সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলিম প্রতিভা

এহতেশামুল হক

বিশ্বের সর্বশেষ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. এর ওপর অবতীর্ণ সর্বশেষ ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন চির বিজ্ঞানময়। রাসূল সা. এর উপর অবতীর্ণ প্রথম সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াতের প্রথম শব্দটিই ছিল পড়ার তাগিদ দিয়ে “পড় তোমার প্রভুর নামে” এটি একটি বৈপ্লøবিক বাণী। মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই পড়তে হবে। অর্থাৎ তাকে শিক্ষিত হতে হবে। আল্লøাহ তায়ালা বলেন- আমি মানুষকে কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছি। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় মুসলিম নর-নারী সবাইকেই শিক্ষিত ও জ্ঞানী হতে হবে।

এছাড়া আল-কুরআনের ৫৫৫টি আয়াত সরাসরি বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। আর আভাস-ঈঙ্গিতে আল কুরআনের এক পঞ্চমাংশই বিজ্ঞানের প্রতি ইঙ্গিত। রাসূল সা. এর বহু হাদিস আছে যাতে তিনি সাহাবাদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন- “জ্ঞানীর এক ঘণ্টার সাধনা এক মাসের নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে উত্তম। জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশ পর্যন্ত ভ্রমণ কর। জ্ঞানের প্রতি আল-কুরআনের বাণী ও রাসূল সা. এর তাগিদ মুসলিম জনগণকে জ্ঞান আহরণে উৎসাহিত করেছে। কোন শিক্ষিত যুদ্ধবন্দী থাকলে রাসূল সা. তাকে দশজন মুসলিম শিশুকে শিক্ষা দানের বিনিময়ে মুক্তি দিতেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বে ইসলাম আসার একশত বছরের মধ্যে মুসলিম মনীষীরা ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, জ্যোর্তিবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, নৌ-বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র বিজ্ঞানের সব ক্ষেত্রে তারা পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তারা বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকেও জ্ঞান আহরণ করেন। সে সময় মুসলিম জাহান জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসরমান ও অপ্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন। তারা বিশ্বের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে থাকেন। মুসলিম শাসনামল বিজ্ঞান ও ব্যক্তিদের সকল প্রকার সহযোগিতা দিতেন। অথচ বর্তমানে তা শধুই কল্পনারবিষয় বৈই কিছুই নয়।

ইসলামের জ্ঞান বিজ্ঞানের মান মর্যদায় অনুপ্রাণিত হয়ে মধ্যযুগের মুসলমানরা জ্ঞানরূপ আলোকবর্তিকায় উদীপ্ত হয়ে আপন হৃদয়ে ধারণ করতে থাকনে। নিজেদের জ্ঞান সাধনার সাথে পৃথিবীর সব জ্ঞান ভাণ্ডারের আহরণ করে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন।

মুসলিম বিজ্ঞানীরা লোহাকে সোনা করার অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যদিও তা সম্ভব হয়নি তথাপি এ গবেষণার সূত্রপাত করে নব উপাদান আবিষ্কারের। খলিফা মনসূর, হারুন-অর রশিদ, মামুন প্রমুখের সময় জ্ঞান বিজ্ঞানের এহেন সাধনা চরমে পৌঁছেছিল। বাগদাদ, মিসর, স্পেন, পারস্য প্রভৃতি স্থান ছিল সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, রসায়ন বীজগণিত, জ্যামিতি, চিকিৎসাশাস্ত্র, তাফসির, হাদিস, ফিকাহ ইত্যাদি শিক্ষা লাভের প্রাণকেন্দ্র। সংক্ষেপে বলতে গেলে ইউরোপে যখন জ্ঞানের আলো পৌঁছেনি, তার অনেক আগেই আরববাসী জ্ঞান বিজ্ঞানে ছিলেন অনেক পারদর্শী। গ্রানাডার রাস্তায় যখন বাতি জ্বলত ইউরোপে তার দু’শ বছর পরে সে আলো পৌঁছে। রাসায়নিক শাস্ত্রকে পরিপূর্ণ বিজ্ঞান হিসেবে উন্নত করতে মুসলিম বিজ্ঞানী আবির ইবনে হাইয়ানের অভূতপূর্ব অবদান। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনায় সৃষ্টি হয় কিমিয়া বা ক্যামেস্ট্রির।

চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে ইবনে সিনার লিখিত গ্রন্থ “আল কানুন”কে চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইবেল বলা হয়। আল খারিজমির লিখিত “হিসাবুল জবর ওয়াল মুকাবল” গ্রন্থটি সর্বপ্রথম বীজগণিতের পাঠ্য-পুস্তকরূপে সমাদৃত হয়। পৃথিবী যে গোল তাও তিনি ১১৮৬ সালে তার রচিত “ক্ষুরাত আল আরদ” নামক গ্রন্থ দ্বারা প্রমাণ করে দেখান। এছাড়া ইবনে মুসা একাধারে গণিতবিদ, ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক ছিলেন। ৮৫০ সালে তিনিই প্রথম মানচিত্রের ব্যবহার সবাইকে শেখান।

আরব নাবিক আব্দুর রহমানের সহায়তায় কল¤^াস আমেরিকা আবিষ্কার করেন বলে জানা যায়। আরেক আরব নাবিকের দিকনির্দেশনায় ভাস্কোদাগামা উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ভারতবর্ষে আগমন করেছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আহাম্মদ ও ইবনে বতুতারা মুসলিম স্পেনে উদ্ভিদবিদ্যায় অসাধারণ পণ্ডিত্য দেখিয়েছেন। আল মহিরাত, আল জারকালী ও আল ফরাজী সে যুগের প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ ছিলেন। ১০৬৮ সালে স্পেনের সাঈদ আলসাকি একটি “আন্টোলের” তৈরি করেন। যার দ্বারা বছরে সূর্যের গতিপথ নির্দেশিত এবং ২৮টি তারকার অবস্থান নির্ধারণ করেন। বর্তমানে এটি অক্সফোর্ড ইউনিভাসির্টির মিউজিয়াম “হিস্ট্রি অব সায়েন্সে“ রক্ষিত আছে। খলিফা মামুন লোবের ছেলে কাতাকে আর্কিমিডিস, এ্যারিস্টটল, প্লেøটো প্রমুখ গ্রীক মনীষীদের গ্রন্থগুলো অনুবাদের পদে নিযুক্ত করেন।

গণিত, জ্যোতিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, ভূগোল, ইতিহাস নিয়ে গভীর সাধনা করেন আলবেরুনী। যে মুসলিমবিশ্ব মধ্যযুগে সমগ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশ্বকে জ্ঞানে আলো দান করেছেন। অদৃষ্টের পরিহাসে আজ সেই মুসলিম বিশ্ব অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তাদের না আছে লেখাপড়া, না আছে জ্ঞান সাধনা। বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। তাদের দারিদ্র, অশিক্ষা, অলসতায় ঘিরে আছে। ইউরোপ, স্পেনের গ্রানাডা, কর্ডোভা ও আন্দালুস থেকে জ্ঞান শিক্ষা ইউরোপকে আলোকিত করেছে।

আজকে আমরা তল্পিবাহক। আমাদের আল-কুরআন ও হাদিসের দিকে ফিরে যেতে হবে। জ্ঞান সাধনায় মনোনিবেশ করতে হবে। মুসলিম ছাত্র যুব সমাজকে জ্ঞান শিক্ষায় আলোকিত করতে হবে। এর জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম ও বর্তমান বিশ্বের জটিল রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠার সাধনা।

লেখক
কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন