তথ্য ও প্রযুক্তি আইন ’১৩
প্রতিরোধমূলক নয়; দমননীতি মূলক
মুহা. হাছিবুল ইসলাম
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ২০০৬ সালে তথ্য-প্রযুক্তি নামে একটি আইন পাশ করে। পরবর্তিতে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর এর সংশোধনী আইন পাশ করা হয়। এ আইনে মোট ৯০ টি ধারা রয়েছে। নি¤েœ এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। এই আইনে বলা হয়েছে আপাতত বলবত অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের বিধান কার্যকর করতে হবে।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিধান লক্সঘন, প্রতিবিধান ও জরিমানা আরোপ
নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা ৪৫
এই আইন বা প্রধিবিধানের কোন আইন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক আদেশ দ্বারা কোন কর্তৃপক্ষকে অথবা এর কোন কর্মচারিকে উল্লিখিত মতে কোন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বা কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বা নিয়ন্ত্রকের বিবেচনা মতে অন্যবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিতে পারবেন।
এই আইনের অধীনে প্রদত্ত জরিমানা পরিশোধ না করলে তা ঢ়ঁনষরপ চবসধহঃং জবপড়াবৎু অপঃ, ১৯১৩ (ইবহমধষ অপঃ ওওও ড়ভ ১৯১৩) এর অধীনে সরকারী দাবী গণ্যে আদায়যোগ্য হবে।
অপরাধসমূহ
কম্পিউটার, কম্পিউটার সিষ্টেম ইত্যাদির অনিষ্ট সাধন ও দণ্ড ৫৪ ধারায় কোন ব্যক্তি কম্পিউটার বা সিষ্টেম কম্পিউটারের মালিক বা জিম্মাদারের অনুমতি ব্যতিরেকে নি¤েœাক্ত কাজগুলো করলে-
ক) কোন গুরুত্বপূর্ন ফাইল বা ডকুমেন্টের তথ্য বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে উক্ত কম্পিউটারে প্রবেশ করা এবং অন্য কোন ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে সহায়তা করা।
খ) কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হতে কোন উপাত্ত ভাণ্ডার বা এর উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করা বা স্থানান্তরযোগ্য অথবা জমাকৃত তথ্য (জবসড়াধনষব ঝঃড়ৎধমব সবঃরঁস) উপাত্তসহ উক্ত কম্পিউটার সিস্টেমে সংগ্রহ করা।
গ) কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাইরাস বা সংক্রামক দূষক প্রবেশ করানো বা চেষ্টা করা এবং কোন প্রোগ্রামের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করা।
ঘ) এই আইনে প্রণীত বিধান সাপেক্ষে কোন বিধান লক্সখন করে কোন কম্পিউটার সিস্টেম বা নেটওয়ার্কে কোন ব্যক্তিকে অবৈধ প্রবেশের সহায়তা করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কোন প্রেরক বা গ্রাহকের অনুমতি ব্যাতিত কোন পন্য সেবা, বাজারজাত বা বিপননের উদ্দেশ্যে অযাচিত ইলেকট্রনিক্স হস্তক্ষেপ বা কারসাজি করে কোন ব্যক্তির সেবা গ্রহণ বাবদ ধার্য চার্জ অন্যের হিসেবে জমা করার চেষ্টা করা।
ঙ) কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধ ও তার দণ্ড
কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে কোন কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত সোর্স কোড গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করে বা অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে কোড প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার চেষ্টা এবং উক্ত সোর্স কোডটি যদি আপতঃবলবৎ অন্য কোন আইন দ্বারা সংরক্ষণযোগ্য বা রক্ষনাবেক্ষণযোগ্য হয় তাহলে তার কাজটি অপরাধযোগ্য বলে গণ্য হবে।
চ) কম্পিউটার সিস্টেমের হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ
৫৬ (১) এতে বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতির মর্মে জ্ঞাত হওয়া সত্তে¡ও এমন কোন কাজ করা যার ফলে কম্পিউটার রিসোর্সের কোন তথ্য বিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা এর উপযোগীতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে বা কোন সার্ভারে ঢুকে তার ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে তাহলে তা হ্যাকিং অপরাধ বলে গণ্য হবে।
ছ) ইলেকট্রনিক্স ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ
(১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক্স বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ থেকে উদ্ধৃত হতে পারে অথবা যার দ্বারা মানহানি, আইন-শৃক্সখলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরণের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান করা হয় তাহলে এটি একটি তথ্য-প্রযুক্তি অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বর্তমান “তথ্য-প্রযুক্তি আইন-২০১৩” তে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৮ নং ধারা অনুসারে ¯^াধীনাতারোধকল্পে বিধান জারি করা হয়েছে যা কিনা সরকারী দল ছাড়া বিরোধী দলীয় সকলকে ফাঁসানোর একটি প্রক্রিয়া আর সংশোধনী ২০১৩ সালের নতুন আইন করার পরই দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সহীহ দ্বীনি সংগঠন ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ জাতীয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ কে গ্রেফতার করে মিথ্যা অযুহাতে তাদেরকে মৃত্যুমুখে পতিত করার চরম নীল নকশা চালানো হয়েছিল এবং বর্তমানেও এই আইনের অধীনে বিরোধী দলের অনেক কে কারাভোগ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মীয় লোকদের কে বিভিন্নভাবে জঁঙ্গিবাদসহ সন্দেহমূলক গ্রেফতার ও নির্যাতন করে বাক ¯^াধীনতায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ¯^ার্থ ও স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার নতুন এক কৌশল অবল¤^ন করেছে যা আইন হিসাবে নয়; বরং দমনমূলক নীতির বহিঃপ্রকাশ। বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আমূল পরিবর্তন এসেছে তেমনি এর ক্ষতিকারক ব্যবহারের দলে অনেকের জীবন আবার দূর্বিসহও হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তিনির্ভর পেশার মাধ্যমে এখনো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর পর্যায়ে না পৌঁছলেও নব্বই দশকে শুরু হওয়া প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে আমাদের জাতীয় জীবনে। এ কারণেই বর্তমান সরকারের বিগত নির্বাচনের মূল শ্লোগান ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ায়র পথে আমরা কি পরিমান এগিয়েছি সেটা এখনো বিতর্কের বিষয়। এখানে মতের ভিন্নতা থাকাটা ¯^াভাবিক কিন্তু একথা মানতে হবে যে, দেশের শিক্ষিত যুব সমাজের একটি বৃহৎ অংশ কম্পিউটার মাধ্যমকে তাদের জীবনের সঙ্গী করে নিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবাহরের মাধ্যমে সমগ্র প্রথিবীতে গড়ে ওঠা তথ্য ভাণ্ডারের পাশাপাশি ভার্সুয়াল জগতে তৈরি হয়েছে নতুন ধরণের সাইবার ক্রাইম। আর্থিকভাবে উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে এই অপরাধ সংঘঠনের পরিমান যেমন বেশি তেমনি এর ধরণও দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলো হল শিশু পর্ণোগ্রাফি, ম্যালওয়ার বা স্পাই ওয়ারের মাধ্যমে কারো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা চুরিসহ অন্যান্য আর্থিক দূর্নীতি। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের পাশের রাষ্ট্র ভারত প্রযুক্তিতে উংকর্ষতা লাভের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে এর মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যে কঠোর ধারা সংযুক্ত করে তথ্য-প্রযুক্তি আইন পাশ হয়েছিল সে আইনে বিশেষ কিছু ধারা অতিমাত্রায় কঠোর হওয়ার কারণে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত শেষে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
আমাদের দেশে এরকম একটি আইন প্রনীত হয় ২০০৬ সালের শেষ ভাগে। কিন্তু আইন পাশ করার পর থেকে অত্র আইনের কোন প্রয়োগ কিংবা তেমন কোন আলোচনাও হয়নি। ১৯৭৪ সালের ঝঢ়বপরধষ চড়বিৎ অপঃ এর ১৬ ধারায় বলা হয়েছে কাউকে হেয় করে কোন রিপোর্ট প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের যে বিধান ছিল তা বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ সরকারের আমলে বাতিল হয়। কিন্তু ২০০৬ সালে এর চাইতে অনেক বেশি কঠোর আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ নয়; বরং বিরুদ্ধ মতের কন্ঠরোধ করার মানসে করা হয়েছে বললে ভুল হবে না। তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ আইনে ২০০৬ এর ৯০টি ধারার মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের যে অংশটির সবচে’ বেশি অসুবিধা ও প্রতিবাদী হওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু হয়নি; বরং লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকরা সোচ্চার হয়েছেন। ওই আইনের ৫৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি সাইবার ক্রাইম করে তাহলে দশ বছর জেল এবং ১ কোটি টাকা অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাব মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয় তাহলে এই কাজটি হবে সাইবার ক্রাইম। বিগত ২১ আগষ্ট‘১৩ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারীকৃত অধ্যাদেশ মূলে এই আইনের সংশোধনী আনা হয় যাতে এই ধারাটির পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি করে অনূর্ধ ৭ বছর এবং অনধিক ১৪ বছর করা হয়। মূল আইনের ৭৬ ধারায় সংশোধনী এনে উক্ত ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১ ধারায় বর্নিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য (ঈড়হমরুরনষব) অর্থাৎ এসব অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ কোন ধরণের পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে এবং অজামিনযোগ্য বলে গণ্য হবে এবং (খ) ৫৫, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ৬৫ অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য ঘড়হ-ঈড়হমরুরনষব ও জামিনযোগ্য। যার অর্থ দাঁড়ায় পুলিশ মেজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করেতে পারবে না। নতুন সংশোধনীতে এই আইনটি আমলযোগ্য করায় পুলিশের উপর আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পুলিশ চাইলেই যে কাউকে এই ধারার ক্ষমতাবলে গ্রেফতার করতে পারে। আমরা যদি ধারাটি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে, এখানে ওয়েবসাইটে বা ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমনকিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করার কথা বলা হয়েছে যা মিথ্যা, অশ্লীল বা মানহানিকর।
আমরা যদি একটু পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশে মোট জনংখ্যার একটি বিশেষ অংশ ছাড়া ইন্টারনেট, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার কিংবা বিভিন্ন ব্লগ ব্যবহার করার সংখ্যা খুবই নগন্য যে তারা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি করবে এবং আইন শৃক্সখলার অবনতি ঘটাবে। বিগত বছরে তাজরীন গার্মেন্টস মালিকের শাস্তিযোগ্য অবহেলার কারনে ১১২ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যাওয়ার পরও ৩০৪ (ক) ধারায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা যায়নি আইনি জটিলতার কারনে। অথচ ফেসবুক কিংবা ব্লগে কিছু একটা লিখলেই তা যদি সরকার কিংবা পুলিশের কাছে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হয়ে থাকে তাহলে মাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই ৭ অথবা ১৪ বছর জেল খাটানো যাবে। এই আইনে কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো একেবারেই সহজ। সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি না থাকার কারণে সাইবার অপরাধ কমবার পরিবর্তে বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যে কেউ ফেসবুকে অন্যের নামে একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করে ৫৭ ধারার অন্তুর্গত কোন বিষয় লিখে পোষ্ট করলেই ব্যাস। শত্রæকে ঘায়েল করার যেন অব্যর্থ অস্ত্র। আমরা যদি প্রশ্ন তুলি যে, পুলিশের উপর অপরাধ আমলে নেওয়া ও তদন্ত করার ক্ষমতা ন্যস্ত হওয়ার কারণে যিনি কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপ পরিদর্শক (সর্বক্ষেত্রে নয়) হয়েছেন তার বিদ্যা বুদ্ধির উপরে আমাদের মত প্রকাশের ¯^াধীনতাকে নির্ভর করতে হবে। অথচ এই আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং ধারার পরিপন্থী। উক্ত ধারায় সকল নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের ¯^াধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকের বাক ¯^াধীনতা ও সংবাদ পত্রের ¯^াধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে বিধায় পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একটি ন্যায্য বিষয়। তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০১৩ যে নতুন সংশোধনীর ফলে দালিলিক প্রমানসমূহের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই আইনের ৬৯ (৬) ধারা অনুযায়ী ট্রাইবুনালে পেশকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে বা নিজ উদ্দ্যেগে কোন পুলিশ কর্মকর্তা বা নিয়ন্ত্রকের নিকট থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে এই আইনের অধিনে সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলায় পুনঃতদন্ত এবং তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ করতে পারবে এটি ফৌজদারী আইনের সম্পূর্ন পরিপন্থী। কেননা ফৌজদারী কার্যবিধিতে অধিকতর তদন্তের বিধান থাকলেও পুনঃতদন্তের কোন বিধান নেই। সাইবার অপরাধ পুনঃতদন্ত হলে অন্যান্য অপরাধের পুনঃতদন্ত নয় কেন? এই বিধান সংযুক্ত করার ফলে বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাসযোগ্যতা পশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তি আইনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার কথা বলা হলেও এখনো পর্যন্ত দায়রা জজ আদালতে বর্ণিত আইনের বিধান মতে বিচার কাজ চলছে। কিন্তু যিনি বিচার পরিচালনা করছেন তাকে আলাদা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। যেহেতু আইনটি নতুন এর অস্পষ্টতা থাকাই ¯^াভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশে যে বয়সে কোন বিচারক জেলা জজ হন তারা সবাই বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেন এমন ভাববার কোন কারণ নেই, আবার দু একজন ব্যতিক্রম থাকতেও পারেন। এতো গেল কারাদণ্ডের কথা তার ওপর এক কোটি টাকা অর্থ দণ্ড বিচার হবে! এতো দেখছি মগের মল্লুক। বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ নং ধারা এতই ব্যর্থ যে এতে কারো নির্দোষ প্রমান হওয়ার সুযোগ নেই।
কেননা ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় যিনি অভিযোগ এনেছেন তাকেই অপরাধ প্রমান করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে তিনি নিরাপরাধ তা প্রমান করার বাধ্যবাধকতা নেই। মামলার অভিযোগের সাথে যে সকল বর্র্ণনায় অভিযোগ আনয়ন কিংবা দালিলিক প্রমানাদি উপস্থাপন করা হবে তা কিভাবে হবে তা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়নি। একদিকে বিচারকরা এ বিষয়ে বিশেষ কোন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি অপর দিকে আমাদের দেশের আইজীবীদের মধ্যে কতজন তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করেন? বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এ ব্যাপারে ভ‚মিকা নিতে পারে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করা যায়নি। এর ফলে দেখা যাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সে সুষ্ঠু বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবাধিকার পরিপšী’ এ ব্যবস্থাপনা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।
বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তি আইন মন্ত্রী সভায় অনুমোদনের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠে এবং সরকারবিরোধী ও ইসলামপন্থীদেও কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে মত প্রকাশের ¯^াধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে। তাই মানবাধিকার সংস্থাসহ অনেক পেশাজীবী সংগঠন এ আইনের তীব্র সমালোচনা করেছে এবং এ আইন কে বাক¯^াধীনতার পরিপন্থী বলে আখ্যা দিয়েছে। এ আইনে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। অনলাইনে অসত্য কিছু প্রকাশ করলে যদি ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা জরমিানা বিধান রাখা হয় আর অনুর্ধ ৭ বছরের দণ্ড হয় তাহলে খুনের শাস্তি কত বছর হতে পারে এমন প্রশ্ন আশাটাই ¯^াভাবিক। এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে ট্রাš^সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), ইনষ্টিটিউট অব ইনফরমেশন ট্রিক্স এ্যাণ্ড ডেভেলফমেন্ট (আইইডি), বাংলাদেশ লিগেল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), মানুষের জন্য ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্স (লিবিয়া), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ অন্যান্য সংগঠন। অন্যভাবে বলা যায় একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি অসম্ভব শুধু নয়; এ ধরণের আইনের অভাবে জাতীয় ¯^ার্থ ও নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে থাকবে। তাই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দূরে সরিয়ে জাতীয় ¯^ার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার বর্তমান আইন কে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নির্মোহভাবে সংশোধন করবে তা দেশবাসী প্রত্যাশা করে। সেক্ষেত্রে আইসিটি সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করে প্রাপ্ত পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করাই জাতীয় লক্ষ্য হওয়া উচিত। আইন কে যথাযথ কার্যকর করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে দক্ষ জনবল তৈরীতেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রমানিত হয়, বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন সংশোধনী ২০১৩ তে অনেক ত্রæটি-বিচ্ছুতি রয়েছে এবং আইনটি প্রকৃত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমরা বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারব, এ আইনটি অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি কর্র্তৃপক্ষের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যা জনগণের নিকট নির্যাতনমূলকভাবে আরোপ করা হয়েছে। অথচ একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর আইনের কোন বিকল্প নেই।
লেখক
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
- ছাত্র সমাচার : ডিসেম্বর’১৫ সংখ্যা