সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

গুলশান ও শোলাকিয়া হামলা

শেখ ফজলুল করীম মারুফ

বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্যোগময় সময় অতিক্রম করছে। আমাদের ইতিহাসে রাজনৈতিক রক্তপাত, ব্যক্তিগত খুনোখুনি, হত্যা এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নজীর থাকলেও সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড, আদর্শিক কারণে হত্যা এবং বিশেষ পদ্ধতিতে কুপিয়ে জবাই করে হত্যার দৃষ্টান্ত বিরল। অতি সাম্প্রতিককালে গুলশানে যে ধরনের জিম্মি কাণ্ড ঘটলো তা কেবল আমরা খবরেই দেখেছি এবং এরপরে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলা প্রচেষ্টা জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের শান্ত ও ধর্মপ্রাণ পরিচয়, দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর যোগ্যতা দক্ষতাকে এবং সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

বর্তমান হামলাসমূহের দৃষ্টান্ত আরো বিরল একারণে যে, এবারের হামলার সাথে জড়িত অপেক্ষাকৃত উচ্চবিত্ত সমাজের ছেলেরা জড়িত। তাদের দাবী নতুন কিছু না হলে; তারা যে ধরনের ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলছে তা এ ভূখণ্ডের মানুষের জন্য নতুন। একারণেই বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে।
গুলশান হামলার পরে এই হামলার নানাবিধ বিশ্লেষণ হচ্ছে। অনেকেই মতলবি ব্যাখ্যা দাঁড় করাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রত্যেকে তার রাজনৈতিক ফায়দা লোটার পাঁয়তারা করছে। প্রতিপক্ষকে দমন করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করছে। অনেকেই এর সাথে বৈশ্বিক উগ্রপন্থার যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন, আমরা এর নিরেপেক্ষ একটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

এই হামলা কি বৈশ্বিক উগ্রবাদের বাংলাদেশ অংশ?
গুলশান হামলার পরে এই প্রশ্নটা বারবার সামনে আসছে। এটা কি বৈশ্বিক উগ্রপন্থার সাথে সম্পর্কিত? বিশেষত হামলাটার ধরন, হত্যার ধরন এবং তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশ্নটা বেশ জোরালোভাবে উঠছে। এবং বৈশ্বিক উগ্রপন্থার সাথে এটাকে সম্পর্কিত করে দিলে সহজেই দায় এড়ানোর একটা পথ খুঁজে পাওয়া যায় বলে অনেকের কাছেই এই পন্থা খুব জনপ্রিয়। আসলে কি? এই হামলাকে বৈশ্বিক উগ্রবাদের বাংলাদেশ অংশ বলে প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে আমাদেরকে বাংলাদেশের অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বৈশ্বিক উগ্রপন্থার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে এর বিস্তারের কোন ধারণা পাওয়া যাবে না। কারণ-

১. বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ অতীত
যেসব দেশ বৈশ্বিক উগ্রবাদের শিকার হচ্ছে, তার প্রধানতম কারণ হলো, জাতিহিসেবে তাদের অতীত পাপের ইতিহাস। মানবতাকে রক্তাক্ত করার ইতিহাস। ফ্রান্স বর্তমানে বৈশ্বিক উগ্রবাদের অন্যতম ক্ষেত্র, কারণ ফ্রান্সের রয়েছে কট্টর ক্যাথলিক জাতি হিসেবে ক্রসেডে অংশগ্রহণ করার ইতিহাস এবং জেরুজালেম কেন্দ্রিক যুদ্ধে জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে নির্মম মানুষ হত্যার ইতিহাস। ফ্রান্সই একমাত্র ঔপনিবেশিক দেশ যারা উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার সকল মুসলিম দেশে দীর্ঘ সময়ে শোষণ করেছে। আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরোক্কো, মালি, সেনেগাল, বার্কিনা, ফুসো ও আইভরি কোস্টের ভাষা- সংস্কৃতি পর্যন্ত যারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারত, পাকিস্তান স্বাধীন হলেও ফ্রান্স এই সব দেশকে স্বাধীনতা দেয় নি। রক্তাক্ত সংগ্রাম করে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছে। এখনো এসব দেশে ফ্রান্স সামরিক হস্তক্ষেপ করে চলছে। এর অর্থ হলো ফ্রান্সের ইতিহাস মুসলিমদের হত্যাকরার ইতিহাস, মুসলমানদের স্বাধীনতা ও মানবতা খর্ব করার ইতিহাস।

এভাবে বিশ্বের যেখানেই এ ধরনের হামলা দেখা গিয়েছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের সবারই ইতিহাস একজন খুনির ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস এমন না। আমরা জাতি হিসেবে কখনোই ঔপনিবেশিক ছিলাম না। বরং উল্টো আমাদের ওপরেই ঔপনিবেশিক অত্যাচার হয়েছে। সেজন্যই বৈশ্বিক উগ্রবাদী হামলার সাথে বাংলাদেশে হামলার যোগসূত্র স্থাপন করার তত্ত¡¡ বাস্তব সম্মত না।

২. বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি
বৈশ্বিক উগ্রবাদ জনিত সহিংসতার আরেকটি কারণ হলো, মুসলিম দেশগুলোর প্রতি পশ্চিমা দেশের আগ্রাসী পররষ্ট্রনীতি, বিশেষেত ইরাক, সিরিয়া, আফগান, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, তিউনিসিয়া এবং ইয়ামেনসহ বহু মুসলিম রাষ্ট্রে পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রাসী সামরিক হামলার কারণে নৃশংস অবস্থা তৈরি হয়েছে। তার প্রতিক্রিয়ায় কোথাও কোথাও কিছু ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে এই কারণও সক্রিয় না। বাংলাদেশ কোনদিনও অন্যকোন রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করার নীতি গ্রহণ করে নাই। তাই বৈশ্বিক উগ্রবাদের শিকার হওয়ার কোন কারণ বাংলাদেশের নাই।

৩. পশ্চিমা স্বার্থের অনুপস্থিতি
এর বাহিরেও কিছু আফ্যিকান দেশে এই ধরনের হামলা হয়েছে। কিন্তু তা ছিলো পরিষ্কারভাবে পশ্চিমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বাংলাদেশে পশ্চিমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তেমন কোন স্থাপনা নাই। এই সব বিবেচনার বলা যায় যে, বৈশ্বিক উগ্রবাদের যে মোটিভ তা বাংলাদেশে ক্ষেত্রে নেই।

তাহলে কি কোন ষড়যন্ত্র?
ষড়যন্ত্র তত্ত¡ হচ্ছে দায় এড়ানোর সবচেয়ে সহজ পন্থা। কোন কিছু হলেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র বলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে প্রশান্তির ঢেঁকুর তোলা আমাদের রাজনীতিবিদদের অতিচর্চিত নোংরা একটা কাজ। গুলশান হামলাসহ অন্য সন্ত্রাসী হামলাগুলোকে ষড়যন্ত্র বলে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। ষড়যন্ত্র তত্ত¡ মেনে নিলেও প্রশ্ন আসবে কে ষড়যন্ত্র করলো? কে সে বা তারা যারা ষড়যন্ত্র করলো? ষড়যন্ত্রে তারা সফল হলো কি করে? এইসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে, কেন তারা সফল হলো আর আমরা ব্যর্থ হলাম তার কারণ খুঁজতে হবে? এবং দায় নিতে হবে। আমরা মনে করি, এখানে কোন ষড়যন্ত্র নাই। ষড়যন্ত্র থাকলেও তা আমাদের সৃষ্ট সুযোগের কারণেই হয়েছে। আজকের আলোচনায় আমরা এই সন্ত্রাসবাদের পিছনে আমাদের ও সরকারের কি দোষ আছে তা খুঁজে দেখার চেষ্টা করবো এবং বীরের মতো নিজের দায় স্বীকার করে ভুলগুলো সংশোধন করার আহবান জানাবো।

উগ্রবাদের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশেই তৈরি হয়েছে
সুদূর সিরিয়া থেকে কেউ এসে আমাদের মেধাবী তরুণদেরকে জাদুমন্ত্র বলে সন্ত্রাসী বানিয়ে ফেলেছে বলে বিশ্বাস করা বোকামী। সর্বোচ্চ হতে পারে যে, সিরিয়া অন্য মুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের ওপরে চলা নির্যাতন সহিংস পন্থায় প্রতিশোধ নেয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। কিন্তু উগ্রপন্থার দিকে যাবার প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে এদেশেই। ইসলামের প্রকৃত দর্শন, শিক্ষা, সমরনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা, পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামকে বাদ দেয়া, তরুণদেরকে ইসলামী আদর্শিক সংগঠনে যোগদানে বাধা প্রদান করা, ইসলামের অনুশাসন মানতে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা, পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ইসলামের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে আঘাত করা, কেউ সে সব আঘাতের প্রতিবাদ করলে তাকে জঙ্গী, মৌলবাদী ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করা, তার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে প্রশাসনের দমনপীড়ন চালানো, বৈশ্বিক মুসলিম অত্যাচারে মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের সংকোচ, মুসলিম নির্যাতনকারী দেশসমূহের সাথে সরকারের হৃদ্যতা, সরকারের কথাবার্তা কাজে কর্মে ইসলামের সাথেই বিমাতাসূলভ আচরণ, সেই আচরণের প্রতিবাদে বাধা, বাকস্বাধীনতা হরণ করা, চূড়াস্ত দলীয়করণ, সুশাসনের অভাব, গণতন্ত্র বিসর্জন, ভিন্নমত দমনে কট্টরতা, কর্মসংস্থানের অভাব, ভারতের সাথে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পশ্চিমা সংস্কৃতির ফলে পারিবারিক বিচ্ছন্নতা, বাঙ্গালী ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি উন্নাসিকতা ইত্যাদি কারণে এদেশেই উগ্রবাদের জন্ম হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

উগ্রবাদের অন্যতম কারণ হলো ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা
ইসলাম আসলে কি? ইসলামকি কোন রাজনৈতিক মতবাদ নাকি আচার সর্বস্ব কোন বিশ্বাস? বস্তু সম্পর্কে ইসলামেরর বিশ্বাস কি? ইসলামে রাষ্ট্র বা রাজনীতি সম্পর্কে নিদের্শনা কি? ইসলামী হুকুমত বলতে কি বুঝায়? ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠায় অনুসরণীয় পথ কোনটা? ইসলামে জিহাদের অর্থ কি? জিহাদের ক্ষেত্র কি? জীবন সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?

ইসলামের আধ্যাত্মবাদ, রাজনৈতিক দর্শন, সমাজ দর্শন, জীবন দর্শন সম্পর্কে আমাদের তরুণ সমাজ একেবারেই অজ্ঞ। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের কোন ব্যবস্থানাই। আগে সকালে মক্তব শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলো এখন তাও নাই। সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে একজন যে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করবে তেমন পরিবেশ নানা অপপ্রচারে নষ্ট করা হয়েছে। শুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান চর্চার উদ্যোগসমূহকে বিরল করে ফেলা হয়েছে। ফলে একজন তরুণ ইসলামে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থেকে যাচ্ছে, কিন্তু তার অবচেতন মন থেকে ইসলামের প্রতি একটি অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ অনুভব করে। তারুণ্যের এই আকর্ষণ সুপ্ত থাকলেও যখন তারা বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে মুসলমানদেরকে হত্যা করার দৃশ্য দেখছে তখন তার সেই সুপ্ত বোধ জাগ্রত হচ্ছে। অথচ সে ইসলামের প্রতিরোধ নীতি, সমরনীতি, ইসলাম হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথ পদ্ধতি জানে না। এরই সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্র। তারা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে তারুণ্যকে সন্ত্রাসবাদের প্রতি ধাবিত করছে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা (যা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সৃষ্ট) এর কারণেই সন্ত্রাসবাদের প্রসার ঘটেছে এদেশে।

প্রশ্ন আসবে তাহলে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কেন সন্ত্রাসবাদের প্রতি ধাবিত হচ্ছে?
আমাদের মাদরাসাসমূহ ইসলামী জ্ঞানের আঁকড়, ইসলামী জ্ঞানকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে আকাইদ বা বিশ্বাস সংক্রান্ত জ্ঞান ও ইবাদতের সংক্রান্ত জ্ঞানের চর্চা এখানে বেশ ভালো মতোই হয়। কিন্তু দু:খজনক বাস্তবতা হলো, ইসলামের অন্তর্নিহীত দর্শন, ইসলামী হুকুমতের স্বরূপ, হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথ ও পদ্ধতি, ইসলামের প্রতিরোধ নীতি, সমরনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে তেমন কোন আলোচনা হয় না। সন্ত্রাসবাদের যে হামলা হয় তা আকিদা বিশ্বাস আর ইবাদতের জ্ঞান না থাকার জন্য না বরং সমাজ, রাষ্ট্র ও খেলাফত সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবে। এই অভাব মাদরাসাসমূহেও বিরজামান।

প্রশ্ন হলো, মাদরাাসাসমূহে কেন এই জ্ঞানের চর্চার অভাব? এর অনেক কারণ, তবে অন্যতম কারণ হলো, সরকার ও সরকারের দলীয় লোকজনের বাধা, এই সব জ্ঞান চর্চা করতে গেলেই এলাকার নেতারা তেড়ে আসেন, “হুজুরদের আবার রাজনীতি কিসের?“ বলে।
সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণদের ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানের একটা উৎস হতে পারতো মসজিদসমূহ। নামাজের পরে আলোচনা সভা, জুমার নামাজের বয়ান তরুণকে সাহায্য করতে পারতো। কিন্তু এখানেও সমস্যা; এলাকার নেতারা “মসজিদে রাজনীতি নিষেধ“ ধরনের কথাবলে ইসলামী জ্ঞানের এই উৎসকেও বন্ধ করেছে।

ইসলামী আদর্শিক রাজনীতি বিকাশে বাধা
ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তরুণদের উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, আদর্শিক ইসলামী রাজনীতির বিকাশে বাধা প্রদান। বিশ্বব্যবস্থায় সমাজতন্ত্রের পরে পুঁজিবাদও এখন ব্যর্থতার মুখে। দারিদ্র, বেকারত্ব পরিবেশ আর যুদ্ধ ও শান্তি ইত্যাদি প্রশ্নে পুঁজিবাদের কাছে কোন সুষ্ঠু সমাধান নাই। সমাজবাদ ও পুঁজিবাদের এই ব্যর্থতার ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে সমাধানের নতুন পথ হিসেবে রাজনৈতিক ইসলামের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মানুষ পরিবর্তনের আশায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামকে দেখতে চায়। তাদের এই চাওয়ার শান্তিপূর্ণ উপস্থাপন হতে পারে আদর্শিক ইসলামী রাজনীতি বিকাশের মাধ্যমে কিন্তু পশ্চিমা রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়ে দেশীয় সরকারগুলো বারংবার আদর্শিক ইসলামী রাজনীতি বিকাশে বাধা দিয়েছে। ইসলামী রাজনীতিক দলের বিকাশে দৃশ্যমান বাধার পাশাপাশি পর্দার অন্তরালে নানা কলকাঠি নেড়ে এই রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সরকারগুলো। এবং মিডিয়াগুলো পরিকল্পিত উপক্ষো বা মিথ্যাচারের মাধ্যমে তথা কথিত সুশীল সমাজ অবিরাম মিথ্যা প্রচারনী চালিয়ে ইসলামী রাজনীতিকে শক্তিশালী কোন অবস্থানে যেতে দেয়নি। এক্ষেত্রে আদর্শিক ইসলামী রাজনীতিক দলসমূহের ব্যর্থতাও অনেকাংশে দায়ী। আদর্শ প্রসারে বাধাতো আসবেই কিন্তু ইসলামী দলগুলো তা অতিক্রম করতে পারে নাই। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে আজও এমন কোন আদর্শিক ইসলামী রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা পায় নাই যারা তারুণ্যকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ দেখাতে পারে। এরই ফলে ইসলাম প্রত্যাশী তারুণ্য বিকল্প পথ হিসেবে উগ্রপন্থাকে বেছে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে আজ মিশর ও আফগানের সমকালীন বাস্তবতা তাদেরকে উৎসাহিত করছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলেও পশ্চিমারা শাস্তিযোগ্য করে তা নাস্যাৎ’ করে দেয়।

ইসলামী অনুশাসন মানতে নিরুৎসাহিত করা
বাংলাদেশে কোন তরুণের পক্ষে ইসলামী অনুশাসন পালন করা ১০০ বার জীবন কোরবানী করার চেয়েও কঠিন। প্রথমত. মিডিয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতিক আগ্রসান চালিয়ে তারুণ্যকে ইসলাম বিমুখ করা হচ্ছে। সেই আগ্রাসন কাটিয়ে যারা অনুশাসন পালন করতে আসছে তারা সামাজে নানানভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা, রাস্তায় প্রশাসনের অযথা হয়রানী ও মিডিয়ায় তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন হচ্ছে। এরফলে দুই ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যারা এই সব বাধার কারণে ইসলামী অনুশাসন থেকে দূরে সরে গিয়ে উগ্রবাদী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা একসময় হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রতাবাদের নামে দিনে দিনে সামাজ বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তার থেকেই সন্ত্রাসবাদে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে যারা এতসব বাধা উপেক্ষা করে ইসলামী অনুশাসনে উৎসাহী হচ্ছে- তাদের কেউ কেউ মুসলিম দেশে এতোসব বাধায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। যার সদ্ববহার করে কেউ কেউ তাদেরকে সন্ত্রাসবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ইসলামের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে বারবার আঘাত করা এবং তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বাধা
ইসলামের প্রাণপুরুষ, সকল মুসলমানদের জীবনের চেয়ে বেশি প্রিয় রাসুল সা. এর প্রতি জঘন্য ভাষায় গালাগাল করা, তার পবিত্রত্মা স্ত্রীগণ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ লেখালেখি করা, কথায় কথায় ইসলামকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করা কারো কারো ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। ইসলামের বিধান হজ্জ, নামাজ, কোরবানী, আজান ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করা কারো কারো সৌখিনতায় পরিণত হয়েছে। ফেসবুক, ব্লগ, পত্রিকা ইত্যাদিতে ইসলাম বিরোধীরা প্রাকাশ্যেই এসব করে যাচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে ইসলাম বিরোধীরা মুক্তমনা, বিজ্ঞান মনস্ক বলে অভিহিত হচ্ছে। সুশীল সমাজের তকমা পাচ্ছে, ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে সরকারের আস্কারা পাচ্ছে এবং প্রশাসনের নিরাপত্তা পাচ্ছে। আর এর বিরোধীতা করতে গেলেই তার ওপরে জেল জুলুম নেমে আসছে, প্রশাসনের হয়রানীর শিকার হচ্ছে, সন্ত্রাসী মৌলবাদী তকমা খেতে হচ্ছে। নোংরা ও বিশ্রী ভাষায় আক্রান্ত হচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষীদের নোংরামীর প্রতিবাদে ফেসবুকে লিখলে আইডি ব্লক করা হয়, আইসিটি মামলা দেয়া হয়, ব্লগে প্রতিবাদ করলে গালাগালি শোনার পাশাপাশি ব্লগ বন্ধ হয়ে যায়। কোন সাহসী মিডিয়া এর প্রতিবাদ করলে তার লাইসেন্স বাতিল হয়, রাস্তায় নামলে লাশের মিছিলে শাপলা ট্রাজেডি হয়। এমন এক অসহনীয় পরিবেশে কেউ কেউ উগ্রপন্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বিশ্ব নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের সংকোচ ও নিপিড়নকারী দেশগুলোর সাথে হৃদ্যতা
চলতি শতাব্দিতে মুসলমানরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইরাক, আফগান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, বসনিয়া ইত্যাদি মুসলমান নির্যাতনে আরাকান উদহারণে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিমা দেশে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে বংলাদেশের কর্তব্য ছিলো মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানো, অত্যাচারী দেশগুলোকে কড়াভাষায় প্রতিবাদ করা। কিন্তু আমরা দেখেছি এর বিপরীত চিত্র। আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের যখন সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা পুড়িয়েÑ কুপিয়ে হত্যা করে দেশ ছাড়া করছে, তখন সরকার তাদেরকে এদেশে আশ্রয় দেয় নাই, বার্মাকে শক্ত কোন প্রতিবাদ জানায় নাই। কাশ্মীর ইস্যুতে বরাবরই নিশ্চুপ! উল্টো ভারতের সাথে হৃদ্যতা আর ভক্তি নিবেদন, আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো চিরন্তন সন্ত্রাসী দেশের আশীর্বাদ কামনা করে সরকার। অথচ ইরাক আফগান, সিরিয়া নিয়ে কোন কথা বলে না। সরকারের এই ভূমিকায় সাধারণ মুসলমানরা ব্যথিত হয়, এই ব্যথিত কোন হৃদয় হয়তো উগ্রবাদে ঝুঁকে পড়ছে।

সরকারের কথা-বার্তা-আচারে ইসলামের প্রতি বিমাতাসূলভ আচারণ
বিশ্বরাজনীতিতে নিপীড়কদের সাথে থাকার পাশাপাশি সরকারের কথা-বার্তা- আচরণেও ইসলামের প্রতি বিমাতা সুলভ মনোভাব স্পষ্ট। ইসলাম নিয়ে কটুক্তিকারীদেরকে সরকার পরিষ্কার প্রশ্রয় দিয়েছে, প্রতিবাদকারীদের প্রতি কঠোর হয়েছে, শিক্ষা আইনে ইসলামকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নারী নীতিমালায় কোরআনের বিরোধিতা করা হয়েছে, সরকারের মন্ত্রীদের কথায়, বক্তৃতায় ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে, ইসলাম সম্পর্কে বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে, ইসলামী বইগুলোকে জিহাদী বই বলে ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে, মসজিদ মাদরাসায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইসলাম অনুসরণ ও প্রচারকে বাধা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এসব কারণেও কেউ কেউ উগ্রবাদের পন্থা বেছে নিয়েছে।

নিপীড়নমূলক সরকার পরিচালনা
উগ্রবাদ সৃষ্টির পিছনে অন্যতম আরেকটি কারণ হলো, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ প্রচণ্ড কলুষিত ও শক্তি নির্ভর। এমন রাজনৈতিক পরিবেশ উগ্রপন্থার জন্ম হতে পারে বলে প্রায় সকল বিশেষজ্ঞ একমত। এখানে ভোটের অধিকার নাই প্রকাশ্যে ডাকাতি করে ভোট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। কোন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে চাইলে হীন থেকে হীনতর সব পদ্ধতি অবল¤^ন করে তা বানচাল করা হচ্ছে কোন প্রতিবাদ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। রাস্তায় প্রতিবাদী কর্মসূচি দিলেই গুলি করে হটিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন বুদ্ধিজীবী কথা বললেই তাকে হেস্তন্যস্ত করা হচ্ছে। ভিন্নমত দমনে মিথ্যাচার, প্রপাগান্ডা, আক্রমণ গুম-হত্যা, অপহরণ সব কিছুই করা হচ্ছে। সে এক ভয়াবহ অবস্থা, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ এত ভয়াবহ অবস্থা। আর কোনদিন দেখে নাই। এমনতর পরিবেশ উগ্রবাদের জন্য স্বর্গভূমি। এতে অবাক কি?

সুশাসনের অভাব
শাসনের এতো অবস্থা খারাপ যে, সুসাশনের কোন মাপকাঠিতেই শাসন ব্যবস্থাকে পরিমাপ করার জো নাই। দেশটা মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। যে যেভাবে পারছে লুটেপুটে খাচ্ছে। দুর্নীতি এখন প্রকাশ্য ব্যাপার। খুন করা সাহসিকতা। গুম করা প্রশাসনিক কৌশল। চাঁদাবাজি দলীয় কর্মসূচি। জনতার কাছে জবাবদিহিতার প্রধান অবলম্বন। নির্বাচন হয় না, হলে তা ডাকাতিতে পরিণত হয়। সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল। প্রশাসনের দলীয় করণ। সব মিলিয়ে দেশে সুশাসনের লেশ মাত্র নাই। এমনতর পরিবেশে উগ্রবাদ জন্ম নেয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

পশ্চিমা ও ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রভাব
পশ্চিমা ও ভারতীয় সংস্কৃতি তারুণ্যকে ভোগবাদে লিপ্ত করছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ শিক্ষা দিচ্ছে। সিনেমাতে হরদম সহিংসতা দেখাচ্ছে। ভিডিও গেমে খুন খারাপি করছে। পর্ণতে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। সমাজ পরিবারের প্রতি দায়বোধ হারাচ্ছে। উগ্রবাদের উত্থানের পিছনে এর ভূমিকা রয়েছে।

লক্ষণীয়
উগ্রবাদ একটি সামাজিক সমস্যা, কোন সোস্যাল ফেনোমেনার একক কোন কারণ থাকে না। সুনির্দিষ্ট ভাবে একথা বলা যায় না যে, এর কারণে এটা হয়েছে। বরং একই ঘটনার হাজারও কারণ ও ফলাফল থাকতে পারে। বিষয়টা এর বিপরীত। এ কোন কিছুর কার্যকরণ ও কার্যফল সুনিদিষ্ট।
উগ্রবাদ একটি স্যোসাল ফেনোমেনা। একেও নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়, আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের ছাত্র ও যুব সমাজের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই একদৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেছি। এগুলোই একমাত্র কারণ সেটা না বরং অন্য কারণগুলো মধ্যে এগুলো অন্যতম।

উগ্রবাদ নিরসনে আমাদের প্রস্তবনা
১. শিক্ষার সবস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
২. ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষায় শিক্ষার্থিদের জ্ঞানী করতে হবে।
৩. ইসলামী জ্ঞান চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
৪. আদর্শিক ইসলামী রাজনীতি বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।
৫. শিক্ষার্থীদেরকে আদর্শ ইসলামী ছাত্র সংগঠনে যোগদানে উৎসাহিত করতে হবে।
৬. ইসলামী অনুসাশনে পালনে সহায়তা করতে হবে।
৭. ইসলাম নিয়ে কটুক্তি বন্ধ করতে হবে।
৮. সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইসলামকে তার যথাযথ প্রাপ্ত মর্যাদা দিতে হবে।
৯. রাজনৈতিক পরিবেশ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। জনতার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রতিবাদ করার সুযোগ দিতে হবে।
১১. সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১১. খুন-গুম-হত্যা আর চাঁদাবাজির রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

সর্বপরী ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন মনে করে খেলাফত আলা মিনহাজিল নবুওয়াতই পারে সকল উগ্রবাদ দমন করে প্রকৃত সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করতে। ৭১-এর প্রত্যাশার সফল বাস্তবায়ন কেবল খেলাফত আলা মিনহাজিল নবুওয়াতের মাধ্যমেই।

লেখক
সেক্রেটারি জেনারেল
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন