জলবায়ু সংকটসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটে বাংলাদেশ যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে তেমনি মায়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে নেতৃত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ বিশ্বের সর্বাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশেই আশ্রয় নিয়েছে। যার সংখ্যা তিন লক্ষ। এই সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ বিষয়টিকে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিবেচনা না করে এটিকে জাতিসংঘ-ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দরবারে উপস্থাপন করে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
১৯৭১ এ আমরা হত্যা, নির্যাতন ও জুলুমের শিকার হয়ে আমাদের প্রায় এক কোটি জনগণ পার্শবর্তী দেশে আশ্রয় নিয়েছিলো। আমরা নিগ্রহের বেদনা বুঝি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনের পার্শ্বে যদি আমরা না দাঁড়াই তাহলে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পারেন, বৈশ্বিক নেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করতে। এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব মুসলমান ও বিশ্ব মানবতার হৃদয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হবেন।
আজ ২৪ নভেম্বর’১৬ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর উদ্যোগে মায়ানমারে মুসলিম গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দীন উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, গত ১৯ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উড়িতে ১৭ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন, ভাল কথা। কিন্তু প্রতিবেশী রোহিঙ্গা হত্যা-নির্যাতন ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না, আপনার এ কেমন মানবতা? আপনার একপেশে মানবতায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন।
সভাপতি বক্তব্যে ইশা ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম আল-আমীন বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানের ইতিহাস, নির্যাতনের ইতিহাস। ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত আরাকান স্বাধীন রাজ্য ছিল। ১৭৮৫ সালে বার্মিজরা আরাকান দখল করে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও গৃহহীন করে। বৃটিশরা আরাকান দখলের সময় এটি ছিল একটি মৃত্যুপূরী। ১৯৪২ সালে জাতিগত দাঙ্গায় ২০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। জাপানীরা বার্মা দখল করে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণ করে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে দেশ থেকে বিতাড়ন করে। সামরিক জান্তা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য সস্তা জাতিয়তাবাদকে ব্যবহারে করে রোহিঙ্গাসহ ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাকে ব্যাপকভাবে নির্যাতন করে। বর্তমান অং সান সূচির সরকার সামরিক জান্তার অসমাপ্ত মিশনে নেমেছেন। বোদ্ধদের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংসে বিশ্বে তিনি ধ্বংসের নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জি. এম. রুহুল আমীন, সেক্রেটারি জেনারেল শেখ ফজলুল করীম মারুফ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মু. হাছিবুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় তথ্য-গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক আ হ ম আলাউদ্দীন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বক্তাগণ বলেন, জাতিসংঘ, ওআইসিসহ বিশ্ব সংস্থাগুলো বক্তব্য বিবৃতির আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বৃটিশরা ক্ষমতায় থাকাকালীন রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা করেছেন, এখন তারা চুপ কেন? বিশ্ব নেতৃত্বকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হলে বিশ্ব মুসলিম বসে থাকবে না। বাঙ্গালিরা কাঁটাতারের সীমানা মানবে না। সমাবেশ থেকে আগামী ৫ ডিসেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষিত বাংলাদেশস্থ মায়ানমারে দুতাবাস অভিমুখে মিছিল সফল করার আহবান জানানো হয়।