আল্লামা ইকবাল স্বীয় বিপ্লবাত্মক শিক্ষা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি, অভ্রান্ত নেতৃত্ব, নির্মল চরিত্র, ক্ষুরধার লিখনী, মেধা-মনন, চিন্তার গভীরতা, প্রজ্ঞা ও কর্ম বলে মানুষকে সত্য, সুন্দর, সুচিময় ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন গঠনের প্রতি আহ্বান জানান। ড. আল্লামা ইকবাল (রহ.) বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি আছরারে খুদী, রমুজে বেখুদী, পায়ামে মাশরিক, বাঙইদারা, যরবে কালীম, শেকওয়া-যাওয়াবে শেকওয়া, বালে জিব্রিল ও কুল্লিয়াতে ইকবালসহ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন।
ইকবালের দর্শনের মূল কথা হলো ‘খুদী’ বা ঝবষভ অথবা ঊমড় তথা আত্মা। ইকবালের ‘খুদী’ অমর ও অবিনশ্বর। ইকবালের মতে, ‘খুদী’র বিলুপ্তি ইসলামের পরিপন্থি। ইকবাল বলেন, অতীন্দ্রিয় অনুুভূতির (কাশফ) মাধ্যমে আমরা খুদীকে সরাসরি জানতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিরাট কাজ ও গভীর অনুভূতির সময়ে খুদীর অস্থিত্ব প্রত্যক্ষ করা যায়। আমাদের সকল ক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই খুদীর প্রকাশ। আমাদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, বিচার, বিবেচনা সিদ্ধান্তের মধ্যে খুদীই ক্রিয়াশীল। খুদীকে কোন মাধ্যম ছাড়া আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করি। খুদী স্বীয় ক্রিয়াবলীর মাধ্যমে নিজের মূল্যায়ন করে। কাজেই খুদীর স্বরূপ হলো মূল্যায়নমূলক। অর্জন ছাড়া মূল্যায়ন নেই, আর লক্ষ্য ছাড়া অর্জন নেই। কাজেই খুদী বা আত্মা সবসময় কোন একটা দিকে অগ্রসর। খুদী ইচ্ছা বা আত্মা প্রেমের মাধ্যমে বলীয়ান হয়। প্রেম ইচ্ছাকে শক্তিদান ও খুদীকে সুরক্ষিত করে। খুদী কেবল স্বাধীন নয় বরং অবিনশ্বরও বটে। কিন্তু খুদীর এ অবিনশ্বরতা অর্জন স্বাপেক্ষ। নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ অমরতা অর্জন সম্ভব। ইকবাল বলেন, ‘অমরতা আমাদের অধিকার নয়; ব্যক্তিগত চেষ্টার দ্বারা একে অর্জন করতে হয়।’ যেমন তিনি বলেন, ‘মানুষ আল্লাহর খলীফা’। খুদীর পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই মানুষ ইনসানে কামেল বা পূর্ণ মানুষ হয়ে খেলাফতের এ অসীম গুরুত্ববহ দায়িত্ব পালন করতে পারে।
ইকবালের লিখনীতে আগাগোড়া পাঠক ও শ্রোতাকে লক্ষ্য অর্জনে সদা সচেষ্ট, পরিশ্রমী ও কর্মমুখর রাখার প্রেরণায় পরিপূর্ণ। তিনি মুসলমানদের কথায় পটু হবার চেয়ে কাজে পটু হতেই অধিক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তার ‘খুদী’ দর্শন তথা দুর্জয় মনোবলের দ্বারা আত্মশক্তি ও ব্যক্তিত্বকে বলীয়ান করার মধ্যদিয়ে তিনি মানুষকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মানুষকে এ দর্শনের মাধ্যমে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষ যেন নিজের সুপ্ত প্রতিভার ব্যাপারে সচেতন হয় এবং একে জাগ্রত করে আপন সকল সম্ভাবনাকে কাজে লাগায়। নিজের পরিচয় নিজের কাছে স্পষ্ট থাকার প্রতি তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে যেসব যোগ্যতা ও সম্ভাবনা রয়েছে, আল্লামা ইকবালের মতে সে সকল যোগ্যতা ও সম্ভাবনাকে নিজ নিজ চরিত্রে প্রোজ্জ্বল করে তুলতে হবে। নিজ ‘খুদী’ (আত্মা) ও ব্যক্তিত্বকে জ্ঞান, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এ পরিমাণ উন্নত করতে হবে যে, আল্লাহ যেন তার বান্দার যাবতীয় যোগ্যতা, গুণ-বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করেন, ‘বলো বান্দা তুমি কী পেলে খুশী হও?’ আল্লামা ইকবাল বলেন,
আমল সে যিন্দেগী বনতী হায় জান্নাত ভী জাহান্নামভী
ইয়েহ্ খাকী আপনি ফিৎরৎ মে
না নূরী হায়, না নারী।
এ মহান মনীষী ১৯৩৮ সালের এই দিনে মাওলায়ে কারীমের ডাকে সাড়া দেন।