ক্যারিয়ার ভাবনা ও সম্ভাবনা
শরিফুল ইসলাম রিয়াদ
ক্যারিয়ার (পধৎববৎ) শব্দটি শুনলেই অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় মনের অজান্তে। ¯^প্নের মাঝে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ধরনের সিংহাসনে বসতে কি যে মজা তা বলে বা লিখে বোঝানো সম্ভব না। মস্তিষ্কজাত অপার সম্ভাবনা কে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার সাথে সাথে মানবজাতিকে উপকৃত করাই ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্য। যেখানে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ নেই সেখানে ক্যারিয়রের কথা ভাববার অবকাশ নেই। উদাহরণ ¯^রূপ, একজন অশিক্ষিত কৃষক ও শিক্ষিত একজন কৃষিবিদ যখন কৃষিকে জীবিকা ও জীবনের অবল¤^ন মনে কওে তখন কৃষকের জন্য কৃষি পেশা হলেও কৃষিবিদের জন্য তা ক্যারিয়ার। অর্থাৎ ক্যারিয়ার অর্থ শুধু পেশা নয়; বরং পেশার অতিরিক্ত আরও কিছু। ব্যাক্তির সহজাত গুনাবলি, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, উচ্চাকাক্সখা, লালিত বিশ্বাস, অর্থ প্রাপ্তি, মানবিক দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্যারিয়ার এর সাথে অতোপ্রতোভাবে জড়িত। বর্তমান পেশাদারিত্বের সাথে বৈশ্বিক চেতনা সংযুক্ত হওয়ায় ক্যারিয়ার ভাবনায় এসেছে নানাবিধ পরিবর্তন।
ক্যারিয়ার (পধৎববৎ) শব্দের অর্থ দ্রুতগতি, বেগ, জীবনধারা ও অগ্রগতির জীবিকা অর্জনের উপায় বা ব্যক্তিকেই বুঝায়। পধসনৎরফমব ওহঃবৎহধঃরড়হধষ উরপঃরড়হধৎু ড়ভ ঊহমষরংয-এ ক্যারিয়ারের যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তা হলো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত এমন কর্ম যেখানে ব্যক্তির সমগ্র কর্মজীবনে গুণগত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত উত্তোরণের সমৃদ্বি আসে, দায়িত্বে ও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাপনে পর্যাপ্ত অর্থেরও নিশ্চয়তা থাকে।
কিন্তু এখানে একটি কথা বলে নেয়া ভাল। জীবন বলতে আমরা যদি শুধু পৃথিবীর জীবনকেই বুঝি, তাহলে ছোট বেলার মত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী বা প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত বিষয়কে “অরস রহ ষরভব” বানানো যাবে। কিন্তু জীবন যদি হয় আখেরাত কে নিয়েই তাও আবার চিরন্তন ও চিরস্থায়ী তবে আমাদেও “অরস রহ ষরভব” হওয়া প্র্রয়োজন আখেরাত কেন্দ্রিক। তবে, আখেরাতের সুখÑদুঃখ নির্ভর করে দুনিয়ার কর্মের উপর, তাহলো সফলতার জান্নাত অথবা ব্যর্থতার জাহান্নাম। মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আমরা পাই “আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে খলিফা বা খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন এবং এর সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই আমাদেও “অরস রহ ষরভব” হবে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তবে আধুনিক জাহিলিয়াতের মোকাবেলায় ডাক্তর, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যরিস্টার এবং আধুনিক ¯^াধীনতার রূপকার হওয়া হতে পারে আমাদের জীবনের ”ঝঁন-অরস” এই কথা বলা বাহুল্য যে আধুনিক জাহিলিয়াতের মোকাবিলায় ”ঝঁনঅরস” এর কোন বিকল্প নেই।
সুতরাং, সঠিক নিয়তের মাধ্যমে দুনিয়ার সফলতা বা ক্যারিয়ার হতে পারে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম ভিত্তি। অর্থাৎ আমাদের হতে হবে, আলী-আল-তবারী, আলরাজি, আলী ইবনে আল আব্বাস ও ইবনে সিনার মত চিকিৎসক।
আল কিন্দি, আবু-ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক এর মত দার্শনিক। আল বাত্তানি, আল-ফারাবী, আল-বেরুনী এবং ওমর আল খৈয়ামের মত শিক্ষাবিদ। মুজাদ্দিদে আলফেসানী, শাহ ওয়ালী উল্লাহ, শাহ আব্দুল আযিয ও সৈয়দ ফজলুল করিমের মত ধর্মতাত্বিক। আর এই প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই।
কারণ, শেক্সপিয়ারের কথাটি মূল্যবান, “ও ধিংঃব ঃরসব ধহফ হড়ি ঃরসব ধিংঃব সব” অর্থাৎ আমি সময় নষ্ট করেছি এখন সময় আমাকে নষ্ট করছে। এমনকি ভিকেন্স বলেছিলেন, বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে। তাছাড়া মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “সময়ের কসম! সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত”। অর্থাৎ সময় খুবই মূল্যবান। এছাড়াও আমাদেও ছোট বেলায় পড়া সেই সুন্দর কথাটি কখনও ভুলব না। “ঞরসব ধহফ ঃরসব ধিরঃব ভড়ৎ হড়হব” তবে ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট ও সুউচ্চ টার্গেট বা সাধনা মানুষের গতিকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। বস্তুত এর অভাবে আমরা নিজেকে সফল ব্যক্তির পর্যায়ে চিন্তা করতে ব্যর্থ হই। যে সময় পারস্য স¤্রাজ্যে ছিল বিশ্বব্যাপী এক অপরাজেয় শক্তি সে সময়ে হযরত মোহাম্মাদ স. মুসলিম কর্তৃক পারস্যেও পতনের ঘোষনা দিয়েছিলেন এবং তা কাফেরদের হাসির কারণ হয়েছে কিন্তু মুসলমানদের সুদৃঢ় টার্গেট এবং পরিশ্রমের ফলে পারস্যের পতন হয়েছে।
এক কাঠুরিয়ার ছেলে সুদৃঢ় ¯^প্ন দেখেছিল তাই পরবর্তী জীবনে সে হয়েছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাই ক্যারিয়ার অর্জনে একটি সুস্পষ্ট টার্গেট এবং সুনির্দিষ্ট টার্গেট নির্ধারণ অত্যাবশ্যক।
সিজার বলতেন, “অধিকাংশ মানুষ বড় হতে পারেনা, কারণ সে সাহস করে আকাশের মত সুউচ্চ টার্গেট করে সে দিকে তাকাতে পারেনা”। আর একটি কথা না বললেই নয়, তা হচ্ছে কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ। তাও মনে রাখা অত্যাবশ্যক প্রশিক্ষণে যার ঘাম ঝরে না যুদ্ধে তার রক্ত ঝরে। তাছাড়া আমরা সবাই জানি “ওহফঁংঃৎু রং ঃযব শবু ড়ভ ংঁপপবংং” প্ররিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। যে জাতি যত বেশি সৃজনশীল পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। তবে স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, পরিশ্রম যেন গাধার মত না হয়; বরং তা হবে সুনির্দিষ্ট টার্গেটে পৌঁছার জন্য সৃজনশীল পরিশ্রম। জাপান বিশ্বের এক ন¤^র শিল্প উন্নত দেশ সেই দেশে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারনে ১০ হাজার মানুষ প্রতি বছর মারা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে অলসতার কারণে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। জীবনে সুন্দর ক্যারিয়ারের জন্য চাই কঠিন পরিশ্রম। সুতরাং পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। রাসূল সা. ৫৫ বছর বয়সে রমজান মাসে প্রায় ৭০ মাইল হেঁটে বদও যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
বিজ্ঞানী টমাস এডিসন বলেছেন, আমি সমস্ত জীবনে একদিনও কাজ করিনি। অথচ তিনি প্রত্যহ ষোল থেকে আঠার ঘন্টা কাজ করতেন, যেহেতু গবেষণা ছিল তার কাছে খেলা বা তামাশার মত সুতারাং তিনি পরিশ্রান্ত হননি।
ছাত্র জীবন থেকে আপনাকে সুন্দর ক্যারিয়ারের ভাবনা ভাবতে হবে। পূর্বে উল্লেখ করেছি নিজের ভিতরের প্রতিভাকে আবিষ্কার করে সে অনুসারে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে জীবনের মধ্য মুহুর্তে পরাজিত সৈনিকের খাতায় নাম লেখানো ছাড়া উপায় থাকবে না।
যেমন : আব্রাহাম লিঙ্কন যদি আইনেস্টাইন হতে চাইতেন আবার আইনেস্টাইন যদি আব্রাহাম লিঙ্কন হতে চাইতেন তাহলে দু’জনই ব্যর্থ হতেন। তাই নিজের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করুন এবং সে অনুসারে ক্যারিয়ারের চিন্তা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নিচে একটি “ক্যারিয়ার ট্রি” দেখুন
এখন আপনার যে বিষয়টি করনীয়, আপনার ভেতরের যোগ্যতা আবিষ্কার করুন এবং সে অনুসারে চেষ্টা করুন। তবে অধিকাংশ মানুষ নিজের যোগ্যতা ও শক্তির উপর বিশ্বাস রাখতে সাহস পায় না বলেই ব্যর্থতার গ্লাণী নিয়ে পথ চলতে হয়। তবে সময়ের সঠিক ব্যবহারের সাথে ¯্রষ্টার উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যান।
- ছাত্র সমাচার : ডিসেম্বর’১৫ সংখ্যা