আজ ২০ মে, শুক্রবার বিকালে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষাআইন বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, “আমি সেলিম ওসমান সাহেবকে আশ্বস্ত করে বলব, আপনি মন খারাপ করবেন না। আপনার অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। যদি আপনার কোন ক্ষতি হয় তাহলে সমস্ত আস্তিকরা (মুসলমানরা) আপনার পক্ষে এক হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে ইসলাম ও আল্লাহ কটুক্তিকারীকে মাননীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সাহেব শাস্তি প্রদান করেন। এরপর থেকে এদেশের হাতেগোনা কিছু নাস্তিক এবং তাদের ছত্রছায়ায় লালিত মিডিয়া কটুক্তিকারীর পক্ষে উঠে পড়ে লাগায় মন্ত্রী পরিষদসহ সরকারের পক্ষ থেকে কটুক্তিকারীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সেলিম ওসমানকে বলা হচ্ছে। সে প্রেক্ষিতে মুফতি ফয়জুল করীম উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিতর্কিত শিক্ষা আইন ২০১৬ ও শিক্ষানীতি ২০১০ বাতিল না করলে আমাদের সকল সন্তান আল্লাহকে ভুলে রাম-নারায়ণ শিখবে। কোন মুসলমান থাকবে না। এই ধর্মবিনাশী সিলেবাস বাতিল না করলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
পুরানা পল্টনস্থ অফিস চত্ত্বরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহবায়ক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফোরামের উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, জাতীয় তাফসীর পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, শায়খুল হাদীস মাওলানা মকবুল হোসাইন, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা হাবীবুল্লাহ সিরাজী, মাওলানা আনসার আহমদ পীর সাহেব কুমিল্লা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ফজলুল হক মৃধা, মাস্টার আব্দুস সবুর, মহানগর উত্তরের আহবায়ক মাছউদুর রহমান, দক্ষিণের আহবায়ক মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল হুমায়ূন কবির, মুফতি আব্দুর রহমান গিলমান প্রমুখ।
মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম আরো বলেন, আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নাস্তিক্যবাদকে তিনি মহাবিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ভূমিকম্প, সুনামী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, সিলেবাসে নাস্তিক্যবাদ এবং হিন্দুত্ববাদ তার চেয়ে বেশী মারাত্মক। কেননা এর মাধ্যমে জাতির ঈমানকে ধ্বংস করা হয়। তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে সত্যেন সেনের ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোট গল্পে মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিখানো হচ্ছে, গরু হল মায়ের মত, তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়; অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। তিনি আগামী ২৬ মে এর মধ্যে ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন বাতিল ও সিলেবাস সংশোধনের দাবী জানান। অন্যথায় ২৭ মে ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহবায়ক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষা আইন ২০১৬ এর ১১ (২) ধারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। এর তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এদেশের কওমী মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। যা দেশবাসী মেনে নেবে না। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নামধারী কতিপয় শিক্ষক ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলছে, যা অনভিপ্রেত। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
সদস্য সচিব মাওলানা এবি ম জাকারিয়া আইসিটি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ জাতির মেরুদণ্ডে চরম আঘাত। তিনি অনতিবিলম্বে তাদের যৌক্তিক দাবী মেনে নেয়ার এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণের দাবী জানান।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন মোড় হয়ে হাউজবিল্ডিং চত্ত¡রে এসে মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
কর্মসুচী : আগামীকাল ২১ মে শনিবার সকাল ১০টায় গুলিস্থানস্থ কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আহুত জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। এতে দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম উপস্থিত থাকবেন।