করে কাফের বেঈমানে পরিণত হয়েছে।

হিদায়াতের তৃতীয় স্তর আরো বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তা শুধু মুমিন ও মুত্তাকিদের জন্য। এই হিদায়াত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে কোন প্রকার মাধ্যম ব্যতীতই মানুষকে প্রদান করা হয়। এরই নাম তাওফিক। অর্থাৎ এমন অবস্থা, পরিবেশ ও মনোভাব সৃষ্টি করে দেওয়া যে, এর ফলে কুরআনের হিদায়াত গ্রহণ করা এবং এর ওপর আমল করা সহজসাধ্য হয় এবং এর বিরুদ্ধাচারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। -মাআরিফুল কুরআন, মুফতি শফি রহ. (সংক্ষেপিত)

সিরাত মানে পথ। আর মুসতাকিম মানে সঠিক। সঠিক পথের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন- যে পথের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য থাকে তাকে সঠিক পথ বলে। এক. সোজা হওয়া। আঁকাবাঁকা না হওয়া। দুই. প্রশস্ত হওয়া। তিন. এই পথে গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হওয়া। চার. গন্তব্য নিকটবর্তী হওয়া এবং পাঁচ. গন্তব্যে পৌঁছতে এ পথ ব্যতীত বিকল্প পথ না থাকা। সিরাতে মুসতাকিম দ্বারা উদ্দেশ্য দীন ইসলাম। আর এর মাঝে এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। -মাআরিফুল কুরআন, কান্ধলভী রহ.।

সিরাতে মুসতাকিম দ্বারা উদ্দেশ্য দীন ইসলাম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. প্রমুখ সাহাবী থেকে এটি বর্ণিত হয়েছে। হজরত মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া রহ. বলেন- এর দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলার ঐ দীন যা ব্যতীত অন্য কিছু তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

সরল পথ মানে সব কাজে মধ্যপন্থা অবলম্বন এবং যেকোন ধরনের বাড়াবাড়ি বর্জন। অনেকে মূলনীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির স্বীকার হয় এবং অনেকে কর্মক্ষেত্রে ও নৈতিক ক্ষেত্রে ভুল পথে চলে যায়। অনেকে আবার সব কাজের জন্য আল্লাহকে দায়ী করে; যেন পরিণতির ব্যাপারে মানুষের কোন হাত নেই। কেউ আবার সব কাজে নিজের ক্ষমতাকে চূড়ান্ত মনে করে যেন সৃষ্টি জগতের কাজ-কর্মে আল্লাহর কোন হাত নেই। অনেক কাফের আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ নবী-রাসুলদেরকে সাধারণ মানুষ এমনকি পাগল বলেও আখ্যায়িত করেছিল। অনেক বিশ্বাসী ব্যক্তি আবার হজরত ঈসা আ.-এর মতো নবীকে খোদার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। এ ধরনের চিন্তা ও আচরণের অর্থ হল রাসুল এবং তাঁর সাহাবায়ে কিরামের নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যূত হওয়া। পবিত্র কুরআন আমাদেরকে আর্থ-সামাজিক কাজ-কর্ম ও ইবাদতের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবল¤^নের নির্দেশ দিয়েছে। যেমন সুরা আ‘রাফের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তোমরা খাও এবং পান করো। তবে অপব্যয় করো না।’ সুরা আসরা বা বনী ইসরাইলের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘নামাজে স্বরউঁচুও করো না আবার অতিশয় ক্ষীণও করো না। বরং এ দুইয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। একইভাবে সুরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘মুমিন ব্যক্তিরা যখন দান করে তখন তারা অপব্যয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং তারা এ দুইয়ের মধ্যপন্থা অবল¤^ন করে।’ ইসলাম ধর্মে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের ওপর অত্যন্ত জোর দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ‘পিতা-মাতার প্রতি উত্তম আচরণ করো।’ আবার সেখানে এও বলা হয়েছে যে, ‘তারা যদি তোমাকে মিথ্যা পথে পরিচালিত করতে চায় তবে তাদের আনুগত্য করবে না।’ যারা কেবল সমাজ থেকে বেরিয়ে একাকি এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয় কিংবা শুধু মানবসেবাকে ইবাদত বলে, তাদের ধারনার জবাবে পবিত্র কুরআন নামাজ ও জাকাতকে পাশাপাশি বর্ণনা দিয়ে বলেছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত আদায় কর।’ সর্বোপরী সিরাতে মুসতাকিম দ্বারা উদ্দেশ্য এমন মধ্যম পথ- যা সীমা অতিক্রম এবং মর্জি মতো কাটছাট করে নেওয়া থেকে মুক্ত।

সারকথা, মানুষের জীবন যাপনের জন্য বিভিন্ন পথ রয়েছে। ব্যক্তি তার নিজস্ব চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পথ বেছে নিতে পারে। সমাজ ও জনগণের চলার পথ, পূর্বপুরুষদের অনুসৃত পথ, জনগণের জন্য অত্যাচারী শাসক ও তাগুতী শক্তির পক্ষ থেকে নির্ধারিত পথ। একটি পথ হল দুনিয়ার যাবতীয় রং, রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করা। আবার অন্য একটি পথ হল সমাজ জীবন থেকে বেরিয়ে একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা বেছে নেয়া। এত সব পথের মধ্যে সঠিক পথ বেছে নেয়ার জন্য মানুষের কি পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন নেই? আল্লাহ পাক মানুষের পথপ্রদর্শনের জন্য নবী রাসুল ও আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ যদি পবিত্র কুরআন, রাসুল সা.-এর অনুসরণ করে তাহলে সঠিক পথের সন্ধান পাবে। তাইতো আমরা প্রত্যেক নামাজে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যাতে তিনি আমাদেরকে সরল, সঠিক পথে পরিচালিত করেন। যে পথে কোন ক্ষতি ও বিভ্রান্তি নেই, তিনি যাতে ঐ পথে আমাদেরকে পরিচালিত করেন।

লেখক
সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি
ইশা ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন