সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

Ucren-Agrason

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন : পশ্চিমা বিশ্বের দুশ্চিন্তার কারণ

মুহাম্মাদ সালমান সোহেল

ইউক্রেন সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। গতবছর মার্চে ক্রিমিয়া দখলদারিত্বের মাধ্যমে পশ্চিমা সংকটের সূত্রপাত হয়। একটি বছর পেরিয়ে গেলেও সংকটের মাত্রা যেন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছে । এক দিকে রাশিয়া অপর দিকে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব । ইতোমধ্যে রাশিয়া সুকৌশলে সফলতার সাথে ক্রিমিয়াকে বশীভূত করতে পেরেছে । সেই সাথে উস্কে দিয়েছে ইউক্রেন বিদ্রোহ। আর এরই প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল আজ স্বাধীনতার নেশায় মরিয়া হয়ে উঠেছে যা ইউক্রেনিয়ানদের জন্য সার্বভৌম সংকট হিসেবে বিবেচিত। এ পযর্ন্ত এই বিদ্রোহে ছয় হাজার মানুষ মারা গেছে আর বাস্তুচূত হয়েছে দশ লক্ষ (তথ্যসূত্র : পার্লামেন্টের ইউক্রেনের প্রেসিন্ডেটের দেয়া পরিসংখ্যান)। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ভূমিকা অনেকটাই ফিনল্যান্ডজাইশনের মতো। আর রাশিয়াই যে ইউক্রেন কে অশান্ত করার চেষ্টা করছে এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। মূলত ইউক্রেনের অর্থনীতি রাশিয়া দ্বারা প্রভাবিত। রাশিয়ার দেয়া ঋণে কিয়েভ আজ জর্জরিত এমন কি পূর্বের বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে ইউক্রেন কে দেয়া মস্কোর গ্যাস সংযোগ কেটে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ক্রেমলিন প্রশাসন। ইউক্রেনের জ্বালানি খাত বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য কিয়েভ কে রাশিয়ার উপর তাকিয়ে থাকতে হয়। তাছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কিয়েভের প্রধান নৌ সদর দপ্তর ২০৪২ সাল পর্যন্ত মস্কোর কাছে ইজারা দেওয়া আছে। এছাড়া ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত অনেক কারণে ইউক্রেন কে রাশিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়। ব্যাপারটা হলো, ইউক্রেনকে যেহেতু এত বহুলাংশে রাশিয়ার উপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে পুতিন কেন ইউক্রেনিয়ানদের সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে জড়িয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে। মস্কোতো ইউক্রেনকে অন্যভাবেও শাসন করতে পারত। এখানে কয়েকটি বিষয় বিশ্লেষণ করলে ব্যাপারটি সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

প্রথমত – পুতিন নষ্টালজিয়ার (স্মৃতি কাতরতা) বশবর্র্তী হয়ে হয়ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই পুরনো রূপটি ফিরে পেতে চাচ্ছে ।
দ্বিতীয়ত – মস্কো মার্কিনদের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়তেও পারে যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলেও রাশিয়ার আধিপত্যন এখনো রয়েছে ।
তৃতীয়ত – হতে পারে রাশিয়ার আবারো বিশ্ব নেতৃত্বে আসার ক্রম চেষ্টা ।
চতুর্থত – হতে পারে এটা রাশিয়ার পারমানবিক শ্রেষ্ঠত্বের দাম্ভিকতা।
পঞ্চমত – যেহেতু আমেরিকার বরাবরই রাশিয়ার ঐতিহাসিক শত্রæ হিসেবে বিবেচিত, তাই ইউক্রেন আগ্রাসনটা পেন্টাগণের প্রতি মস্কোর একটি জবাব বার্তা বললেও হয়ত ভুল হবে না ।

তবে এই পুতিন ডকট্রিন নিয়ে শুধু কিয়েভ নয় খোদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ পুরো পশ্চিমা বিশ্ব চিন্তিত । কারন মস্কো শক্তিশালী হওয়া মানেই বাল্টিক থেকে প্যাসেফিক, ককেশাস থেকে হিন্দু কোশ পর্যন্ত জার্মান, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ন্যাটোর প্রভাব হ্রাস পাওয়া । আর যুক্তরাষ্টের সাথে রাশিয়ার স্নায়ু যুদ্ধের কথাতো আর বলাই বাহুল্য । তাছাড়া রাশিয়া ইতোমধ্যে ব্রাজিল, ভারত, চীন , দক্ষিণ আফ্রিকা বা ব্রিকস (BRICS) ভুক্ত দেশসমূহকে নিয়ে ব্রিকস ব্যাংক গঠন করে বিশ্ব ব্যাংক কে হুমকি তে ফেলে দিয়েছে। আবার সিরিয়ার আসাদ সরকারের এখনো টিকে থাকার পিছনে যে রাশিয়ারই হাত রয়েছে তা পশ্চিমারা বিশ্বাস করে । আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দি¦গ্ন হওয়ার অনেক কারনই রাশিয়া ইতোমধ্যে জন্ম দিয়েছে। তারা ইরান ও চীনের সাথে মস্কোর গলায় গলায় সম্পর্কটা ভালোভাবে নিচ্ছে না । অপর দিকে কিউবা, ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কটা তো আছেই।

রাশিয়া কে ঠেকানোর অনেক চেষ্টা হোয়াইট হাউজের মিত্রজোটেরা করেছে কিন্তু ক্রেমলিন সরকার এগুলোকে পাত্তা না দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রতিক্রিয়া স্বরূপওবামা প্রশাসন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েক দফাই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা সহ মস্কোর কিছু রাজনৈতিক নেতার দের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং তারই ফলশ্রæতিতে রাশিয়া এ-৮ থেকে ছিটকে পড়েছে। রুশ প্রশাসনের বেপরোয়া ও আগ্রাসী নীতিতে সবচেয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তাও বিপদে আছে ওবামা প্রশাসন। ফোনে আড়িপাতা স্নোডেন ইস্যু, উইকিলিকসের গোপন তথ্য ফাঁস, সিরিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও জঙ্গি ইস্যুতে এমনিতেই মার্কিনদের কাঁটাঘায়ে নুনের ছিটা; তারপর আবার চীন রাশিয়া বন্ধুত্ব যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। আর মধ্যে প্রাচ্যে আই এস ইস্যুতো আছেই । এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের এই অর্থনৈতিক মন্দার বাজারে পুতিন কে যদি থামানো না যায় তবে বিশ্ব রাজনীতিতে একটা ব্যাপক পরিবর্তন অবিসম্ভাবী আর এটা হতে পারে রাশিয়ার অনুকূলে। এখন প্রশ্ন হল, রাশিয়া কি আমেরিকার চোখ রাঙানি ও তার মিত্র জোটের দফায় দফায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে পারবে ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের হয়তো আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর একই সুরে বলতে হবে দেখা যাক কি হয়!

লেখক
লোক প্রশাসন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন