দীন কায়েমে তাবলিগ ও জিহাদের সমন্বয় অপরিহার্য
মুহা. আব্দুল কাইউম কাউসার
হযরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা. এরশাদ করেন, “আল্লাহর শপথ করে বলছি তোমাদের উচিৎ আমর বিল মারুফ এবং নাহি আনিল মুনকার করা, না হয় আল্লাহ তোমাদের ওপর কঠিন আযাব প্রেরণ করবেন, অতঃপর তোমরা দো’আ করবে কিন্তু তোমাদের দো’আ কবুল করা হবেনা।” (তিরমিযী ২/৪০)
উপর্যুক্ত হাদিসে রাসূল সা. আমাদেরকে দু’টি কাজ ছেড়ে দেয়ার পরিণতিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব ও দো’আ কবুল না হওয়ার ধমকি দিয়েছেন। একটি হল আমর বিল মারুফ (সৎ কাজের আদেশ) তথা দাওয়াত ও তাবলিগ এবং অপরটি হল নাহি আনিল মুনকার (অন্যায়ের প্রতিবাদ) তথা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ।
তাবলিগ মানে কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী আদর্শের কথাগুলো আল্লাহর বান্দাদের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং তা সমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের মাঝে চেতনা সৃষ্টি করা। তাবলিগ একটি ব্যাপক বিষয়। যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে একে অপরের কাছে দীনের কথা পৌঁছে দেয়া তাবলিগ, তেমনি মুয়াজ্জিনের নামাযের জন্য আহবান করা, আলেম-উলামাদের ওয়াজ নসিহত, দীনি লেখকদের লেখালেখিও দাওয়াত ও তাবলিগের অর্ন্তভুক্ত। তাবলিগ বিশেষ কোন পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাথে সাথে তাবলিগের বিষয়বস্তুও ব্যাপক। যেহেতু ইসলাম পুর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, তাই আমাদের দাওয়াতের বিষয়ও ব্যাপক হওয়া উচিৎ। বিশেষ কিছু আমল, ও ফযিলতের দাওয়াত যথেষ্ট নয়। তাই যেভাবে ব্যক্তি জীবনে দীনের ওপর চলার প্রতি দাওয়াত দিতে হবে, তেমনি ধাপে-ধাপে পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী আদর্শ অনুসরনের জন্য উৎসাহ দিতে হবে এবং বিদ্যমান কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থা তুলে দিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মুসলিম উম্মাহর মাঝে চেতনা সৃষ্টি করতে হবে। না হয় আামাদের দাওয়াত ও তাবলিগ কাক্সিখত ফলাফল বয়ে আনবেনা। ব্যক্তিগত কিছু নামায-রোজা করতে দেখা গেলেও সামগ্রিক ইসলামী বিপ্লবের আশা করা যায় না। আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা কুফরি তন্ত্র-মন্ত্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়াও সম্ভব হবে না। তাই আমাদের দাওয়াত ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিধি-বিধানের ওপর হওয়া উচিৎ। যেমনি রাসূল সা. সাহাবাদের মাঝে করেছিলেন, প্রথমে তাদেরকে ঈমানি দাওয়াত দিয়েছেন এরপর আমল শিখিয়েছেন অতঃপর তাদেরকেই জাহিলি সমাজ সংস্কারের জন্য জানবাজ মুজাহিদ হিসেবে তৈরী করেছেন। ফলাফলে জাহিলি যুগের জাহিলি নেতা ঈমান আনার পর আমীরুল মু’মিনীন ও প্রধান সেনাপতির দায়িত্বও পালন করেন। আজ যদি আমরা দাওয়াতের ক্ষেত্রে নববী ধারার অনুসরণ করি তবে অচিরেই প্রত্যাশিত ইসলামী বিপ্লব দেখতে পাব, ইনশাআল্লাহ।
জিহাদ হলো আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন বাস্তবায়ন ও বুলন্দ করার লক্ষে চেষ্টা করা। জিহাদ শুধু কিতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং জালিমশাহীর বিরুদ্ধে মৌখিক প্রতিবাদ, ইসলামী জাগরণের লক্ষ্যে লেখা-লেখি করা, কুফরি শক্তিকে পরাজিত করার পরিকল্পনা করাও জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে জিহাদের প্রত্যেক স্তর প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব নয়; বরং বাহুশক্তি দ্বারা কুফরি শক্তিকে মিটিয়ে দেয়া মুসলিম শাসকের দায়িত্ব, মুসলিম দেশের নাগরিকদের দায়িত্ব মৌখিক প্রতিবাদ, অমুসলিম দেশের মুসলিম নাগরিকের দায়িত্ব পরিকল্পনা করা। সুতরাং যদি কোন মুসলিম দেশে ইসলামী হুকুমত না থাকে তাদের দয়িত্ব নিজ দেশে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা, নিজ দেশের চিন্তা না করে জিহাদের উদ্দেশে অন্য দেশে যাওয়া, মা থেকে মাশির জন্য দরদ বেশী দেখানোর নামান্তর। তাই উচিৎ স্বদেশেইসলাম প্রতিষ্ঠা করে আমীরুল মু’মীনিনের নেতৃত্বে বিশাল কাফেলা নিয়ে কুফরি শক্তিকে সমূলে উৎখাত করা। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম উম্মাহর মাঝে চেতনা সৃষ্টি করাই বড় জিহাদ। কাক্সিখত বিপ্লবের জন্য জিহাদ ও তাবলিগের মাঝে সমন্বয় আবশ্যক, দীনের যে কোন একটি খণ্ডিত অংশ কায়েমই কেবল যথেষ্ঠ নয়। কেননা দাওয়াতের মাধ্যমে জিহাদের চেতনা সৃষ্টি না হলে সে দাওয়াত যেমন নিষ্ফল, তেমনি চূড়ান্ত জিহাদের পূর্বে দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামী হুকুমতের প্রয়োজনীয়তা না বুঝিয়ে, কুফরি শাসনের অসারতা তুলে না ধরে, ইসলামী শাসন মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরী না করে এবং জিহাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী হুকুমত পরিচালনার জন্য যোগ্য সৈনিক তৈরি না করে যদি জিহাদের ডাক দেয়া হয় তাও ফলদায়ক হবেনা।
হাদিসে বর্ণিত শাস্তির বাস্তব দৃষ্টান্ত
চলমান বাংলাদেশের অবস্থা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কুফরি শাসন প্রতিষ্ঠিত থাকা। শাসক শ্রেণি ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানদের দালালী আর গোলামি করা, নারী নেতৃত্বের মত অভিশাপ ঘাড়ে চেপে বসার চেয়ে বড় গজব কি হতে পারে! যে অভিশাপে আজ দেশ ও জাতি ধ্বংসের শেষ সীমায় উপনীত। তাই হাজার পীর-মাশায়েখের দো’আর কোন ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। তবে এই মুহুর্তে যদি আমরা নববী ধারায় দাওয়াত ও জিহাদ চালিয়ে যাই অবশ্যই আল্লাহ আমাদেরকে অভিশাপ থেকে মুক্তি দিবেন, ইনশাআল্লাহ।