সূরা ফাতেহা’র ধারাবাহিক দারস (২)
-মুফতি আবদুর রহমান গিলমান
“সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য যিনি সমস্ত জাহানের প্রতিপালক।” (সূরা ফাতিহা : ০১)
ভূমিকা
সূরায়ে ফাতিহা কুরআনুল কারীমের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত পূর্নাঙ্গ সূরা। সূরায়ে ফাতিহার পূর্বে বিছিন্ন কিছু আয়ত অবতীর্ন হয়েছে, কিন্তু পূনাঙ্গ কোন সূরাহ অবতীর্ন হয় নি। সূরায়ে ফাতিহার মাহাত্ম, গুরুত্ব ফজীল অনেক। এর গুরুত্ব ও ফজীলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ¯^য়ং কুরআনের ভিন্ন নামে “সাব’য়ে মাদানী” তার আলোচনা এসেছে। সূরায়ে ফাতিহার প্রায় চল্লিশের অধীক নাম রয়েছে। ফাতিহার করে দার না,তরণের তারণ হলো-ফাতিহা অর্থ উম্মোচনকারী। যেহেতু সূরায়ে ফাতিহা কুরআনুল কারীমের শুরাতেই অবস্থিত এবং তার মাধ্যমেই কুরআনুল কারীমকে উম্মোচন করা হয়, তাই তাকে ফাতিহা বলে নামকরণ করা হয়েছে। তাকে কুরআনে মূলও বলা হয়েছে। তার কারনও আমরা গত সংখ্যা উল্লেখ করেছি যে, গোটা কুরআনুল কারীমের সংযোজন বা মূল বক্তব্য সূরায় ফাতিহার মাঝে নিহীত। তাই তাকে উম্মুল কিতাব বা কুরআনে মূল বলা হয়েছে।
আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
আয়াতের সরল অনুবাদ আমরা উপরে উল্লেখ করেছি। তাতে বলা হয়েছে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ’লার জন্য। অর্থাৎ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যেখানেই কারও কোন প্রসংশা হোকনা কেন, তার প্রকৃত হকদার বা অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা’আলা, শুধু পৃথিবীতে নয়; এর বাইরে কোন জগতেও যদি কোন প্রশংসা হয়, তা একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার জন্য। যেমন আমরা কারাও কোন ব্যক্তিগত কাজে সুন্তুষ্ঠ হয়ে তার প্রশংসা করি, তুমি অনেক ভাল করেছ। যদিও এখানে বাহ্যিক ভাবে প্রশংসাটা ঐ ব্যক্তির করা হলে, মূলত প্রশংসাটি হয়েছে আল্লাহ তা’আলার।
কারণ তাকে এমন সুন্দর কাজ করার যাবতীয় উপকরণ আল্লাহ তাআ’লাই দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলার দয়া ও অনুগ্রহেই সে উক্ত কাজটি সম্পদন করতে পেরেছে। যেমন, আমাদের দেশে বড় বড় সেতু, রাস্তা বা মিলফ্যাক্টরি তথা উন্নয়ন মূলক অনেক কাজ হয়, যেগুলো সাধারণত শ্রমিকদের শ্রমে তৈরি হয়। যখন আমরা এসকল কাজের প্রশংসা করি তখন বলি অমুক সরকার এই কাজটি করেছে। শ্রমিকের হাড়ভাঙ্গা প্ররিশ্রমে তৈরি হলেও এখন প্রশংসাটা সরকারই পায়। কারণ সরকারের দেয়া যাবতীয় উপকরণ, বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সূযোগ-সুবিদার কারনেই শ্রমিক তা নির্মান করেছে। এই কারণে প্রশংসার অধিকারী সরকার হয়েছে। এখানে সরকারের আমরা প্রশংসা করলাম। এই কারণে সরকার প্রশংসার অধিকারী হয়েছে। এখন যে সরকারের আমরা প্রশংসা করলাম এটিও মূলত আল্লাহ তা’আলার জন্য। কারণ সবার নিকট আশা করি স্পষ্ট এতো গেলো এ সকল কাজ, যা মানুষ করে থাকে।
আর মানুষ যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালার দয়া ও অনুগ্রহেই কাজ করে থাকে তাই এর প্রশংসার অধিকারী ও আল্লাহ, আর যে সকল কাজে মানুষের কোন হাত নেই, সরাসরি আল্লাহ তা’আলার কুদরতেই হয়ে থাকে, তার প্রশংসা অধিকারীতো শুধুই তিনি। যেমন, আলো, বাতাশ, পানি, বিভিন্ন ফল-ফলাদি উদ্ভিদের উৎপন্ন ইত্যাদি একমাত্র তার কুদরাতেই হয়ে থাকে। তাই এর প্রশংসা কেবলই আল্লাহ ত’আলার জন্য। সুতরাং ভাল ফসল উৎপাদন বা অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রকৃতি, দেব- দেবির গজে চড়ে আসা ইত্যাদির কোন সম্পর্ক নেই। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’লার জন্যই। আল্লাহ এমন এক সত্বাকে বলা হয়। যার অস্তিত্য অতিঅত্যাবশ্যক। যিনি সমস্ত পরিপূর্ন গুলোর অধিকারী। আল্লাহ শব্দটি মহান রাব্বুল আলামীনের ¯^ত্তাগত নাম। এছাড়াও তার অনেক গুনবাচক নাম রয়েছে। কেউ কেউ এর সংখ্যা ৪০০০ (চল্লিশ হাজার) বর্ননা করেছেন।
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই একত্ববাদী জনগোষ্ঠীর মাঝে বিশ্বপ্রতিপালকের এককসত্বা বোঝানোর জন্য আল্লাহ শব্দটির প্রচলন রয়েছে। প্রাচীন সিমেটিক ভাষাগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি শাখাতেই সামান্য পরিবর্তন ভেদে আল্লাহ শব্দটি এক, অদ্বিতীয়, অনাদী, অনন্ত উপাস্য সত্তার জন্য ব্যবহার হয়ে আছে। যেমন, প্রাচীন কালদানীয় ও সুরইয়ানী ভাষায় আল্লাহ শব্দটি আলাহিয়া, প্রাচীন হিব্রæ ভাষার উলূম এবং আরবী-ভাষায় ইলাহরূপে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিবর্তিত আরবী ভাষায় ইলাহ শব্দের সাথে আরবী আল অব্যায় যুক্ত হয়ে আল ইলাহ বা আল্লাহ শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে। হুজুর সাঃ এর আগমনের পূর্বেও আরবদের মাঝে আল্লাহ শব্দটি মহান পরত্তার দেগারের একক শব্দরূপে ব্যবহৃত হতো। আরবের ছাফা পর্বতের অনেক শিলালিপিতে আরবি আল্লাহ শব্দটি বহুপূর্ব থেকেই লেখা ছিলো এবং এখনও আছে। এশব্দটির কোন স্ত্রীলিঙ্গ নেই। আল্লাহ শব্দটিকে কোনভাবে বিকৃত ঘটানোও সম্ভব নয়, কারণ আরবী ভাষার এশব্দটি লিখতে যে কয়টি অক্ষরের প্রয়োজন এবং যেকোন একটি অক্ষর বাদ দিয়ে দিলেও তা অবিকৃত থাকে এবং সঠিক অর্থ প্রকাশ করে।