সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

ফিকাহ সংকলনের ইতিহাস

মুহাম্মাদ মুস্তাকিম বিল্লাহ

কুরআনুল কারীমের ফায়সালা অনুযায়ী উম্মতে মুহাম্মদীর মাঝে দ্বীনের বোধ থাকা অত্যন্ত জরুরি এবং সমীচীন হচ্ছে একদল লোক ফিকহের গবেষণায় নিমগ্ন থাকবে এবং অন্যান্যরা তাদের কাছ থেকে সে বিষয়গুলো গ্রহণ করবে। মূলতঃ ফেকাহ কিতাবুল্লাহ এবং সুন্নাহ থেকে আলাদা কিছু নয়, বরং এ দুয়ের গভীরে থাকা বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে সামনে আসার নামই হচ্ছে ফিকাহ। সুতরাং ফিকাহ হচ্ছে ঐশী হেদায়েত এবং শরিয়াতে নববী হতে আবিষ্কৃত একটি বিষয়। এ কারণে কালামে হাকীমে এবং হাদীসে ফিকহের আভাস দেয়া হয়েছে। কালামে হাকীমে এরশাদ হচ্ছে- “তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যেন তারা দ্বীনের জ্ঞান (ফিকহ) অর্জন করে, এবং সংবাদ দান করে ¯^জাতিকে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, যেন তারা বাঁচতে পারে”। (সূরা : বাকারাহ-১২২)
হযরত রাসূলে কারীম সা. এর যুগ থেকেই ফিকাহ শাস্ত্রের সূচনা হয়েছিল। সুস্পষ্টভাবে যে সকল বিষয় কুরআন-সুন্নাহতে নেই, সে বিষয়ে রাসুলে কারীম সা. হযরত সাহাবায়ে কেরামকে ইজতিহাদের পথ বাতলে দিয়েছেন। রাসুলে কারীম সা. এর ইন্তিকালের পর হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. নতুন নতুন বিষয়ের ক্ষেত্রে সেপথই অবল¤^ন করেছেন এবং এ থেকেই জাতি তাদের আইনি প্রয়োজন এবং চাহিদাগুলো মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

ফিকাহ এর সংজ্ঞা
ফিকাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোন কিছু স¤^ন্ধে জানা ও বুঝা। (লিসানুল আরব) ফিকাহ শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলো, “শরিয়াহ’র বিস্তারিত প্রমাণাদি থেকে ব্যবহারিক শরিয়াহ’র বিধি-বিধান স¤^ন্ধে জ্ঞাত হওয়াকে ফিকহ বলা হয়। (আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু)।
ফিকাহ এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য: ফেকাহ এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো, দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সাফল্য অর্জন করা। এ অর্থেই ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেছেন, ফিকাহ হচ্ছে নফস এর পরিচয় লাভ করা তথা কি কি তার অনুকূলে (কল্যাণকর) এবং কি কি তার প্রতিকুলে (ক্ষতিকর) সে স¤^ন্ধে জ্ঞান।

ফিকাহ এর আলোচ্য বিষয়: ফিকাহ এর আলোচ্য বিষয়গুলোকে নিম্নোক্ত বিভাগগুলোর অধীনে বিবেচনা করা যায়-
(১) ইবাদত: যা আল্লøাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের নিয়ম কানুন বলে দেয়। যেমন- সালাত, সাওম, হজ্ব, ইত্যাদি।
(২) মু’আমালাত: সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধিবিধান। যেমন- বেচাকেনা, ঋণ, ভাড়া, আমানত জামানত ইত্যাদি।
(৩) মু’আশারাত: মানবজাতির বংশ রক্ষা সংক্রান্ত বিধিবিধান। যেমন- বিয়ে, তালাক, ইদ্দত, অভিভাবকত্ব, উত্তরাধিকার ইত্যাদি।
(৪) উকুবাত: বিভিন্ন অপরাধ। যেমন- চুরি, ব্যভিচার, হত্যা, অপবাদ ইত্যাদির শাস্তি।
(৫) মুখাসামাত: আদালতি বিষয়। যেমন- অভিযোগ, বিচারবিধি, ¯^াক্ষ্য প্রমাণ ইত্যাদি।
(৬) হুকুমাত ও খিলাফাত: শাসক নির্বাচন, বিদ্রোহ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জিহাদ, সন্ধি, চুক্তি, কর আরোপ ইত্যাদি।

ফিকাহ এর উৎপত্তি
ফিকাহ এর মূল উৎস হচ্ছে মানুষের প্রতি শরিয়ত প্রণেতা আল্লøাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ স¤^লিত বাণী। অতএব বলা যায় যে, নবুয়াত প্রাপ্তির পর রাসুলুল্লাহ সা. এর মক্কী জীবন থেকেই ফিকাহ এর যাত্রা শুরু। কিন্তু মক্কী জীবনে পবিত্র কুরআনের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ নাযিল হলেও তার খুব সামান্য অংশই ছিল বিধিবিধান স¤^লিত।
আহকাম সম্পর্কিত প্রায় সমস্ত আয়াতই মদীনায় হিজরত করার পর থেকে নাযিল হতে থাকে এবং মাদানী জীবনের দশবছর ব্যাপী তা চলতে থাকে। অতএব, আমাদের জন্য এটা বলাই অধিকতর যথার্থ হবে যে, ফিকহের সূচনা বা উৎপত্তি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সা.-এর মাদানী জীবনের শুরু থেকে অর্থাৎ প্রথম হিজরী থেকে। (আস-শাকসিয়্যাহ আল-ইসলামিয়্যাহ)।

ফিকাহ এর বিকাশ
এটি একটি বিস্তৃৃত বিষয় যার বিস্তারিত বিবরণ এই সংক্রান্ত গ্রন্থসমূহ থেকে অধ্যয়ন করা যেতে পারে, তবে এখানে সংক্ষিপ্তরূপে উল্লেøখ করা হচ্ছে।
উৎপত্তিকাল থেকে শুরু করে ফিকাহ এর ক্রমবিকাশকে তিনটি পর্যায় বা যুগে ভাগ করা যায়।
(১) রাসুলুল্লাহ সা.-এর যুগে ফিকাহ।
(২) সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর যুগে ফিকাহ।
(৩) তাবাঈ-তাবে তাবীগণের যুগে ফিকাহ।

(১) রাসুলুল্লাহ সা. এর যুগে ফিকাহ
এ যুগের সময়কাল হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সা.-এর মদীনায় হিজরত তথা ১ম হিজরী হতে তাঁর ওফাতের সময় অর্থাৎ ১০ম হিজরী পর্যন্ত। এ যুগে ফিকাহের যাবতীয় বিষয় সরাসরি রাসুলুল্লাহ সা.-এর পবিত্র সত্তার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। রাসুলুল্লাহ সা.-এর নিকট নাযিলকৃত প্রত্যক্ষ ওহী আল কুরআন ও পরোক্ষ ওহী যা হাদিসরূপে আমাদের কাছে এসেছে। যে কোন বিষয়ে আইন প্রণয়ন, উদ্ভুত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ও যথোপযুক্ত ফতওয়া ফারাইজ, দ্বীনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, কুরআনের হুকুম আহকামের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ইত্যাদি, সবই ওহীর মাধ্যমে তিনি নিজেই সম্পাদন করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রা. তা শিক্ষা দিতেন এবং বাস্তব সমাজে তা প্রয়োগ করে দেখাতেন। সে সময় ¯^তন্ত্র ফিকাহ শাস্ত্র প্রণয়নের কোন প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। তথাপি পরবর্তী যুগের ফিকাহ শাস্ত্রের সব মৌলিক বিষয়ের গোড়াপত্তন এ যুগেই হয়েছিল। এমনকি, ফিকহের গতিশীলতার প্রধান উপকরণ যে ইজতিহাদ ও কিয়াস তার শিক্ষাও হয়েছে এ যুগেই। এ বিষয়ে অনেক সহীহ হাদিস বিদ্যমান।

রাসুলুল্লাহ সা. মুআয ইবনে জাবাল রা.কে ইয়েমেনের গভর্নর করে পাঠানোর সময় তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুআয তুমি কিসের ভিত্তিতে ফায়সালা করবে? তিনি বললেন, আল্লøাহর কিতাব দিয়ে। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, যদি আল্লøাহর কিতাবে তা না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে রাসুলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহ দিয়ে।
রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, যদি রাসুুলুল্লাহ সা. এর সুন্নাতে না থাকে? তিনি বললেন, তখন আমি ইজতিহাদ করে রায় দিবো। তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, সকল প্রশংসা আল্লøাহর যিনি তার রাসুলের প্রতিনিধিকে এমন পথের সন্ধান দিয়েছেন যাতে আল্লøাহ ও আল্লøাহর রাসুল সন্তুষ্ট। (মুসনাদে আহমদ)। এই হাদিসটি ইজতিহাদের বৈধতা প্রমণে ব্যাপক ব্যবহৃত একটি হাদিস।

রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবায়ে কেরাম রা.কে কিয়াসের মাধ্যমে ইজতিহাদের পদ্ধতি শিখিয়েছেন। যেমন, হযরত উমর রা. যখন রাসুলুল্লাহ সা. নিকট স্ত্রীকে চু¤^নের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে কিনা তা জিজ্ঞাসা করেন তখন রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, তুমি যদি কুলি কর তাতে কি রোজা ভঙ্গ হবে? (ইবনে হাযম, ইহকাম)।
এখানে রাসুলুল্লাহ সা. উমর রা.কে কিয়াস বা সাদৃশ্যমূলক তুলনার মাধ্যমে রোজাদারের চু¤^ন ও কুলি করার মিল বোঝালেন এবং দেখালেন যে ওটার মতো এটাও রোজা ভঙ্গ করবে না।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)

লেখক
কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন