সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

ইসলামী সমাজে নারীর স্থান, অধিকার ও কর্তব্য

নোমান আহমাদ

নারী শব্দটি উচ্চারণ করলেই মানসপটে ভেসে আসে আমাদের সমাজের করুণ চিত্র যেখানে নারীরা ছিঁটকে পড়েছে তাদের শাশ্বত মর্যাদার সম্মানিত আসন থেকে। মাতৃত্ব ও গৃহিণীর ঘরোয়া কাজ ছেড়ে দিয়ে তারা বরণ করে নিয়েছে কাঠফাটা দুপুরে রাস্তায় মাটি কাটা কিংবা চৈত্রের খরতপ্ত অপরাহ্নে ইট ভাঙ্গার পেশায়। আবার কখনো সমান অধিকারের নামে পুরুষের ন্যায় নারীর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে চলছে মাঠকর্মী রূপে। ক্ষমতার সুশোভিত লোভনীয় আহŸানের শিকার হয়ে নারীও আজ ভাগ বসিয়েছে জনপ্রতিনিধিত্বের আসনে। এতে করে তাদের হৃদয়-মন প্রশান্ত হচ্ছে না কি অশান্তির অনলে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছে তা এক প্রশ্ন বটে।

পুরুষের সৃষ্টিকর্তা যেমন আল্লাহ, তেমনি নারীর সৃষ্টিকর্তাও আল্লাহ। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির কাকে কি দায়িত্ব দেবেন, সেটা তাঁর অধিকারভুক্ত বিষয়। এতে কারো কোন দখল নেই। সুতরাং নারী বা পুরুষের আল্লাহর সৃষ্টি হয়ে আল্লাহর দেওয়া বিধানের অনুসরণ করাই যথোপয্ক্তু। সৃষ্টির বিপরীতে সৃষ্টির বিধান অকার্যকর, যুক্তিহীন ও স্রষ্টার নাফরমানিরই নামান্তর।
ইসলাম নারীকে কি অধিকার দিয়েছে কোথায় তাদের অবস্থান, তা জানতে হবে বুঝতে হবে। কিন্তু আমাদের মুসলিম নারী সমাজ আজ বিভ্রান্ত ঐ সকল নারীদের প্ররোচনায় যারা মুখে অনেক কিছু বলে যা ইসলামের নিয়ম বহির্ভূত। অথচ নবী করীম সা. বঞ্চিত নারী সমাজের উন্নয়ন, নারীর মর্যাদা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে বিধান দিয়েছেন তা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ণ দিকনির্দেশনা করে। এতে কোন দ্বিধা বা দ্ব›দ্ব থাকতে পারে না। আমাদের নারীদের তা জানার সময় কোথায়?

ইসলাম নারীকে অবজ্ঞা না করে ঘোষণা দিয়েছে যে মানুষের জীবনধারাকে সুন্দর ও সাবলীল করতে নারী ও পুরুষ উভয়ের দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে এবং উভয়েই উভয়ের মুখাপেক্ষী।
রাসূল সা. বলেছেন তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম এবং যে নিজ পরিবারের সাথে স্নেহশীল আচরণ করে। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে সতী-সাধ্বী নারীরা একান্তভাবেই ¯^ামীর অনুগত হয়ে থাকে। (সূরা নিসা- ৩৪)

পর্দাহীনভাবে চলাফেরার জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের সমাজের নারীরা। আফসোস আমাদের কর্মদোষের। তা না হলে আমরা ইসলামের নিয়মনীতি না মেনে কেন ছুটছি মরীচিকার পেছনে যেখানে রয়েছে শুধু হতাশা আর অস্থিরতা? পদে পদে হতে হয় লাঞ্ছিত-বঞ্চিত আর অপমানিত? অথচ আমরা দেখতে পাই ইসলামী শরীয়াতের হুকুম পর্দা মেনে চললে কোন নারীই আজ লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং ধর্ষিতা হত না । বরং তারা সম্মান পেত সর্বমহল থেকে।

মা হিসেবে নারীর মর্যাদা
ইসলামে মা হিসেবে নারীকে সুমহান সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যার সাথে পৃথিবীর অন্য কোন সমাজের বা ধর্মের সাথে তুলনা চলে না। বিশ্বনবী সা. উদাত্ত কন্ঠে বলেছেন, জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে অবস্থিত। অর্থাৎ মাকে সম্মান করলে জান্নাত পাবে। পিতার চেয়ে মায়ের সম্মান অনেক ঊচ্চে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, পিতা-মাতার মধ্যে সন্তানের উপর মায়ের অগ্রাধিকার। মাকে যথাযথ সম্মান করলে জান্নাত অবধারিত। আবার মাকে দুঃখ কষ্ট দিলে সন্তানের পক্ষে জান্নাত লাভ করা অসম্ভব। তাই মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, আর তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত-দাসত্ব কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। আর পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর। (সূরা নিসা- ৩৬)
মায়ের সম্মান ও মর্যাদা কত বড় তা মহানবী সা. এর বাণী থেকে উপলদ্ধি করা যায়। তিনি বলেছেন, আল্লাহ ও রাসূলের পরে সবচেয়ে অধিক সম্মান ও মর্যাদা এবং সদ্ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য মা। সুতরাং সদাচারণ দ্বারা মাকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।

স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা
ইসলাম স্ত্রীকে সহধর্মিনীর মর্যাদা দিয়েছে, দাসী হিসেবে নয়। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মে স্ত্রীদেরকে ভোগের পাত্রী, দাসী ও বাদীর মত ব্যবহার করত। কিন্তু ইসলাম নারীদের প্রতি এ অবমাননা ও অপমানকে দূর করে অনেক মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে। তাই আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন স্ত্রীদেরও তেমনি অধিকার রয়েছে, যেমনি ¯^ামীদের রয়েছে তাদের উপর এবং তা যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে। (সূরা বাকারা- ২২৮)

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা
ইসলাম নারী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। ইসলাম নারী শিক্ষার প্রতি মোটেও বৈষম্য করেনি। পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিল হওয়া আয়াত ইকরা (পড়)। এ দিয়ে প্রত্যেক নর-নারীকে স¤ে^াধন করা হয়েছে। এই মর্মে হাদিস শরীফে হযরত নবী করীম সা. বলেছেন, জ্ঞান অšে^ষণ করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরয।
ইসলাম শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের মর্যাদা দিতে গিয়ে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে, নারীর পক্ষে জ্ঞান ছাড়া পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলাম শিক্ষাক্ষেত্রে নারীকে উৎসাহ দিয়েছে। এই উৎসাহ পেয়ে হযরত আয়েশা রা. ছয় লক্ষ হাদিস ও সমস্ত কুরআন শরীফ মুখস্থ করেছিলেন। ১৫৪৩ জন মহিলা সাহাবী ছিলেন যারা বিভিন্ন পর্যায়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিশেষ করে শিক্ষা-দীক্ষায়, সভ্যতা, চিকিৎসা বিদ্যায়, বক্তৃতায় কোন অংশেই নারী পুরুষের চেয়ে কম ছিলেন না। উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে মুসলিম নারীরা সাহিত্য, কাব্য ও বক্তৃতায় ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। নারীশিক্ষা যদি নিষিদ্ধই হত তবে রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা.-কে ছয় লক্ষ হাদিস ও সমস্ত কুরআন শরীফ মুখস্থ করতে নিষেধ করতেন।

এছাড়াও নারীকে ইসলাম প্রত্যেক ক্ষেত্রে তার ¯^ ¯^ অবস্থানে ¯^ ¯^ অধিকার দিয়ে এসেছে যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হলেই নারীরা পাবেন তাদের সম্মান, মর্যাদা ও পরিপূর্ণ অধিকার। সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে-বাক্যটি প্রবাদ হলেও চিরবাস্তব। একজন নারী যদি ঘরের দায়িত্ব পালন না করে বাহিরের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকেন তাহলে তার ঘর সামলাবে কে? যে নারী তার ঘরের উন্নয়ন করতে পারে না, তার দ্বারা দেশের ও জাতির উন্নয়ন করা কি সম্ভব হবে? হাদিস শরীফে মহানবী সা. বলেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। অথচ বর্তমানের নারী সমাজ সে দায়িত্বকে ভুলে গেছে, পাশ্চাত্যকে অনুসরণ করছে। অথচ ¯^াধীনতা চাইÑ এই শ্লোগান প্রত্যেকটি ঘরে মহামারীর মত দেখা দিয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মুসলিম নারীরা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন, আহতদেরকে সেবা করেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পুরুষদেরকে উৎসাহ প্রদান করেছেন। ইসলামের নিয়ম নীতি মেনে চলে, রাসূল সা. এর আদর্শে পথ চলে আমাদের নারী সমাজের এমন ভূমিকা রাখা দরকার যা দ্বারা আগামী প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারে এবং তাদের জীবন সুন্দরভাবে গঠন করতে পারে।

অতএব হে মুসলিম নারী সমাজ! নারী মুক্তির আন্দোলন ¯^াধীনতার আন্দোলন নয়। ইসলামের অনুশাসন মেনে, শরীয়তের হুকুম- আহকাম সঠিকভাবে পালন করুন। কারণ, যে জাতি তার নিজ¯^ সংস্কৃতি লালন করতে জানে না তারা অনুন্নত ও নিকৃষ্ট। মুসলিম হিসেবে আমাদের অনুসরণীয় হচ্ছে আল কুরআন তথা রাসূলের জীবন আর্দশ। এই আদর্শকে লালনের মাধ্যমেই নারী জাতির সুমহান মর্যাদা সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নারী জাতিকে শুভবুদ্ধি দান করুন এবং ভুল পথ ত্যাগ করে তাদের সবাইকে ইসলামী জীবন তথা প্রকৃত মর্যাদার পথে আসতে তৌফিক দান করুন। আমীন।

লেখক
কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক
ইশা ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন