সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

হুদায়বিয়া সন্ধি ও বর্তমান জোট পর্যালোচনা

নিজামুদ্দীন আল-গাজী

ইসলাম এক কালজয়ী ও বিশ্বজনীন জীবনব্যবস্থা। আর এ জীবনব্যবস্থার প্রবর্তক মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সা.। তিনি মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বমানবতার জন্য মহিমান্বিত অবিসংবাদিত নেতা ও প্রাজ্ঞ পথ প্রদর্শক। মানবতার সংকট সমাধানে তাঁর চিন্তা-চেতনা অভাবনীয়। সংঘাত এড়াতে তার দক্ষতা-বিচক্ষণতা অকল্পনীয়। পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রিয় জীবনসহ সর্বক্ষেত্রে তিনি সফল। পরিবার ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেমন তার রয়েছে উদারতা, দয়াদ্রতা ও মহানুভবতা। তেমনি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় রয়েছে তার অসাধারণ পান্ডিত্য, কঠোর সমর নীতি, বুদ্ধিমত্তা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।

হুদায়বিয়ার সন্ধি রাসূলুল্লাহ সা. এর চরম রাজনৈতিক দূরদর্শিতার স্ব-চিত্র। আপাত দৃষ্টিতে স্ব-বিরোধী মনে হলেও মূলত এর মাধ্যমেই বহুবিদ কল্যাণের পথ উম্মোচিত হয়েছিলো। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ সন্ধিকে মুসলমানদের জন্য সুস্পষ্ট বিজয় ঘোষণা করেছেন। “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি” (সূরা ফাতাহ-১)

হুদায়বিয়ার সন্ধি দীন ইসলাম চুড়ান্ত বিজয়ের ধারপ্রান্তে পৌঁছার মূল ভিত্তিপ্রস্তর। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সাথে আরেকটি রাষ্ট্রের সন্ধি বা শান্তি চুক্তি। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে দল কেন্দ্রীক বিভিন্ন জোট-মহাজোট হচ্ছে। আর এটাকে হুদায়বিয়া সন্ধির সাথে তুলনা করে ইসলামের লেবেলও কেউ কেউ লাগাচ্ছে। কুফুরী শক্তির সাথে আঁতাত করা ও কুফরের নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে রাসূল সা. এর কর্ম আখ্যা দিয়ে ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করছে। তাই বিষয়টি নিয়ে তুলনা মূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সে কারণে বক্ষমাণ নিবন্ধে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা পেশ করা হলো।

হুদায়বিয়া সন্ধির প্রেক্ষাপট
ষষ্ঠ হিজরী মেতাবেক ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ। হুজুর সা. মনস্থ করলেন উমরা পালন করবেন। এ লক্ষ্যে চৌদ্দশত সাহাবী সাথে নিয়ে রওয়ানা করলেন মক্কা অভিমুখে। মক্কার কাছাকাছি প্রায় ‘উসফান’ নামক স্থানে পৌঁছার পর রাসূল সা. অবগত হলেন, কুরাইশরা যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এবং বীর যোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদ ও আবু জাহেল তনয় ইকরামা এর নেতৃত্বে দুইশত অশ্বারোহীর একটি দল প্রেরণ করেছে মুসলমানদের মক্কাগমন রোধ করতে। হুজুর সা. মহৎ উদ্দেশ্য বক্ষে ধারণ করেই মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করেছেন। যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া বা সংঘাতে যাওয়া সমিচিন মনে করেন নি। তাই সংঘাত এড়াতে এবং উদ্দেশ্য সাধন করতে কৌশল মূলক সরল পথ চেড়ে দুর্গম গিরিপথ পাড়ি দিয়ে হুদায়বিয়া উপত্যকার দিকে এগুতে থাকেন। ‘সানিয়াতুল মুরার’ নামক স্থানে এলে উট কুদরতি নির্দেশে লুটে পড়ে। নবীজী সা. সেখানে যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেন। কুরাইশদের নিকট উসমান রা. গ্রহণযোগ্য ও সত্যবাদী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাই তাকে উদ্দেশ্যের কথা জানাতে কুরাইশদের নিকট পাঠালেন। কুরাইশরা নিশ্চিত হলো যুদ্ধ নয়, উমরা করতেই মুসলমানরা এসেছে।

কিন্তু নেহায়াৎ দাম্ভিকতার কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাবার যিয়ারত হতে মুসলমানদের বঞ্চিত করবে। এদিকে উসমান রা. আসতে বিলম্বিত হওয়ায় মুসলমানদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে থাকে। পরক্ষণে জনরব ওঠে উসমানকে শহীদ করা হয়েছে। এ দুঃসংবাদে রাসূল সা. খুবই মর্মাহত হলেন। এবং উসমান হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের দৃঢ় সংকলপ করলেন। বাবলা বৃক্ষের নিচে সমাবেত সাহাবীরা নবীজীর হাতে প্রতিশোধের বাইআত গ্রহণ করলেন। সেটিই ঐতিহাসিক ‘বাইআতে রিদওয়ান’। সহায় সম্বলহীন, নিরস্ত্র সাহাবীরা স্রেফ খোদায়ী শক্তির ভরসা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

এ সংবাদ মূহুর্তে পৌঁছে যায় কুরাইশদের কাছে। তারা খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তা ছাড়া তখন ছিলো যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মাস। তাই যুদ্ধের অবতারণা হোক তারাও চায়না। তাই তারা উসমানকে ফেরত পাঠালো এবং ভাবলো মুহাম্মদকে কুপোকাৎ করার এটাই মহা সুজোগ। সে লক্ষ্যে সন্ধি প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন, সুহাইল ইবনে আমরকে। উভয় পক্ষের তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে সন্ধির উপর মতৈক্য প্রতিষ্ঠা হলো। সেখানেই লিপিবদ্ধ হয় একটি চুক্তিনামা। যা ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়া সন্ধি’ নামে খ্যাত।

হুদায়বিয়া সন্ধির ধারা সমূহ
সুদীর্ঘ আলোচনান্তে মুসলমান ও মক্কার কুরাইশদের মাঝে সাক্ষরিত সন্ধির ধারা সমূহ-
১. এ বছর মুসলমানগণ উমরা না করেই মদিনায় ফিরে যাবেন।
২. পরবর্তি বছর তারা মাত্র তিন দিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করে উমরা পালন করতে পারবেন।
৩. সে সময় আত্মরক্ষার জন্য কেবল একটি কোষাবদ্ধ তরবারী সাথে আনতে পারবেন।
৪. কোন মুসলমান সেচ্চায় মদীনা হতে মক্কায় চলে এলে মক্কাবাসী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে না বা মুসলমানদের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া যাবে না।
৫. পক্ষান্তরে মক্কার কোন লোক মদীনায় আশ্রয় প্রার্থনা করলে মদীনার মুসলমানগণ তাকে আশ্রয় দিতে পারবে না। তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে।
৬. আরবের অন্য গোত্রগুলো সুবিধা মত যেকোন পক্ষের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবে।
৭. এ সন্ধি দশ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
৮. সন্ধির শর্তাবলী উভয়পক্ষ পুরোপুরি পালন করবে বিপরিতে চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।
৯. সন্ধির মেয়াদকালে জনসাধারণের পূর্ণ নিরাপত্তা রক্ষিত হবে।
১০. সন্ধির মেয়াদকালে কোন প্রকার লুণ্ঠন বা আক্রমণ করা চলবে না।
১১. হজ্জের সময় জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
১২. মক্কার ব্যবসায়ীরা বিনা বাধায় সিরিয়া ও অন্যান্য দেশে বাণিজ্য করতে পারবে।
১৩. মক্কার কোন নাবালক তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিত মুসলমানদের দলে যোগদান করতে পারবে না। যদি যোগদান করে তাহলে তাকে অভিবাবকের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

সন্ধির সুদূর প্রসারী ফলাফল
সন্ধির ধারাগুলো এতই বিরোধপূর্ণ ছিলো যে সেগুলো মেনে নেয়া দায়। রাসূল সা. যদি সেদিন ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করতেন তাহলে হয়তো ঐতিহাসিক হুদায়বিয়া সন্ধি মতানৈক্যের আবর্তেই সমাধী হয়ে যেত। কিন্তু রাসূল সা. নিরেট দীনি স্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে শান্তি পূর্ণভাবে তাদের বৈষম্যচুক্তি মেনে নেন। কিন্তু উৎসুক সাহাবীদের মাঝে হৈ চৈ পড়ে যায়। হায়! রাসূল সা. একি করছেন? নিজেদের পায়ে কুড়াল চালিয়ে সন্ধির কি প্রয়োজন? ইসলাম কি মতবাদ হিসেবে এতই ঠুনকো? এতই পরনির্ভর যে বাতিলের সাথে চুক্তি করে চলতে হবে? বড় বড় সাহাবীরা পর্যন্ত বিভ্রান্তির কুয়াশাচ্ছন্য পথে ঘুর্ণিপাক খাচ্ছিলেন। উমর রা. তো রাগে-ক্ষোভে কেঁদেই ফেলেছেন। উসমান রা. এর অবস্থা এমন ছিলো যে, প্রয়োজনে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারি তবুও রাসূলুল্লাহর নাম নিজ হস্তে কেটে দিতে পারি না।

এ নাযেহাল পরিস্থিতিতে রাসূল সা. সন্ধিচুক্তি সাক্ষরিত করলেন এবং চরম রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ রাখলেন। যার সুদূর প্রসারী ফলাফল শুধু মক্কা বিজয় নয় বরং সমগ্র পৃথিবীতে ইসলাম সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ার মূল শক্তির ভিত্তিপ্রস্তর সে দিনই তৈরী হয়ে ছিলো। নিম্নের আলোচনায় আমরা একটু সূ² দৃষ্টিতে তাকালেই বুঝতে পারবো, কিভাবে মৌল শক্তি অর্জন হলো? সন্ধিতে মুসলমানরা পরাজিত হলো? না; রাসূল সা. এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মারপ্যাচে কাফেররা ফাঁদে পড়লো-

১. “সে বছর মুসলমানরা হজ্জ করা ব্যতিতই মদীনা ফিরে যেতে হলো” এটা কি মুসলমানদের পরাজয়? মুসলমানরা তো পরের বছর থেকেই হজ্জ করতে পারবে। এ বছরতো আল্লাহর পক্ষ থেকে হজ্জ করা ফরজও ছিলো না। তাছাড়া হজ্জ করার অনুমতিতো এমনিতেই ছিলো না কমপক্ষে পরের বছর হতে স্বাধীনভাবে হজ্জ করার দ্বারাতো উম্মোচিত হলো। সুতরাং রাসূল সা. এর প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিলো হজ্জের নামে এসে তাদেরকে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ করা, শুধুু হজ্জ করা নয়।
২. কুরাইশদের মিত্র গোত্র খাইবার, যা মুসলমানদের জন্য কাল ছিলো। মদীনার পার্শ্ববর্তী হওয়ায় মুসলমানদের সকল কার্যক্রমের খবরাখবর কুরাইশদের নিকট পৌঁছে দিতো। মজার ব্যাপার হলো, এ সন্ধি চুক্তির ফলে তারা একা হয়ে পড়ল এবং মুসলমানরা মাস খানেক পরেই খাইবার বিজয় করে ফেলল।
৩. এ চুক্তি এবং খাইবার বিজয় করার পর মুসলমানরা কোন ঝামেলা ছাড়া নির্বিঘেœ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামের দা’ওয়াত পৌঁছানোর কাজে আত্মনিয়োগ করলো। কারণ আপাতত কারো সাথে যুদ্ধাশংকা বা যুদ্ধ প্রস্তুতির ঝামেলা নেই। ইতিহাস বলে, রোম-পারস্য ও মিশরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের নিকট ‘ঐতিহাসিক চিঠি’ তখন থেকেই পাঠানো শুরু হয়।
৪. “কোন কুরাইশ মক্কা হতে মদীনায় গিয়ে আশ্রয় চাইলে তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে” সন্ধির এ ধারাতেও মুসলমানদের মহা কল্যাণ নিহিত ছিলো। কারণ কোন কুরাইশ মদীনায় গিয়ে ইসলামী অনুশাসনের বাস্তব প্রশান্তি অনুধাবন করে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণের সুঝোগ পেত। পরবর্তিতে তাকে ফেরত পাঠালেও সে মক্কায় এসে কুরআনের বাণি ও ইসলামের সু-শাসনের সুফল বর্ণনা করতে পারতো। মক্কাবাসীদের মাঝে ইসলামের প্রচার কার্য চালাতে পারতো । যা ইসলামের অগ্রগতির সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছিলো।
৫. “কোন মুসলমান সেচ্চায় মদীনা হতে মক্কায় চলে এলে মক্কাবাসী তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে না এবং মুসলমানদের পক্ষ থেকেও বাধা দেয়া যাবে না”। এটা মুসলমানদের জন্য কল্যাণ বৈ কি হতে পারে। কারণ কোন মুসলমানের কাজ নয় যে, সেচ্চায় সে রাসূল সা. এর সঙ্গ পরিত্যাগ করে মক্কায় থাকতে চাইবে। তার মত মুনাফিক না থাাকাই ভালো। সে চলে গেলে মুসলমানরা আপদমুক্ত হলো।
৬. হুদায়বিয়া চুক্তির পূর্বাপর সর্বাবস্থায় মুসলমানদের আচরণ ছিলো শিষ্ট, নম্র, ভদ্র ও শান্তিপূর্ণ আর অপরদিকে কুরাইশ কাফেরদের আচরণ ছিলো উচ্ছৃক্সখল ও দাম্ভিকতায় পরিপূর্ণ। তাই হুদায়বিয়া নিকটস্ত আরব উপত্যকার লোকদের সমর্থণ ক্রমাস্বয়ে মুসলমাদের পক্ষে চলে যায়। যা পরবর্তিতে তাদের মনে ইসলাম গ্রহণের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
৭. এ চুক্তির ফলে কুরাইশ কাফেররা মুসলমানদের ব্যাপারে উদাসিনতা প্রদর্শন করলো। ফলে তারা নির্জীব হয়ে গেল। এবং কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে অবাধে বিচণের সুযোগ সৃষ্টি হলো। মুসলমানদের আচার-আচরণে তারা ক্রমেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকলো। যার ফল এ দাঁড়ালো যে, সে সময় এত বেশী কাফের মুসলমান হয়ে গেল যা অতীতে কখনও হয়নি।
(সূত্র-মা’রিফুল কুরআন)

হুদাবিয়ার সন্ধি ও বর্তমান জোট
কেউ কেউ বর্তমানের বিভিন্ন জোট-মহাজোটকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকেন। অথচ হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে বর্তমানের জোট-মহাজোটের রয়েছে বিস্তর ফরাক।
১. হুদায়বিয়ার সন্ধি মূলত দুটি রাষ্ট্রের (মদীনা ও মক্কার) মাঝে সম্পাদিত হয়েছিলো আর বর্তমানে হচ্ছে দুটি দলের মাঝে। তাও আবার সন্ধি নয় জোট।
২. হুদায়বিয়ার সন্ধির সম্পর্কে কুরআনে পাকে সূরা নাজিল হয়েছে এবং এটাকে ইসলাম ও মুসলমানদের সুস্পষ্ট বিজয় ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর বর্তমান জোট-মহাজোটের বিষয়টি এমন নয়।
৩. বাস্তবতার নিরিখে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, এ সন্ধির মাধ্যমে পরবর্তিতে মুসলমানদের বিজয় পথ উম্মুক্ত হয়েছে। দাওয়তী কার্যক্রম বাধামুক্ত হয়েছে। ইসলামের আলোতে মক্কার সর্ব সাধারণকে উদ্ভাসিত করা সহজ হয়েছে। অথচ ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জোট-মহাজোট যুগ-যুগান্তর অতিক্রম করে চলেছে কিন্তু এতে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন উপকারতো হয়নি বরং হিতে বিপরিত হয়েছে।
৪. হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়েছে শত্রুদের সাথে। বর্তমানে জোট-মহাজোট শত্রুকে শত্রু মনে করে হচ্ছে না বরং মন্দের ভালো তত্ত¡ আবিষ্কার মাধ্যমে হচ্ছে।
৫. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে ক্ষমতার অংশিদারিত্ব গ্রহণের কোন কিছুই ছিলো না। বর্তমানে ক্ষমতার অংশিদারিত্ব গ্রহণের মাধ্যমেই জোট হচ্ছে।
৬. হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়েছে রাসূল সা. এর নেতৃত্বে এবং কর্তৃত্বও ছিলো তাঁর। সন্ধি পরবর্তি মুসলমান-কাফেরের মাঝে যে কোন বিচারকার্যে হুজুর সা. ফায়সালা দিতেন। আর বর্তমানের জোট হচ্ছে নারী নেতৃত্ব গ্রহণের মাধ্যমে। জোটভুক্ত ইসলামী নেতৃবৃন্দের কোন প্রকারের কর্তৃত্ব নেই।
৭. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে ইসলামের কোন ফরজ বিধান লক্সঘন করা হয়নি। বর্তমান জোটে পর্দাসহ অসংখ্য ফরজ বিধান লক্সঘন করা হচ্ছে।
৮. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে লিখিত ইসলামী বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার ভিত্তিতে হয়েছে। আর বর্তমান জোটে ইসলামের পক্ষে কোন লিখিত দাবীতো নেই বরং শুধু আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে হচ্ছে।
৯. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে লেখা ছিলো, চুক্তির কোন ধারা লক্সঘন করলে সন্ধি ভেঙ্গে যাবে। বাস্তবে সে কারণে সন্ধি ভেঙ্গেও গিয়েছিলো। কিন্ত বর্তমান জোটে এ জাতীয় চুক্তি নেই। যদ্দরুন ক্ষমতাসীন দল ইসলাম বিরোধী যত এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছে শরীক ইসলামী দল তার প্রতিবাদ করতে পারে না এবং জোটও ভাঙ্গেনা।
১০. হুদায়বিয়ার সন্ধিতে মুসলমান ও অমুসলমানের মাঝে সৃষ্ট কোন বিবাদের মিমাংসা ইসলামী আইন মতোই হতো। বর্তমানে তা অনুপস্থিত।
উপর্যুক্ত আলোচনায় দিবালাকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধি এবং বর্তমানের জোট-মহাজোট কখনও এক হতে পারেনা। বাংলাদেশ নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ। এদেশে ইসলাম ও মুসলমানরা এতো দুর্বল নয়। তাই ইসলামকে এদেশে খাটো করে দেখা উচিত নয়। অতএব যে বা যারা এদেশে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে দুর্বল সাব্যস্ত করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির চিন্তা ছেড়ে দিয়ে তাগুতের উপর নির্ভরশীল হয়ে ইসলামকে হেয় করছেন, তাদের ভেবে দেখা উচিত।

ইসলামের প্রাথমিক যুগ সর্বাধিক দুর্দিনের যুগ, সর্বাদিক অত্যাচারিতের যুগ, নির্যাতন-নিপিড়নের যুগ হওয়া সত্তে¡ও রাসূল সা. কি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ‘দারুন নদওয়া’র সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছেন? না কাফেরদের পূজা মন্ডফে গিয়ে ইসলাম বিসর্জন দিয়ে সাময়িক অর্চনায় লিপ্ত হয়েছেন? মূর্তির গায়ে হাত বুলিয়েছেন? ক্ষমতার লোভে তাদের সাথে আপোষ করেছেন? না; ক্ষমতার ভাগিদার তিনি হয়েছেন? শিআ’বে আবি তালিবের কথা একটু স্মরণ করুন। আজকের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট কি সেই পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট থেকে কঠিন? উত্তর যদি ‘না’ হয় তবে কেন দৃঢ় ঈমান ও ইস্তেকামতের কথা বাদ দিয়ে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি? আল্লাহর ওয়াস্তে এদিক-ওদিকের পথ বের না করে ইসলামের সু-মহান আদর্শকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিজেদের স্বাতন্ত্র শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করুন। এটাই হযরতদের চরণে অধমের বিনীত অনুরোধ ও মনের আকুতি।

লেখাটির পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন