ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম [পীর সাহেব চরমোনাই] প্রদত্ত বক্তব্য
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই পুনর্মিলনী সমাবেশের সভাপতি, আমন্ত্রিত দেশ-বিদেশের বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক বন্ধুগণ, উপস্থিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সাবেক-বর্তমান নেতৃবৃন্দ এবং সারাদেশ থেকে আগত ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সর্বস্তরের সাবেক-বর্তমান সদস্য ও দায়িত্বশীলবৃন্দ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
১৯৯১ সালের ২৩ আগস্ট ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ ২০১৬ সালে এসে এর ২৫ বছর পূর্তি হলো। ২৫ বছর পূর্তির এই শুভক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি স্মরণ করছি সেসব মহামানবদেরকে যাদের ত্যাগ ও সাধনার বিনিময়ে মানবতার ধর্ম ইসলামকে আমরা অবিকৃত অবস্থায় পেয়েছি। স্মরণ করছি সেসব ফুকাহায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসিনে কেরাম, দার্শনিক, মুজাদ্দিদগণকে যারা ইসলামী জ্ঞানকে আমাদের পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন এবং ইসলামকে সমসাময়িক সমস্যার মোকাবেলায় কার্যকর সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
মাগফেরাত এবং জান্নাতে উঁচু মাকাম কামনা করছি সেই সব নাম না জানা বিপ্লবীদের, যারা নিজেদের পরিবার-পরিজনকে ত্যাগ করে বিশ্বের দিকে দিকে ইসলাম ও মানবতা রক্ষার সংগ্রামে শাহাদাত বরণ করেছেন।
স্মরণ করছি ১৭৫৭ সাল থেকে বাংলার মুক্তিসংগ্রামে রক্ত-ঘাম-সময় ব্যয় করা মুক্তিসংগ্রামীদের। বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের।
যাদের রক্ত এবং জীবনের বিনিময়ে আজ আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।
কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের শহীদ ভাইদের- যারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে এদেশে ইসলামী আন্দোলনের ভীত রচনা করেছেন।
সংগ্রামী ভাই ও বন্ধুগণ!
আপনারা এই ভূখণ্ডের ইতিহাস জানেন। এই ভূখণ্ডের মানুষের ইতিহাস বঞ্চনা, প্রতারণা আর হতাশার ইতিহাস। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে যার সূচনা হয়েছিলো। ১৯৭১ হয়ে সে ধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। ১৭৫৭ সালে আমাদের পতনের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটলেও ইসলামী সভ্যতার পতনের সূচনা আরো আগেই হয়েছিলো। ১৭ শতকে পশ্চিমা বিশ্ব যখন বস্তুগত জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করছিলো, তখন মুসলিম বিশ্বের শাসকগণ ভোগ আর তামাশায় মত্ত ছিলো। মুসলিমরা সামরিক শক্তি আর আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার চেয়ে নিজেদের মাঝে ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব লিপ্ত ছিলো।
অন্যদিকে গোটা উম্মতে মুসলিমা তাদের কর্তব্য-আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি, তাকওয়া পরহেজগারী ভুলে গিয়ে অন্তর্কলহে লিপ্ত ছিলো। তারা একাধারে যেমন দুনিয়ার হালহাকিকত সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তেমনি আখেরাতের সম্বল অর্জনেও ছিলো গাফেল। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ১৯ শতকের প্রথমার্ধে বিগত দেড় হাজার বছরের শাসক মুসলিম জাতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরাজিত ও পরাধীন জাতিতে পরিণত হলো।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, এই পরাজয় কেবল সামরিক পরাজয়ই ছিলো না; বরং জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, আদব-কায়দা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, তাওহিদ-রেসালাত সব কিছুতেই আমরা পরাজিত ছিলাম। আমাদের না ছিলো দুনিয়াবি বস্তুগত সক্ষমতা, না ছিলো আধ্যাত্মিক কোন শক্তি-সামর্থ।
ভাইয়েরা আমার!
আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হল ইসলাম। ইসলামের এই পরাজিত অবস্থা এবং মুসলামানদের হীনমন্য অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী হয় নাই। অল্প সময়ের ব্যবধানেই মুসলমানরা ইসলামকে কেন্দ্র করে মুক্তি সংগ্রামে শামিল হয়েছে। আমাদের ভারত উপমহাদেশে ইংরেজবিরোধী আান্দোলনে ইসলামই ছিলো প্রধান প্রেরণা। ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগ ও স্বাধীনতা ছিলো সম্পূর্ণই ইসলামকেন্দ্রিক। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- পাকিস্তানী তৎকালীন শাসকরা রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলাম অনুসরণ করে নাই। তারা নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিলে ইসলামকে ব্যবহার করেছে। সবচেয়ে ঘৃণ্য বিষয় হলো, পাকিস্তানীদের অপশাসনের বিরুদ্ধে গঠিত আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে তারা ইসলাম রক্ষার কথা বলে দমন করার চেষ্টা করেছে।
আফসোসের বিষয় হলো, তৎকালীন বাংলার রাজনীতিতে তেমন কোন কার্যকর শক্তিশালী ইসলামী দল ও রাজনৈতিক ব্যক্তি দেখা যায় নি- যারা ইসলামের অপব্যবহারে পাকিস্তানীদের অপকৌশলকে প্রতিরোধ করে বাংলার মানুষের মুক্তি সংগামের কেন্দ্রবিন্দুতে ইসলামকে নিয়ে আসবে।
এর সুযোগ গ্রহণ করেছে ব্রিটিশদের শিক্ষায় শিক্ষিত পশ্চিমা মানসিকতার ইসলামবিরোধী গোষ্ঠী। তারা পাকিস্তানী শাসকদের অপশাসনকে ইসলামের অপশাসন বলে প্রচার করেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে ইসলামের ব্যর্থতা বলে প্রচার করেছে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানীদের অত্যাচার অবিচারে অতিষ্ঠ জনতা ১৯৭১-এ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি।
সংগ্রামী ভাই ও বন্ধুগণ!
৭১ পরবর্তী সময়েও আমরা রাষ্ট্রপরিচালনায় ইনসাফ, সুবিচার ও সুশাসন পায় নি। নীতি-নৈতিকতাহীন সমাজ, বস্তুতান্ত্রিক সফলতার চিন্তায় বিভোর মানুষ বল্গাহীন দুর্নীতি, হত্যা, পাপাচার, দুুরাচারে লিপ্ত হয়। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাকে লুণ্ঠনের অধিকার মনে করে।
রাজনীতিকে সেবা নয়; বরং শোষনের হাতিয়ার বানায়। ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতগণ মসজিদ-মাদরাসার সীমিত সীমানায় নিজেদের আবদ্ধ করে রাখে।
জাতি যেন এক ভয়াবহ ধ্বংসের দিকে ছুটে চলে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলার মুজাদ্দিদ, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক রাহবার মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো, ইসলামের সুমহান চরিত্রকে জনতার মন-মানসে ফিরিয়ে আনার জন্যে। ইসলামী নীতি-নৈতিকতার শিক্ষার মাধ্যমে সমাজের উন্মাদনাকে রোধ করার জন্যে। ইসলামের সুসম অর্থনীতি, ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রনীতি, ইসলামের সুশীতল সমাজনীতির মাধ্যমে মুক্তিপাগল বাঙ্গালি মুসলিম জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নস্বাধ পূরণ করার জন্যে।
ইশা আন্দোলন তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করতে গিয়ে অনুধাবন করে-
জাতির অধঃপতনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা। বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষকে বৈষয়িক শিক্ষা দেওয়া হলেও নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয় না। ফলে এই শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী স্বার্থপর, সম্পদলোভী হিংস্র হয়ে ওঠে।
বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা-শিক্ষার্থীদের চলমান রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দিলেও ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা অজ্ঞ থেকে যায়। ফলে তারা মুসলিম বাঙ্গালি সমাজের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অদক্ষতার পরিচয় দেয়।
অপরদিকে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইসলামের শিক্ষা অর্জন করলেও চলমান জ্ঞানের অভাবে ইসলামকে সমাজে প্রয়োগ করতে পারছে না। ফলে বাঙালি মুসলিম সমাজ নেতৃত্বশূন্যই থেকে যাচ্ছে।
আমরা আরো লক্ষ্য করেছি যে, বৃটিশপ্রবর্তিত শিক্ষা গ্রহণ করে লাখো মুসলমানের সন্তান আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে পশ্চিমাদের গোলাম হয়ে যাচ্ছে।
ভয়ংকর বিষয় হলো, এদের আকিদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে তারা নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ থেকে এই শিক্ষার ফলে সুন্নতের চিহ্ন উঠে যাচ্ছে। শেয়ারে ইসলাম লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দাঁড়ি টুপি, নামাজ-রোজা হজ্ব জাকাত ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলোও হুমকিতে পড়ছে।
দীর্ঘদিন প্রকৃত ইসলামী রাজনীতির শূন্যতার কারণে বাংলাদেশে ইসলামী আদর্শকে মানুষের সামনে তুলে ধরার মতো লোকের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইসলামী অনুশাসন চর্চার অভাবে শিক্ষিত তরুণরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হয়ে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও অন্যায়ের আশ্রয় নিচ্ছে। ফলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
দেশের ছাত্ররাজনীতি বৃহত্তর ভোগবাদী রাজনৈতিক দলসমূহের লেজুড়বৃত্তিতে লিপ্ত। দলীয় স্বার্থে নেতার কথায় হত্যা, খুন-গুম ছাত্রনেতাদের নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছিলো।
ছাত্ররা বই-খাতা নয়; বরং অস্ত্র বহন করতো। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী ও হলদখল ছাত্ররাজনীতির কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলো।
অপরদিকে মাদরাসাসমূহে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো। সব মিলিয়ে অবস্থা ছিলো যে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে সে মাস্তান আর মাদরাসায় পড়াশোনা করলে সে হয় সমাজবিচ্ছিন্ন।
এমন জটিল পরিস্থিতি অনুধাবন করেই ১৯৯১ সালে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো।
ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর সাবেক একজন দায়িত্বশীল হিসেবে প্রিয় সংগঠনের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আজ আমি নিজেও গর্ববোধ করছি।
প্রিয় ভায়েরা আমার!
আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে স্মরণ করানোর জন্যই এই দীর্ঘ ইতিহাস এবং ছাত্রআন্দোলন প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করলাম।
আপনারা যারা কোন না কোন দিন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এর সদস্য বা দায়িত্বশীল ছিলেন, যারা এই কাফেলায় শামিল হয়েছেন, তাদের দায়িত্বও বিশাল। এই জাতির হাজার বছরের মুক্তির স্বপ্ন আপনাদের কাঁধে।
আজকের এই পুনর্মিলনী সমাবেশে আমি আপনাদের দায়িত্ব-কর্তব্যগুলোকে আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
-এদেশের লাখো তরুণ বৃটিশপ্রবর্তিত শিক্ষার কারণে ঈমান-আকিদা ধ্বংস করে নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাদের ইমান-আকিদা রক্ষার জিম্মাদারী আপনাদের।
-কোটি কোটি মুসলিম তরুণ আজকে সুন্নাহের পথ ছেড়ে পশ্চিমা গোমরাহির পথে ধাবিত হচ্ছে। তাদেরকে রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের।
-মুসলমানের দেশে মুসলিম সন্তানেরা ইসলামী জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাচ্ছে। এদেরকে ইসলামী জ্ঞানে শিক্ষিত করার জিম্মাদারী আপনাদের।
-মুসলিম সন্তানেরা জ্ঞানের অভাবে এবং পশ্চিমা অপপ্রচারের কারণে ইাসলামের সমাজ-রাষ্ট্র-অর্থনীতি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছে। এদের ভুল ভাঙ্গানোর জিম্মাদারী আপনাদের।
-এদেশের মুসলিম সন্তানেরা ইসলামকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। এদেরকে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি দাওয়াত দেয়ার জিম্মাদারী আপনাদের।
-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে সীমিত গণ্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। ইসলামের সামগ্রিক ধারণা থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে রাখছে। এদেরকে জনসম্পৃক্ত করার জিম্মাদারি আপনাদের।
-মুসলিম বাংলাদেশে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করে মানুষের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। এর মোকাবিলায় মুসলিম জনতাকে সংগঠিত করার জিম্মাদারী আপনাদের।
-দেশে ইসলামবিরোধী নানা ধরনের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আক্রমণ করা হচ্ছে। এর প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জিম্মাদারী আপনাদের।
-লেখালেখির মাধ্যমে, গান-কবিতার মাধ্যমে, প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামকে হেয় করা হচ্ছে। এর প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জিম্মাদারী আপনাদের।
-ইসলামকে কলংকিত করতে ইসলামের নামে সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। একে প্রতিহত করে ইসলামের সঠিক রূপ তুলে ধরার জিম্মাদারী আপনাদের।
-ইসলামের দর্শনগত মজবুতি, আধ্যাত্মিক শক্তি ও চরিত্র মাধুর্যকে নষ্ট করার অপতৎপরতা চলছে। ইসলামের দর্শনের যথাযথ ব্যাখ্যা, আধ্যাত্মিক চর্চার প্রচলন ও চরিত্র মাধুর্যের বিকাশ ঘটানোর জিম্মাদারী আপনাদের।
-স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। মানুষ স্বাধীনতার স্বাধ এখনো পায় নাই। ইসলামকে কেন্দ্র করে মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেয়ার জিম্মাদারী আপনাদের।
-সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্ররাজনীতি দূর করে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জিম্মাদারী আপনাদের।
-৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সংবিধানে আল্লাহর উলুহিয়্যাতকে অস্বীকার করা হয়েছে। তা স্থাপন করার জিম্মাদারী আপনাদের।
-ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিম্মাদারী আপনাদের।
-এদেশের আইন আল্লাহর কোরআনের আইনকে বাতিল ঘোষণা করেছে। কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠার জিম্মাদারী আপনাদের।
সমবেত ভায়েরা আমার!
সময়ের আবর্তনে আপনাদের বয়স বেড়েছে। আপনারা ছাত্রজীবন শেষ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী আপনি ছাত্র আন্দোলন থেকে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু, মনে রাখবেন- আপনার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে আপনি অবসর নেননি, নিতে পারেন না।
কী করে আপনি আপনার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে অবসর নেবেন? এখনো তো আপনার লক্ষ্য অর্জন হয় নি। যে স্বপ্ন নিয়ে আপনি ছাত্র আন্দোলনে এসেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। এখনো এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বর্তমান সিলেবাসে রাসুল (সা.) এর জীবনী, হযরত আবু বকর-ওমরের জীবনী বাদ দিয়ে রামের জীবনী প্রবেশ করানো হয়েছে।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরে এসে আজও ভারতীয় পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে লাখো মানুষকে বন্যায় সর্বসান্ত হতে হয়। দেশের বনসম্পদ ধ্বংস করে ভিনদেশী প্রভুর চাহিদা পূরণ করতে হয়। দেশের বুক চিরে ট্রানজিটের মতো নতজানু চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়। আজও এদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে ভিনদেশি প্রভুরা। আজও দেশে বাকস্বাধীনতা নাই, কর্মের স্বাধীনতা নাই।
ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্যে ১৯৭১ এ যে জাতি চূড়ান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আজ স্বাধীন দেশেও মানুষের ভোটাধিকার নাই।
এমন পরিস্থিতিতে আপনি অবসর নিতে পারেন না। বসে থাকতে পারেন না।
অতএব আসুন, আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ইসলাম দেশ জাতি ও মানবতার কল্যাণে এগিয়ে আসি।
বর্তমান ছাত্র ভাইদেরকেও আমি এ আদর্শিক কাফেলাকে তার লক্ষ্য অর্জনে আরো দায়িত্বশীল ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি।