সৌদি আরব
জি.এম. রুহুল আমীন
ভৌগলিক অবস্থা
ভূ সীমারেখা
সৌদি আরব এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম পূর্বে অবস্থিত। এর পূর্বে রয়েছে, কাতার, বাহরাইন, আরব সাগর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত, পশ্চিমে লোহিত সাগর, উত্তরে জর্ডান, ইরাক এবং কুয়েত আর দক্ষিণে ইয়েমেন ও ওমান।
ভূমিরূপ
প্রধানত ৪ প্রকার
১. হিজাজ ও আসীরের ভূমি
২. নজদ এর উঁচুভূমি
৩. বালূময় মরুভূমি
৪. পূর্বাঞ্চলীয় উপকুলীয় সমতলভূমি
ভৌগলিক বিভাজন
তবে কেউ কেউ সৌদি আরবের ভূখণ্ডকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন।
১. উত্তর আরব
এর অধিকাংশ অঞ্চলেই মরুভূমি, এখন কিছু কিছু জায়গায় বসতি স্থাপিত হয়েছে।
২. মধ্য আরব
মক্কা, মদীনা ও তায়েফ মধ্য আরবে অবস্থিত। হিজাজ ও তায়েফে বিভিন্ন কৃষি কাজের জন্য উপযোগী ভূমি বিদ্যমান রয়েছে।
৩. দক্ষিন আরব
এ অঞ্চল কৃষি কাজের জন্য খুবই উপযোগী এখানে অনেক পূর্বে থেকেই বাণিজ্যর জন্য প্রশিদ্ধ, এতে রয়েছে অনেক ঘনবসতি। এটি মূলত, ওমান, ইয়ামেন ও হাযরা মাউত নিয়ে গঠিত।
ভূ-প্রকৃতি
সৌদি আরবের ভূ-প্রকৃতি খুবই বৈচিত্রময়, এখানে রয়েছে উর্বর সমভূমি, প্রস্তরময় মরুভূমি সুবিশাল বালূময় মরুভূমি উপত্যকা এবং উচু উচু পাহাড়-পর্বত।
মরুভূমি প্রকৃতি
সৌদি আরবের মরুভূমি তিনটি ভাগে বিভক্ত।
(১) আননাফুদ
প্রায় সমগ্র উত্তর আরব জুড়ে এ মরুভূমি অঞ্চল অবিস্থত। বেশিরভাগ সময়ই এ অঞ্চল উষ্ণ থাকে তবে কোন কোন শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। কিছু কিছু জায়গায় ঘাস জন্মে এবং বেদুইনরা এতে গবাদী পশু চরায়।
(২) আদ দাহনা
এটি প্রায় ৬ শত মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাত হয়। এটি শূন্য অঞ্চল বলে পূর্বে আখ্যায়িত ছিল। এর উপর দিয়ে বিমান চলাচলের সাহস পেত না।
(৩) আল হাররাহ
এটি মূলত অনুর্বর বা অনুৎপাদনশীল এলাকা বলে পরিচিতি।
আবহাওয়া
সৌদি আরবের আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ থাকে। সেখানে আবহাওয়া তারতম্য ১২-৫৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করে। ডিসে¤^র থেকে ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত শীতকাল জেদ্দার গড়মাত্রা ২৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস, রিয়াদে ১৪ ডিগ্রী এবং দাম্মামে ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল কখনো কখনো ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
বৃষ্টিপাত
সৌদি আরবে বৃষ্টিপাত খুবই সামান্য হয়। শুধুমাত্র দ্বীপাঞ্চলে মাঝে মাঝে ১৫ ইঞ্চির বেশি বৃষ্টিপাত হয়। রিয়াদে ৩ ইঞ্চি, জেদ্দায় ২.৫ ইঞ্চি বেশি, দাম্মামে ৩ ইঞ্চি হল গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান।
সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সীমারেখা
ইরাকের সাথে ৮১৪ কি. মি., জর্ডান ৭৪৪ কি. মি., কুয়েত ২২ কি. মি., ওমান ৬৭৬ কি. মি., কাতার ৬০ কি. মি., সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৫৭ কি. মি. এবং ইয়ামানের সাথে ১৪৫৮ কি. মি. সীমা রয়েছে।
প্রশাসনিক বিভাগ
বিশাল ভূখন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুরো দেশকে ১৩ টি প্রদেশে বা বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে রয়েছে ১১৮ টি জেলা।
বিভাগগুলো হল-
১.মক্কা
২. মদীনা
৩. তাবুক
৪. রিয়াদ
৫. বাহা
৬. জাওফ
৭. হায়েল
৮. নজরান
৯. জিযান
১০. শারকিয়া
১১. শামালিয়া
১২. কাসিম
১৩. আসীর।
অর্থনৈতিক অবস্থা
জাতীয় আয়
সৌদি আরবের জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ১৩.৭% আর মাথাপিছু আয় প্রায় ২৫৪৬৬ মার্কিন ডলার। প্রতি বছর প্রায় ১১০.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট পেশ করা হয়। জিডিপাতে কৃষির অবদান ৪.২%, শিল্পে ৬৭.২% এবং অন্যান্য খাতে ২৮.৬ ভাগ।
শিক্ষা ব্যয়
সৌদি আরবে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বেচ্চ স্তর পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাজেটের প্রায় ২৫% এর বেশি শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ দেয়া হয়, বর্তমানে এতে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৫ টি কলেজ এবং প্রায় ২৩০০০ স্কুল রয়েছে। এতে প্রায় ৪৫ লক্ষ ছাত্র/ছাত্রী এবং ১ লক্ষ ৪৫ হাজার শিক্ষক রয়েছে।
¯^াস্থ্যখাত
সৌদি আরবের মাথাপিছু ¯^াস্থ্যখাতে ব্যয় সবচেয়ে বেশি। সেদেশে বসবাসরাত বিদেশী নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে ¯^াস্থ্য সেবা রয়েছে। সে দেশের প্রায় ৩১২ টি হাসপাতাল, ৫৪০০০সিট, ৫০০০০ চিকিৎসক এবং ৩৫৩০ টি প্রাথমিক ¯^াস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
শিল্প
শিল্পখাতে উন্নয়নের লক্ষে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন রিয়াল ব্যয়ে সেদেশে প্রায় ৪০০০ টি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে, যাতে প্রায় ৩৭০০০০ শ্রমিক কর্মরত নিয়োজিত আছে।
কৃষি কাজ
চাষাব্যবস্থার জন্য প্রায় ৪৫ লক্ষ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। চাষাবাদ করা হয় প্রায় ২৯ লক্ষ হেক্টর। এছাড়া চারণভূমি রয়েছে ৪ কোটি ৮০ লক্ষ হেক্টর।
ফসল
প্রধান ফসল খেজুর। প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ টন খেজুর উৎপাদিত হয়। এছাড়া গম, আলু, ফল-ফলাদি ও বিভিন্ন শষ্যাদি উৎপাদিত হয়।
খনিজ সম্পদ
সৌদি আরব খনিজ সম্পদে ভরপুর। প্রায় ২৬১ বিলিয়ন তেল মজুদ রয়েছে। যা বিশ্বের মোট তেল মজুদের ১.৪ অংশ। বাৎসরিক তেলের উৎপাদন প্রায় ৯.০২১ মিলিয়ন ব্যারেল। এর মধ্যে সৌদি ব্যবহার করে ১.৫৫ মিলিয়ন ব্যারেল আর ৭.৯২ মিলিয়ন রপ্তানী করে। আর গ্যাস মজুদ রয়েছে প্রায় ১৮৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। ব্যৎসরিক গ্যাস উৎপাদন প্রায় ৫৬.৪ বিলিয়ন কিউসেক মিটার। এছাড়া সেদেশে শিষা, দস্তা, সোনা, নিকেল, টিন, লোহা, তামা, কসফেট, পটাশ, ইফরিনিয়ান, গ্রনাইট ও মার্বেলের মত গুরুত্বপূর্ন জিনিস রয়েছে।
পর্যটন শিল্প
পর্যটন শিল্প সৌদি আরবের অন্যতম আয়ের উৎস। পর্যটন অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে তায়েফ, আল শিফা, আল হাদা, আল বাহা, আবহা, আল নামাছ, আল থাহসা এছাড়াও পূবাঞ্চলে ঐধষভ গড়ড়হ ইবধপয এবং জেদ্দায় পূবাল প্রাচীর ও দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত।
ইসলামের নিদর্শনাবলী
সৌদি আরব ইসলামের নিদর্শনাবলীতে ভরপুর। এতে রয়েছে মক্কা, মদীনা, তায়েফ তাবুকসহ গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল যার সাথে মহানবী (স.) এর আনীত ধর্মের হাজারও স্মৃতি বিজাড়িত ইতিহাস জড়িত।
রাজনৈতিক অবস্থা
প্রাচীন জনপদ
সৌদি আরব পৃথিবীর প্রাচীন জনপদ। আল্লাহ তা‘আলা মক্কায় প্রাচীনতম গৃহের বর্ণনা দিয়েছেন। এ সৌদি আরবেই আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) আরাফার ময়দানে প্রথম মিলিত হন। পরবর্তীতে ইবরাহীম (আ.) মহান প্রভুর নির্দেশে তার বিবি হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কাবার পাশেই রেখে যান এবং কাবা ঘরের পুনঃনির্মান করেন। তাদের স্মৃতি বিজড়িত স্থানই হল আজকের জমজম ক‚প, সাফা-মারওয়া পাহাড়।
আরব দখলের প্রচেষ্টা
২৪ খ্রিস্টাব্দে রোমানগণ দক্ষিন আরবের কিছু এলাকা দখল করতে ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ শতকে আবিসিনিয়ার শাসাক এ অঞ্চল দখল করে। পরবর্তীতে রাসূল (সা.) এর জুন্মের কিছু দিন পূর্বে ৫৭০/৭১ খ্রিস্টাব্দে বাদশা আবরাহা কাবাঘর ধ্বংসের চেষ্টা করলে সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়। যা সূরা ফীল এ বনির্ত হয়েছে।
রাসূল (সা.) এর আরব শাসন
রাসূল (সা. ৬১০ খ্রিস্টাব্দে নবুওত প্রাপ্তির পর শেষ নবী ও রাসূল হিসেবে দীনের প্রচার কাজ শুরু করেন এবং ৬২২ খ্রিস্টব্দে মদীনাকে কেন্দ্র করে আরব রাজ প্রতিষ্ঠা করে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন কার্য পরিচালনা করেন। তার ওফাতের পর চার খলিফার নেতৃত্বে ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও মিশরসহ প্রায় অর্ধ জাহান মদীনা কেন্দ্রিক শাসন কার্য পরিচালিত হয়।
উমাইয়া ও আব্বাসীয়দের শাসন
হযরত আলী (রা.) ইন্তিকালের পর উমাইয়া রাজ বংশ শাসনভার গ্রহণ করে। তবে ৭৫০ খ্রিস্টব্দে আব্বাসীয়রা শাসনকার্য গ্রহন করে এবং বাগদাদকে কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত করে। এভাবে তারা ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্বাসীয় শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
মামলুকদের শাসন
হালাকুখানের নেতৃত্বে বাগদাদ ধ্বংসের পর সৌদি আরবে মিসর ভিত্তিক মাখলুকদের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। তারা ১২৫৮-১৫৬১ পর্যন্ত শাসন পরিচালনা করেন।
অটোমানদের শাসন
১৫৬১ সালে তুর্কি সুলতান সেলিম মিসর দখল করে নিলে মাখলুকদেও পতন ঘটে এবং তাদের ক্ষমতা হাত ছাড়া হওয়ায় এদেশে অটোমনেদের শাসন শুরু হয়।
সাউদ বংশের শাসন
বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আস-সাউদ বংশের পূর্ব পুরুষগন উপকুলবর্তী হাসা অঞ্চলে ব্যাবসা শুরু করেন। ১৭২০ সালে সাউদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মাকরান দারাউয়ার ক্ষুদ্র অঞ্চলের আমীরাত লাভ করেন। তার নামেই এবংশের নাম আস সাউদ আথ্যায়িত হয়। নিম্নে ধারাবহিক ভাবে সাউদ বংশের শাসনকার্য তুলে ধরা হল।
মুহাম্মদ ইবনে সউদ
১৭২৫ সালে তার পিতা সউদ ইবনে মুহাম্মাদ ইন্তেকাল করলে তিনি ক্ষমতায় আরোহন করেন। তবে তার আসলেই সৌদি আরবের শাসন কার্য ও এলাকা বিস্তৃতি লাভ করে। সৌদিতে পীরপূজা, কবরপূজা, সহ বিভিন্ন বিদআত ব্যাপক থাকার লাভ করলে নজদেও বিশিষ্ট ব্যক্তি, মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল ওয়াহাব (১৭০৩-৯২) জীর্ব বিরোধিতা শুরু করেন। তখন মুহাম্মদ ইবনে সউদ তার মতবাদ গ্রহন করেন এর ব্যাপক প্রচার শুরু করেন এমনকি তিনি কন্যাকে বিবাহ করেন। পওে মুহাম্মদ ইবনে আল ওয়াহাব ১৭৪৪ সালে থেকে তাদের মতবাদ কে বহু দুর ছড়িয়ে দিয়ে তারা শাসন পরিচালনা করেন। তিনি ১৭৬৫ সালে পর্যন্ত শাসন করেন।
আব্দুল আজিজ ইবনে মুহাম্মদ (প্রথম)
(১৭৬৫-১৮০৩) মৃত্যুর পার তার পুত্র আব্দুল আজিজ ক্ষমতায় আসেন তার প্রচেষ্টার ১৭৮৮ সালে আরব সাম্রজ্য কুয়েত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তবে শীথাদের সাথে বিরোধেব জের ধওে ৩ নভে¤^র ১৮০৩ সালে মসজিদ নামাযরত অবস্থায় শীথা কর্তৃক নিহত হন।
সাউদ ইবনে আব্দুল আজিজ (দ্বিতীয় ইবনে সউদ)
(১৮০৩-১৮১৪) সালে তার পিতা শীথা কর্তৃক নিহত হলে তিনি রাজ্য ক্ষমতায় আহরন করেন। তবে ১৮২২ সালে বদও প্রান্তরে সম্মিলিত তৃর্কী বাহিনীর নিকট সাউদ ইবনে আব্দুল আজিজ পরাজিত হন মক্কা ও তায়েফ তুর্কীদের অধীনে চলে যায়। ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাউদ (১৮১৪-১৮১৮)
তার পিতা সাউদ ইবনে আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করলে তিনি রাজ্য শাসন আধিষ্ঠিত হন। কিন্তু পূর্ব বিরোধিতার জের ধরে তার সাথে ও তুর্কীদের বিরোধ দেখা দেয়া। ফলে তুর্কীরা ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে থেকে দীর্ঘ প্রায় ২ বছরের বিরামহীন যুদ্ধে আব্দুল্লাহ পরাজিত হন এবং বন্দীত্ব জীবন গ্রহন করেন পরে ১৮১৮ সালের ২৩ সেপ্টে¤^ও তাকে ইস্তা¤^ল এ হত্যা করা হয়।
মুশারী ইবনে সাউদ (১৮১৯-২০)
আব্দুল্লাহ ইবনে সাউদের হত্যার পর তার ভাই মুশারি ইবনে সাউদ তার নিজভূমি দায়াউয়ারে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮২০ সালে পর্যন্ত ক্ষমতা পরিচালনা করেন।
তুর্কী ইবনে আব্দুল্লাহ (১৮২০-১৮৩৪)
তিনি ১৮২০ সালে সাউদ রাজ্য বংশের নেতৃত্ব গ্রহন করেন এবং তার শাসনাঞ্চল দীর্ঘায়িত করেন। এবং রিয়াদে কেন্দ্রীয় মসজিদ নামাযরত অবস্থায় নিহত হন।
ফয়সাল ইবনে তুর্কী (১৮৩৪-১৮৩৮)
তিনি তার পিতার হত্যাকারী মুশারি ইবনে আব্দুল্লাহকে হত্যা করে ১৮৩৪ সালে ক্ষমতায় আসেন কিন্তু খালেদ ইবনে সাউদের চক্রান্তে ১৮৩৮ সালে তিনি দেশ ত্যাগ করেন।
খালিদ ইবনে সাউদ (১৮৩৮-১৮৪১)
তিনি ফয়সাল ইবনে তুর্কীকে বন্দী করে মিসরে প্রেরণ করে ক্ষমতা গ্রহন করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে সুনআন (১৮৪১-১৮৪৩)
খালিদ ইবনে সাউদকে ১৮৪১ সালে রিয়াদে থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। পরে ফয়সাল ইবনে তুর্কী দেশে প্রত্যাবর্তন করে তাকে বন্দী করে কারারীন্তন করেন এবং ১৮৪৩ সালেই পুুনারায় ক্ষমতায় দখল করেন।
ফয়সাল ইবনে তুর্কী (২য় মেয়দ ১৮৪৩-১৮৬৫)
মিসর থেকে তিনি দেশে ফিরে আব্দুল্লাহ বন্দী করে রাজ্য শাসন দ্বিতীয় মেয়াদে দখল করে নেন। এবং তিনি ২ ডিসে¤^ও ১৮৬৫ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত পরিচালনা করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ফয়সাল (১৮৬৫-৭১)
তিনি তার পিতার মৃত্যুর পর ক্ষমতা গ্রহন করেন এবং কিন্তু তার ভাইদের চক্রান্তে ১৮৭১ সালে ক্ষমতা হারান।
সাউদ ইবনে ফয়সাল (১৮৭১-৭৪)
তার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে ফয়সাল এর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আব্দুল্লাহর কারনে তিনি দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ১৮৭৪ সালে তিনি মারা যান।
আব্দুল্লাহ ইবনে ফয়সাল (১৮৭৪-১৮৮৪)
তিনি সাউদ এর কাছ থেকে দ্বিতীয় মেয়দে ক্ষমতা গ্রহন করেন। তবে সাউদের পুত্রদের বিরোধিতার কারনে ১৮৮৪ সালে নির্বাচিত হন।
মুহাম্মদ ইবনে সাউদ (১৮৮৪-১৮৮৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে ফয়সালের নির্বাসনের পর তিনি ক্ষমতায় আরোহণ করেন। এবং ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
আব্দুর রহমান ইবনে ফয়সাল (১৮৮৯-১৮৮৯)
মুহাম্মদ ইবনে সাউদের পর তার চাচা আব্দুর রহমান ইবনে ফয়সাল ক্ষমতা গ্রহন করেন। তবে তিনি ঐ বছরই মুহাম্মদ ইবনে রশিদ কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন।
আব্দুল্লাহ ইবনে ফয়সাল (১৮৮৯-১৮৯০)
মুহাম্মদ ইবনে রশিদ তৃতীয়বারের মত তাকে ক্ষমতায় বসান। তবে এসময় আব্দুর রহমান ক্ষমতা দখলের চেষ্ঠা চালান।
আব্দুল আযীদ ইবনে আব্দুর রহমান (১৯২৬-১৯৫৩)
দীর্ঘদিন সাউদ পরিবার ক্ষমতার বাহিরে ছিলেন। পরবর্তীতে আ. আযীজ পুনরায় তার কিছু অনুসারী নিয়ে রিয়াদ দখল করেন এবং তাদেও ক্ষমতা বিস্তৃত করতে যচেষ্ঠ হন। ক্ষতপর তিনি ১৯২৬ সালে থেকে পুরো রাজ্য শাসন শুরু করেন। তার প্রচেষ্ঠার মাধ্যমেই ১৯২৭ সালে আরব রাজ্য ¯^ীকৃতি লাভ করে তিনি ১৯৩২ সালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য নিয়ে আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার করেন। যার দরুন ২৩ সেপ্টে¤^রকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি ১৯২৬-১৯৫৩ সাল পর্যন্ত শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
সাউদ ইবনে আব্দুল আযীয (১৯৫৩-৬৪)
তার পিতা আব্দুল আযীয মৃত্যু বরণ করলে শাসনভার গ্রহন করেন এবং দক্ষতার সাথে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। তার আমলেই মদীনা বিশ্বাবিদ্যালয় সাউদ বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন প্রতিষ্ঠানে সহ মুসলিম ওয়ার্ড লীগ উদ্বোধন করেন।
ফয়সাল ইবনে আব্দুল আযীয (১৯৬৪-১৯৭৫)
আযীয ইন্তেকাল করলে তিনি ক্ষমতা গ্রহন করেন। তার প্রচেষ্ঠায় সৌদিতে বহু উন্নতি সাধিত হয়। রবেতা আলম আল ইসলামী ও আই সি, আই ডিবি সহ নানা সংস্থা গড়ে তুলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি তার ভ্রাতুপূত্র কর্তৃক নিহত হন।
খালিদ ইবনে আব্দুল আযীয (১৯৭৫-১৯৮২)
তার ভাই নিহত হওয়ার পর তিনি ক্ষমতাভার গ্রহন করেন। কৃষি, শিল্প, যাতায়াত, স্থাপনা নির্মনে সহ অভ্যন্তরীণ উন্নয়ণ সাধনে তার ভুমিকা অপরিসীম। তার শাসনমলে একদল চরমজানপন্থি ২২ নভে¤^ও ১৯৭৯ খ্রিস্টব্দে বায়তুল্লাহ দখল করেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি শাসন পরিচালনা করেন।
ফাহাদ ইবনে আব্দুল আযীয (১৯৮২-২০০৫)
তার ভাই ইন্তেকালের পর তিনি বাদশাহ হিসেবে ক্ষমতা গ্রহন করেন। এবং দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপ্তি ২০০৫ পর্যন্ত ক্ষমতা পরিচালনা করেন। তার আমলেই সৌদিতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়। বহিঃ রাষ্ট্রেও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আযীয (২০০৫-২০১৪)
ফাহাদ ইবনে আব্দুল আযীয ইন্তেকাল করলে তার ভাই আব্দুল্লাহ বাদশাহ হন। ২০০৯ সালে তিনি বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগ পৃথক করেন। ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারী দরিদ্র পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে জেদ্দাতে শত শত লোক বিক্ষোভ করেন এবং পুলিশের গুলিতে ১১ জন প্রাণ হারান। এতে তিনি মোটা অংকের নতুন বাজেট ঘোষনা করে। তাদেও শান্ত করতে সমর্থ হন। ২০১৪ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সালমান ইবনে আব্দুল আযীয (২০১৪ বর্তমান)
আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করলে তিনি শাসন ক্ষমতায় আরোহন করেন। আজ অবধি তিনি ক্ষমতার মসনদে রয়েছেন। বর্তমানে সৌদিতে যুবরাজ হলেন মুহাম্মদ বিন নায়েফ। সালমান তার শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু নীতির জন্য সমালোচনার শিকার হন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে মিনায় হজ্জ পালন কালে পদপিষ্ঠ হয়ে ব্যাপক হাজিদের প্রাণহানীতে সৌদি সরকার দায়িত্ব অবহেলায় ব্যাপক সমালোচিত হন।
সৌদি আরবের ইতিহাস ঐতিহ্য খুবই পুরাতন। আদম (আ.) থেকে শুরু কওে বর্তমান পর্যন্ত সৌদিও গুরুত্ব অপরীসীম। ইসলামের বিভিন্ন নিদর্শনাবলী এদেশের সাতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সৌদি মুসলিম বিশ্বের কল্যাণে প্রতিনিয়ত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছে।
লেখক
কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন
- ছাত্র সমাচার : ডিসেম্বর’১৫ সংখ্যা