সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

রাসূলুল্লাহ সা. এর জিহাদ ও বিশ্বব্যাপী তার রাজনৈতিক প্রভাব

মাওলানা আবদুর রাজ্জাক

বদর যুদ্ধ পর্যালোচনা
ক. ঈমান ও তাওহীদের মূল ভিত্তি হলো মহান আল্লাহ তাআলাকে সকল ক্ষমতার উৎস ¯^ীকার করা এবং গায়রুল্লাহর ক্ষমতাকে অ¯^ীকার করা। আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যখন মুমিন হৃদয়ে সু প্রতিষ্ঠিত হবে তখন বান্দা সহায়-স¤^লহীন হওয়া সত্বেও আল্লাহর ক্ষমতা থেকে উপকার লাভ করতে সক্ষম হবে। ঈমানের এই স্তরে উন্নিত হবার পরই বান্দার জন্য আল্লাহর সাহায্য অবতীর্ণ হতে থাকে।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা সা. তো রাসূল হিসেবে আল্লাহর কুদরতের প্রতি তাঁর সে বিশ্বাস ছিল। হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. কেও তিনি এত দিন এই প্রশিক্ষণ দিয়ে ছিলেন। তাই তারা সেভাবে গড়ে উঠেছেন। সে দৃষ্টান্তও রেখেছেন। এ কারণে বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা সহায় স¤^লহীন তিনশ’ তের জন সাহাবীকে সাহায্য দান করেন। যার ফলে তাদের প্রতিপক্ষ এক সহা¯্রধিক সু সজ্জিত সৈন্য অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।

খ. মহান আল্লাহ তাআলার কুদরত থেকে সাহায্য লাভের জন্য তার ক্ষমতার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা যেমন অপরিহার্য তেমনি নিজেদেরকে তার বিধি-বিধান পালনে সমর্পিত করে তার সাহায্য প্রার্থণা ও এর জন্য রোনাজারিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লামা ইদরীস কান্দলবী রহ. তাবরানী, ইবনে জরীর ও সহীহ ইবনে খুযাইমা গ্রন্থের সূত্রে বর্ণনা করেন, হযরত আলী রা. বলেন, রাসূল সা. রাতভর নামায, দুআ ও আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটিতে রত থাকেন আর এ অবস্থাতেই সকাল হয়ে যায়। রাসূল সা. তার দুআতে বলেন, হে আল্লাহ! এ কাফের কুরাইশের দল অহংকার ও আত্ম গরীমা নিয়ে মুকাবেলা করতে এসেছে। তারা তোমার বিরোধিতা করে, তোমার রাসূলকে অ¯^ীকার করে। হে আল্লাহ! তুমি যে সাহায্য ও বিজয় দানের ওয়াদা প্রদান করেছ তা পূর্ণ কর, তাদেরকে এ সকালে ধ্বংস করে দাও। (সীরাত ইবনে হিসাম, ফাতহুল বারী)
যুদ্ধ যখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে তখনও রাসূল সা. ছাউনিতে ফিরে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং দু’রাকাত নামায আদায় করে দুআয় রত হয়ে গেলেন। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আবু বকর রা. বলেছেন, “আপনি আপনার রবের নিকট যে আবেদন জানিয়েছেন তা জতেষ্ট, নিশ্চয়ই তিনি আপনার সাথে যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করবেন।”

গ. যুদ্ধ-জিহাদে জয় লাভ করা মহান আল্লাহ তাআলার সাহায্য ব্যতিত কোনভাবেই সম্ভব নয়। বদর যুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিম বাহীনিকে ¯^ীয় কুদরত দ্বারা সাহায্য করেছেন। আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধে সাহায্য করার বর্ণনা সূরা আনফালের ১১ নং আয়াতে এভাবে দিয়েছেন যে, “এবং আকাশ থেকে তিনি তোমাদের জন্যে বারিবর্ষণ করেন তার দ্বারা তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য, তোমাদের থেকে শয়তানের কু মন্ত্রণা অপসারণের জন্য, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করার জন্য এবং তোমাদের দৃঢ়পদ রাখার জন্য।”
ফেরেশতা নাযিল করে সাহায্য করার বর্ণনা আল্লাহ তাআলা এভাবে করেছেন “সে সময়ের কথা ¯^রণ কর! যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থণা করেছিলে, তিনি তা কবুল করে বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাহায্য করবো এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা যারা একের পর এক নেমে আসবে। আল্লাহ এভাবে (একদল ফেরেশতা) পাঠিয়েছেন কেবল (তোমাদেরকে) শুভ সংবাদ দেয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে, যেন তোমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। আর সাহায্য তো একমাত্র আল্লাহর নিকট হতেই আসে। আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা আনফাল : ৯-১০)

ফেরেশতা অবতরণ প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা
আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সাহায্যে প্রথমে এক হাজার, এরপর তিন হাজার এবং শর্বশেষ পাঁচ হাজার ফেরেশতা নাযিল করেন। যেহেতু এ যুদ্ধে কাফের মুশরিকদের সহায়তা করতে শয়তান ¯^য়ং তার বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলো, তাই আল্লাহ তাআলাও হযরত জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীল আ. এর পরিচালনায় ফেরেশতাদের বহর নাযিল করেন। বায়হাকী কৃত দালায়িল এবং আবু নাআঈম কৃত দালায়িল গ্রন্থে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় শয়তান সুরাকাহ ইবনে মালেকের আকৃতি ধারণ করে ছিলো এবং তার বাহিনী বনু মুদলাজ গোত্রের আকৃতি নিয়ে ময়দানে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলো। (আল খাসায়েসুল কুবরা ১ম খন্ড, পৃ ২০৪)

আল্লামা সুহাইলী ও আল্লামা কুরতুবী রহ. লিখেছেন, এ কারণে ফেরেশতারাও মানুষের আকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করেন এবং লড়াই করেন। (আর রাউযুল উনুফ ২য়, পৃ ৮৮)
ফেরেশতাদের দ্বারা মুসলমানদের যে সব সহায়তা
প্রথমত
ফেরেশতাদের নাযিল হওয়াই সতন্ত্র একটি মঙ্গল ও কল্যাণ, রহমত ও বরকতের বিষয়।
দ্বিতীয়ত
মুসলমানদের আন্তরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং মানসিক মজবুতি অর্জন হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “সে সময়ের কথা ¯^রণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের প্রতি এ বানী নাযিল করেন, আমি তোমাদের সাথে রয়েছি। তোমরা মুমিনের অন্তরে দৃঢ়তা মজবুতি ডেলে দাও।”(সূরা আনফাল-১২)
তৃতীয়ত
আল্লাহ তাআলা কাফের মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের পক্ষাবল¤^ন করে ফেরেশতাদেরকে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করারও নির্দেশ প্রদান করেন।
চতুর্থত
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে কাফেরদের অন্তরে ভিতি ঢেলে দিয়েছেন। সূরা আলে ইমরানের ১৫১ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “অচিরেই আমি কাফেরদের অন্তরে ভিতি ঢেলে দেব।”
পঞ্চমত
মানুষের যুদ্ধ পক্রিয়া সম্পর্কে ফেরেশতাদের কোন জ্ঞান ছিলো না তাই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যুদ্ধের নিয়ম শিক্ষা দিয়ে বলেন, (হে ফেরেশতারা!) তোমরা তাদের ঘাড়ের ওপর মারো, তাদের প্রতিটি জোড়ায় আঘাত হানো।” (সূরা আনফাল-১২)

ঘ. কর্মীদের মাঝে বুলন্দ হিম্মত সৃষ্টি করা
বুখারী শরীফের বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সা. সূরা ক্বামারের ৪৫নং আয়াত পড়তে পড়তে ছাউনি থেকে বের হয়ে আসেন। যার অর্থÑ অচিরেই এ দল পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করবে।
ইবনে ইসহাকের বর্ণনায় রয়েছে, ছাউনিতে বসে দুআ করতে করতে নবীজী সা. ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। অল্প কিছুক্ষন পর তাঁর ঘুম দূর হলে তিনি হযরত আবু বকর রা. এর উদ্দেশ্যে বলেন, শুভ সংবাদ শোন হে আবু বকর! আল্লাহর সাহায্য এসে পড়েছে। এই যে জিবরাঈল আ. ঘোড়ার লাগাম দাঁত দিয়ে আটকে রেখেছেন তাই তাঁর দাঁতে ধুলা লেগে রয়েছে।(ফাতহুল বারী, ৭ম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা, উয়ুনুল আছর,১ম খন্ড, ১৪৫পৃষ্ঠা)

ঙ. হক ও বাতিলের মীমাংসা
আবু জাহল খোদার দরবারে এ মর্মে দুআ করল, হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে, যে অন্যায় অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে তাকে তুমি ধ্বংস করে দাও। এর বিপরীতে আমাদের মধ্যে যে তোমার অধিক প্রিয় এবং পছনন্দনীয় তাকে তুমি বিজয় দান কর। এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ নাযিল করেনÑ “তোমরা মীমাংসা চেয়েছিলে তোমাদের নিকট সে মীমাংসা এসে গেছে। তাই তোমরা যদি (যাবতীয় অন্যায় ও অসত্য) থেকে বিরত হও তবে তাই হবে তোমার জন্য মঙ্গলময়। আর যদি পুনরায় (অন্যায়-অনাচার) কর তবে আমিও আমার মীমাংসা পুনরায় উপস্থিত করব। তোমাদের দলে লোক সংখ্যা অধিক হলেও তা তোমাদের কোনই উপকারে আসবে না, আর আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সাথে রয়েছেন।”(সূরা আনফাল-১৯)

চ. জয় পরাজয় মহান আল্লাহর হাতে
রাসূলে আকরাম সা. হযরত জিবরাঈল আ. এর ইশারায় হাতে এক মুষ্টি কংকর নিয়ে মুশরিকদের প্রতি তা ছুঁড়ে মারলেন। সেই সাথে সাহাবায়ে কেরামকে নির্দেশ দেন, কাফেরদের উপর জোর আক্রমন চালাও। মুশরিক সেনাদলের এমন কোন শক্তি রইল না যার চোখে মুখে নাকে সে কংকর পড়েনি। আল্লাহই জানেন এ এক মুষ্টি কংকরে কি প্রভাব ছিলো । কংকর চোখে মুখে পড়তেই কাফের সেনাদল পালাতে শুরু করে। আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে নাযিল করেনÑ “তুমি যখন কংকর ছুড়ে দিলে তখন প্রকৃত পক্ষে তুমি তা ছুড়োনি, বরং তা ছুড়েছেন আল্লাহ তাআলা। (সূরা আনফাল-১৭)

অর্থাৎ, বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদিও নবীজী এক মুষ্টি কংকর ছুড়ে মেরেছেন, কিন্তু এতটুকু দূরে থাকার পরও কারো চোখে পড়া, কোন একজন নয় বরং এক সশস্ত্র সৈন্যের প্রত্যেকের চোখে তা পড়া নবী কারীম সা. এর পক্ষে মোটেই সম্ভবপর ছিলো না, বরং তা ছিলো নেহায়তই মহান রাব্বুল আলামীনের অসীম ক্ষমতার এক সামান্য প্রকাশ।
ছ. ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রশিক্ষণ

ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধের উদ্দেশ্য হলো ধন-সম্পদের চেয়ে অনেক উন্নত এবং সে উদ্দেশ্যকে মুসলমানদের হৃদয়-মনে বদ্ধমূল করে নেয়া অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো। এ দিক দিয়ে বদর যুদ্ধ ছিলো মুসলমানদের পক্ষে একটি পরীক্ষামুলক যুদ্ধ। মুসলমানদের হৃদয়-মনে ইসলামী যুদ্ধের নিয়ম-নীতি ও নৈতিক আদর্শ পুরোপূরি বদ্ধমূল হয়েছে, না অনৈসলামী যুদ্ধের ধ্যান-ধারণা তাদের হৃদয়ে এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছে, এই যুদ্ধ ছিলো তারই পরীক্ষা মাত্র।

ইসলামী আন্দোলনের ধারক ও বাহকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার এটাই ছিলো উপযুক্ত সময়। তাই সর্ব প্রথম তাদেরকে স্পষ্টভাবে বলা হলো যে, গনীমতের মাল প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের কোন পারিশ্রমিক নয়। এ হচ্ছে আপন পারিশ্রমিকের বাইরে মালিকের তরফ থেকে দেয়া একটি বাড়তি পুরস্কার বা অবদান বিশেষ। আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার যথার্থ বদলা তো তিনি আখেরাতেই দান করবেন। এখানে যা কিছু পাওয়া যায়, তা কারো ব্যক্তিগত ¯^ত্ত¡ নয়, তা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার একটি বাড়তি অবদান মাত্র। কাজেই এ অবদান সম্পর্কে কারো ¯^ত্ত¡াধিকার দাবির প্রশ্নই উঠে না। এর ¯^ত্ত¡াধিক্রা হচ্ছে আল্লাহ এবং তার রাসূলের। তারা যেভাবে চান, সেভাবেই এর বিলি-বন্টন করা হবে।

জ. আমির বা নেতার আনুগত্য
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় আমির বা নেতার আনুগত্য হচ্ছে দেহের ভেতর রূহের সমতুল্য। তাই নেতৃ-আদেশের পরিপূর্ণ ও নির্ভেজাল আনুগত্যের জন্যে মনকে প্রস্তুত করার নিমিত্তে বারবার মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো । বদর যুদ্ধের গনীমতের মাল সম্পর্কেও তাই, সর্বপ্রথম লোকদের কাছে পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের দাবী জানানো হলো এবং তাদেরকে বলে দেয়া হলো যে, এ সব কিছুই আল্লাহ এবং তার রাসূলের ¯^ত্ত¡। এ ব্যাপারে তারা যা ফয়সালা করেন তাতেই সবার রাজি থাকতে হবে।

ঝ. ইসলামী আন্দোলনরে কর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করা
সাধারণ আন্দোলনগুলোর প্রকৃতি এই যে, সেগুলো আপন কর্মী ও অনুবর্তীদের মনে উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্যে তাদের কৃতিত্বের কথা নানাভাবে উল্লেখ করে থাকে। এভাবে খ্যাতি-যশ লাভের আকাঙখাকে উচকিয়ে দিয়ে লোকদেরকে ত্যাগ ও তিতিক্ষার জন্যে উদ্ভুদ্ধ করা হয়। বস্তুত এ কারনেই বড় বড় যুদ্ধ বা বিজয় অভিজানের পর এ সব আন্দোলন তার আত্মোৎসর্গী কর্মীদের মধ্যে বড় বড় খেতাব, পদক, ইনাম ইত্যাদি বিতরণ এবং নানাভাবে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে এক দিকে তারা আপন কৃতিত্বের বদলা পেয়ে সন্তুষ লাভ করে এবং ভবিষ্যতে আরো অধিক ত্যাগ ¯^ীকারের জন্য উদ্ভুদ্ধ হয়। অন্য দিকে অপর লোকদের মনেও তাদেরই মত উন্নত মর্যাদা লাভের আকাক্সখা জাগ্রত হয় কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃতি এর সম্পূর্ণ বিপরিত। মাত্র তিনশ’ তের জন মুসলিম সৈন্য কর্তৃক এক সহা¯্রধিক কাফের সৈন্যকে পরাজিত করা এবং এক প্রকার বিনা সাজ-সরাঞ্জামে কয়েকগুণ বেশী প্রতিধন্ধি শক্তিকে নির্মূল করা সত্বেও তাদেরকে বলে দেয়া হলো তারা যেন এ ঘটনাকে নিজেদের বাহাদুরি বা কৃতিত্ব বলে মনে না করে। কারণ তাদের এ বিজয় শুধু আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহ মাত্র। কেবল তারই দয়া ও করুণার ফলে এত বড় শত্রæ বাহিনীকে তারা পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই তাদের কখনো আপন শক্তি সামর্থের উপর নির্ভর করা উচিৎ নয়। বরং সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং তারই করুণা ও অনুগ্রহের উপর নির্ভর করে ময়দানে অবতরণ করার ভেতরে নিহিত রয়েছে তাদের আসল শক্তি।

ঞ. চুড়ান্ত পরীক্ষা জিহাদ
ইসলামী আন্দোলনে জিহাদ হচ্ছে চুড়ান্ত পরীক্ষা, যার মাধ্যমে আন্দোলনের অনুবর্তীদের পূর্ণ যাচাই হয়ে যায়। যখন কুফর ও ইসলামের দ›দ্ব চুড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত হয় এবং মুমিনদের পক্ষে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ অব্যাহত রাখার জন্যে ময়দানে অবতরণ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। তখন সেখান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে নেমে ময়দান থেকে পলায়ন করার অর্থ এ ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না যে,
১. মুমিন যে উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করতে নেমেছে, তার চেয়ে তার নিজের প্রাণ অধিকতর প্রিয়।
২. জীবন ও মৃত্যু যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ এবং তার হুকুম না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু আসতেই পারে না আর হুকুম যখন এসে যায় তখন মৃত্যু এক মুহূর্তও বিল¤ি^ত হতে পারে নাÑ তার এ ঈমানই অত্যন্ত দুর্বল।
৩. তার হৃদয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আখেরাতের সাফল্য ছাড়াও অন্য কোন আকাক্সখা লালিত হচ্ছে এবং প্রকৃতপক্ষে সে খোদার দীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করতে পারেনি।

ইসলামী আন্দোলনের পথে প্রতিবন্ধক
যখন প্রার্থিব সম্পর্ক-স¤বন্ধের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সঙ্গত সীমা অতিক্রম করে যায় তখন আল্লাহর পথে অগ্রসর হতেও তার শৈথিল্য এসে যায়। ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হচ্ছে এই পথেরই প্রধান প্রতিবন্ধক। তাই এ উপলক্ষে আল্লাহ তাআলা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির সঠিক মর্যাদা সম্পর্কেও মুসলমানদেরকে অবহিত করলেন। তিনি বলেনÑ “জেনে রাখ তোমাদের ধন-সনম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তোমাদের পরীক্ষার উপকরণ মাত্র, আল্লাহর কাছে প্রতিফল দেবার জন্যে অনেক কিছুই রয়েছে।”(সূরা আনফাল-২৮)

বস্তুত, মুমিন তার ধন-সম্পদের সদ্ববহার করে কিনা এবং সম্পদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণ হেতু আল্লাহর পথে জীবন পণ করতে তার হৃদয়ে কিছু মাত্র সংকীর্ণতা আসে কিনা অথবা সম্পদের মোহে সত্যের জিহাদে সে শৈথিল্য দেখায় কিনা, ধন-সম্পদ দিয়ে আল্লাহ শুধু তা-ই পরীক্ষা করে থাকেন। অনুরূপভবে সন্তান-সন্ততি হচ্ছে মানুষের পরীক্ষার দ্বিতীয় পত্র। এ পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে হলে Ñ প্রথমত: সন্তান-সন্ততিকে আল্লাহর বন্দেগী এবং তার আনুগত্যের পথে নিয়েজিত করার পূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুমিনকে তাদের প্রতি সঠিক কর্তব্য পালন করতে হবে। দ্বিতীয়ত: মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ যে সাভাবিক মমতাবোধ জাগিয়ে দিয়েছেন, তার আধিক্য হেতু আল্লাহর পথে পা বাড়াতে গিয়ে যাতে বাঁধার সৃষ্টি না হয় তার প্রতিও লক্ষ রাখতে হবে। ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে এ মহা পরীক্ষার জন্যে প্রতিটি মুমিনের তৈরী থাকা উচিৎ।

অত্যবশ্যকীয় গুণ ধৈর্য
ধৈর্য যে কোন আন্দোলনেরই প্রাণবস্তু। দেহের জন্য আত্মা যতখানি প্রয়োজনীয়, ইসলামী আন্দোলনের জন্য এ গুণটি ততখানিই অত্যবশ্যকীয়। মক্কার মুসলমানরা যে দুরাবস্থার মধ্যে কালাতিপাত করেছিল সেখানেও এ গুণটি বেশি করে অর্জণ করার জন্যে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে শুধু এক তরফা জুলুম-পীড়ন সহ্য করা ছাড়া মুসলমানদের আর কিছুই করণীয় ছিলো না। কিন্তু এখন আন্দোলন দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করার দরুন খোদ মুসলমানদের দ্বারাই অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ হওয়ার আশংকা দেখা দিলো। কাজেই এ পরিবর্তিত অবস্থায়ও এ গুণটি বেশি পরিমানে অর্জণ করার জন্যে তাগিত দেয়া হলো বলা হলোÑ “হে ঈমানদারগণ! যখন কোন দলের সঙ্গে তোমাদের মুকাবিলা হয় তখন তোমরা সঠিক পথে থেকো এবং আল্লাহকে বেশি পরিমাণে ¯^রণ কর। আশা করা যায় তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ এবং তার রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরষ্পরে বিবাদ করো না। তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতার সৃষ্টি হবে এবং তোমাদের অবস্থার অবনতি ঘটবে। সবর বা ধৈয্যের সাথে কাজ কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্য অবল¤^নকারীদের সাথে রয়েছে।(সূরা আনফাল৪৫-৪৬)

এখানে ধৈর্যের তাৎপর্য হচ্ছে এই যে-
১. আপন প্রবৃত্তি ও ভাবাবেগকে সংযত রাখতে হবে।
২. তাড়াহুড়া ভয়-ভীতি ও উৎকন্ঠা থেকে মুক্ত হতে হবে।
৩. কোন প্রলোভন বা অসঙ্গত উৎসাহকে পশ্রয় দেয়া যাবে না।
৪. শান্ত মন ও সু চিন্তিত ফয়সালার ভিত্তিতে সকল কাজ সম্পাদন করতে হবে।
৫. বিপদ-মুসিবত সামনে এলে দৃঢ়পদে তার মুকাবিলা করতে হবে।
৬. উত্তেজনা ও ক্রোধের বশবর্থী হয়ে কোন অন্যায় কাজ করা যাবে না।
৭. বিপদ-মুসিবতের কারণে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে আতংক বা অস্থিরতার কারণে মনোবল হারানো যাবে না।
৮. লক্ষার্জনে আগ্রহাতিশয্যে কোন অসঙ্গত প্রন্থা অবল¤^ন করা যাবে না।
৯. পার্থিব ¯^ার্থ ও প্রবৃত্তির তাড়নায় নিজের কামণা-বাসনাকে আচ্ছন্ন করা এবং সে সবের মুকাবিলায় দৃর্বলতা পদর্শন করে কোন ¯^ার্থের হাতছানিতে আকৃষ্ট হওয়া যাবে না।

এখন এই পরিবর্তিত অবস্থায় মুমিনদের আপন ধৈর্যের পরীক্ষা অন্যভাবেও দেয়ার প্রয়োজন ছিলো।
বদর যুদ্ধের পর কুরআনে পাকে এ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে যে পর্যালোচনা করা হয় এ হচ্ছে তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। দুনিয়ার অন্যান্য আন্দোলনের তোলনায় ইসলামী আন্দোলন যে কতখানি উন্নত ও শ্রেষ্ট এবং অনুবর্তিদেরকে সে কী ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তা সহজে অনুমান করা চলে।

লেখক-
বিশিষ্ট আলেমে দীন, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

  • লেখাটি ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর দ্বিমাসিক মুখপাত্র ‘ছাত্র সমাচার’ আগস্ট-সেপ্টেম্বর’১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন