সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

ইয়েমেনে গণবিক্ষোভ, মুখোমুখি সুন্নী আরব ও শিয়া ইরান,
মার্কিন হাতিয়ার হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে সৌদি আরব

মাথার উপরে সাঁ সাঁ আওয়াজে যুদ্ধবিমান ওড়ার দৃশ্য। মুহূর্তে দ্রিম দ্রিম আওয়াজে বোমার বিস্ফোরণ, ধোঁয়া ও বালি মিলেমিশে মরুর বাতাস ঘোলাটে। গোলার প্রচণ্ড আঘাতে আছড়ে পড়ছে ইমারত, ছিন্নভিন্ন হচ্ছে মানুষের দেহ। মধ্যপ্রাচ্যের মরু অঞ্চলে এ দৃশ্য নতুন কিছু নয়। অব্যাহতভাবে গণবিক্ষোভ চলছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। গণবিক্ষোভের ঢেউ ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন পেরিয়ে এসে লেগেছে ওই এলাকার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইয়েমেনেও।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সহিংসতা, যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু হয়েছে। নির্বাচিত বৈধ সরকারকে রক্ষায় ইয়েমেনের সশস্ত্র শিয়া বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুতির বিরুদ্ধে বিমান হামলা করে সৌদি আরবসহ গাল্ফভুক্ত পাঁচটি দেশ ও আরও কয়েকটি মিত্র দেশের সামরিক জোট। পাল্টা আক্রমণে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুকের গুলি ছুড়ছে হুতিরাও। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন গাল্ফ জোটের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ও আরবীয় অনেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, জর্ডান, বাহরাইন, মরক্কো, সুদান ও পাকিস্তান। তবে সুন্নিপন্থীদের এ হামলা বন্ধ করার আহŸান জানিয়েছে শিয়াপন্থী দেশ ইরান ও ইরাক। একমাত্র ওমান এই যুদ্ধে কোনো পক্ষের হয়ে নামছে না।

প্রসঙ্গত, ইয়েমেনের বর্তমান সঙ্কটের শুরু ২০১১ সালে। অব্যাহত গণবিক্ষোভের মুখে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আর দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হবেন না। এমনকি তার পুত্রকেও এ পদে বসানোর ইচ্ছা তার নেই। প্রেসিডেন্ট সালেহ যখন এ ঘোষণা দেন তখন তিউনিসিয়া থেকে বেন আলী পলায়নের পর মিসরে গণবিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠছিল। প্রবল গণবিক্ষোভে হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অপরদিকে ইয়েমেনে গণবিক্ষোভ প্রবল আকার ধারণ করেছে। প্রেসিডেন্টের পক্ষ ত্যাগ করে মন্ত্রিসভার সদস্য ও এমপিরা বিরোধী পক্ষে যোগদান করছে। প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও গোত্র প্রধানরা বিরোধীপক্ষকে সমর্থন দিচ্ছেন। ইয়েমেনের ভেতর ও বাইরে থেকে প্রেসিডেন্ট আলী সালেহর দীর্ঘ ৩৩ বৎসরের শাসনের কীভাবে অবসান ঘটানো যায় তা নিয়ে ইতোমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হোসনে মোবারকের পতনের ঠিক আগের কথাগুলো এখন উচ্চারিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট সালেহর মুখ থেকে। সানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “আজ আমি আপনাদের সামেন তেলআবিবের একটি গোপন অপারেশন রুমের কথা জানাবো। আপনারা কী জানেন সেই অপারেশন রুমে কী হয়? সেখানকার কাজ হলো আরব বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তোলার চক্রান্ত করা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে হোয়াইট হাউজ।’’ প্রেসিডেন্ট সালেহ যখন একথা বলছিলেন তখন হয়তো দর্শকদের অনেকে আগের বৎসরই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তার নেয়া ৩০ কোটি ডলারের সাহায্য গ্রহণ করার কথাটি স্মরণ করছিলেন। আর আল কায়েদার চর বানিয়ে সাধারণ ইয়েমেনিদের অনেককে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সোপর্দ করার বিষয়টিও ভাবছিলেন। এক সময় প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী ছিলেন। ১৯৭৮ সালের দিকে তিনি উত্তর ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের উত্তর ও দক্ষিন ইয়েমেন একীভূত হওয়ার পর পুনরায় তিনি একীভূত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে তিনি আবার ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দলহীন সে নির্বাচনে তিনি ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির মাধ্যমে জয়লাভে সমর্থ হন বলে মনে করা হয়। ইয়েমেনের এ ¯ে^চ্ছাচারী শাসক স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর সোভিয়েতপন্থী দক্ষিণ ইয়েমেনকে উত্তরের সাথে একীভূত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ইয়েমেনবাসীর আশা ছিল তার নেতৃত্বে ইয়েমেন একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কিন্তু জনগণের সে আশা তিনি পূরণ করতে পারেননি। দুর্নীতি ও দারিদ্র্য গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। দুর্নীতি নির্মূলের পরিবর্তে তিনি এর প্রতিবাদ বিক্ষোভকে কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করছেন। তিনি নিজ দেশের প্রতিবাদী বিক্ষোভকারীদের দমনের জন্য অন্য দেশের সৈন্য ডেকে আনছেন। বিক্ষোভ দমনে বিমান হামলা চালিয়েছেন। আর ¯^ীয় ক্ষমতা স্থায়ী করতে আমেরিকান সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে সামিল হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসরদের সন্তুষ্ট করে নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করতে চেয়েছেন ঠিকই কিন্তু ইয়েমেনিদের ক্ষোভ দূরীভূত করার জন্য প্রেসিডেন্ট সালেহ তেমন কিছুই করেননি। মিসর ও তিউনিসিয়া থেকে ইয়েমেনের অবস্থা কিছু দিক থেকে আলাদা আবার কিছু কিছু দিকে সাদৃশ্য রয়েছে। ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি ৮০ লাখ এবং মোট জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ সুন্নি ও ৪৬ শতাংশ হলো শিয়া। জনবিন্যাসের এ বাস্তবতার নিরিখে সালেহবিরোধী বিক্ষোভ একেবারে প্রবল আকার ধারণ করেনি। তবে বাহরাইনের মতো শিয়ারা সরকারের বিপক্ষে আর সুন্নিরা সরকারের পক্ষে এমনটিও নয়। অধিকতর ¯^াধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবিতে দু’পক্ষ একসাথে বিক্ষোভ শুরু করায় প্রেসিডেন্ট সালেহর পতন অনিবার্য হয়ে পড়। ওই বছর গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ। মোটের ওপর শান্তিপূর্ণ সেই গণবিক্ষোভে এবং পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংলাপে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় হুতিরা। তাদের আসল দাবি ছিল আঞ্চলিক ¯^ায়ত্তশাসন ও দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জোরদার করা। কিন্তু তাদের সেই চাওয়া পূরণ না হওয়ায় সুন্নিপন্থী প্রেসিডেন্ট হাদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাকে উৎখাত করতে উঠে পড়ে লাগে হুতিরা। তাদের সাথে হাত মেলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে গত বছরের শেষদিকে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অনেক বড় বড় হামলা চালায় আল কায়েদা ইন এ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি)। জঙ্গি সংগঠনটি প্রেসিডেন্ট হাদি ও হুতি উভয়পক্ষের বিরোধী। সবশেষে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আবির্ভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। একিউএপিকে উৎখাতে তারা উঠে পড়ে লাগে। সেই হিসেবে হুতিরা আইএসের সহযোগিতা পায়। এ অবস্থায় গত সেপ্টে¤^রে রাজধানী সানায় সরকারি সদর দফতররসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে নেয় হুতি বিদ্রোহীরা। জানুয়ারিতে সানার পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তাদের হাতে। এরপর থেকে কার্যত গৃহবন্দী ছিলেন প্রেসিডেন্ট হাদি। গত মাসে তিনি রাজধানী ছেড়ে এডেনে আশ্রয় নেন। এডেন থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার উত্তরের আল-আনাদ বিমান ঘাঁটি দখল করে নেয় হুতি যোদ্ধারা। এরপর এডেনে হাদির প্রাসাদে বিমান হামলা এবং এডেনের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের অনুগত পুলিশ বাহিনীর দখলে চলে যাওয়ার পর নিরাপদ স্থানে চলে যান হাদি। এরপর বৈধ সরকার রক্ষার জন্য হাদির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন গাল্ফ জোট। তাদের নেতৃত্বে বিমান হামলা শুরু হয়েছে। স্থল পথে হামলার জন্যও অনেকে প্রস্তুত রয়েছে। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বুহু মানসুর আল-হাদির সমর্থনে শিয়া উপজাতি হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় সুন্নী রাষ্ট্রগুলোর বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনে সৌদি আরবের এই হস্তক্ষেপ বিপজ্জনক’ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। অবিল¤ে^ এ হামলা বন্ধেরও আহŸান জানিয়েছে ইরান। কিন্তু শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে হুথিদের প্রতি অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। তবে দেশটি বরাবরই তা অ¯^ীকার করে আসছে। হুথি বিদ্রোহীদের নেতা আবদুল মালিক আল-হুথি এই অভিযানকে ‘অবিচার’ হিসেবে অভিহিত করে ‘অপরাধমূলক আগ্রাসন’ মোকাবেলার জন্য তার সমর্থকদের আহŸান জানান। অন্যদিকে, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন হামলার সমর্থন জানিয়েছেন আরব লীগের প্রধান নাবিল আল-আরাবি। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যও এ হামলায় সমর্থন জানিয়েছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এই হামলায় যোগ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, মরক্কো, জর্ডান, কাতার ও সুদান।

প্রসঙ্গত, চার বছর আগে আরব বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তুলেছিল আরব বসন্ত নামে পরিচিত হয়ে ওঠা গণ-আন্দোলন। ওই গণাজাগরেণের সময়ই ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ওই ঘটনার পর যেসব দ্ব›দ্ব-সংঘাত এই অঞ্চলকে একে একে গ্রাস করেছে, তা মূলত কট্টর সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যে লড়াই। মুসলিমদের দুই বড় গোষ্ঠীর এই সা¤প্রদায়িক দ্ব›দ্বই এখন এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর এই সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছে আঞ্চলিক দুই প্রভাবশালী দেশ- সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব ও শিয়াপ্রধান ইরান। এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে যা-ই হোক, ইয়েমেন দৃশ্যত পরিণত হয়েছে এই দুই আঞ্চলিক শক্তির ছায়া রণক্ষেত্রে। গোষ্ঠীদ্ব›েদ্বর বলি হওয়া এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও বাহরাইন। ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, এক দশকের বেশি আগে এমন খবর প্রচার হওয়ার আগে থেকেই তেহরান-রিয়াদ দ্ব›দ্ব দৃশ্যমান। পারমাণবিক বোমা বানাতে পারলে ইরানের এই অঞ্চলের অদ্বিতীয় পরাশক্তি হওয়ার দীর্ঘদিনের ¯^প্ন পূরণ হবে। এতে করে দেশে দেশে ১৯৭৯ সালে সংগঠিত ‘ইরানের ইসলামি বিপ্লবের’ মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়া আরও জোরদার করা যাবে। আর ¯^ভাবতই ইরানের পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার প্রচণ্ড বিরোধী সৌদি আরব। এটি উপসাগরীয় এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী সুন্নি দেশ। ফলে এই অঞ্চলের একটি দেশে সংঘাত মানেই সেখানে রিয়াদ ও তেহরানের প্রভাব খাটানোর আরেকটি প্রতিযোগিতা; আরেকটি ছায়াযুদ্ধ। এই তিক্ত বিরোধের নজির বর্তমানে ইয়েমেনে যেমনটি অনুভব করা যাচ্ছে, সে রকম আর অন্য কোথাও হয়নি।আরব বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র এই দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবের প্রভাববলয়ের অধীনে। বেশির ভাগ আরবই দেশটিকে সৌদি আরবের পেছনের উঠান’ বিবেচনা করে। নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ ও উত্তর ইয়েমেন একীভূত হওয়া থেকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর দেশের একচ্ছত্র নেতা হওয়া পর্যন্ত সবখানেই রিয়াদ ইয়েমেনের রাজনীতিতে কর্তৃত্ব দেখিয়েছে। সালেহর শাসনামলেও সৌদি প্রভাব অক্ষুণ্ন ছিল। তবে অন্তত দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা গত এক দশকে পরিস্থিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। তা হচ্ছে আল-কায়েদা ইন দি অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি) ও ইরানের মদদপুষ্ট শিয়া হুথিদের উত্থান।একিউএপি প্রয়াত সৌদি ভিন্নমতাবল¤^ী ওসামা বিন লাদেনের প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার শাখা। আগের তুলনায় শক্তি হারিয়ে ফেলা আন্তর্জাতিক সংগঠন আল-কায়েদার এই শাখাটিই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। একিউএপি ইয়েমেনে জাতিগত ও সামাজিক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় দুটি শিয়া মসজিদের বাইরে সৌদি আরবের হামলার আগে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার দায় ¯^ীকার করেছে আরেক সুন্নী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তুলনামূলকভাবে নতুন এই জঙ্গিগোষ্ঠীটির সঙ্গে একিউএপির দ্ব›দ্ব থাকলেও উভয়েই সুন্নি। অনেকেরই সন্দেহ, প্রতিবেশী ইয়েমেনে তৎপরতা চালাতে আইএসকে সহায়তা দিচ্ছে সৌদি আরব। যদিও দেশটি আইএসবিরোধী মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছে। তবে বিশেষ করে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বুহু মানসুর আল হাদি সানা থেকে দক্ষিণের এডেন শহরে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাঁর বাসভবনে হুতিদের বিমান হামলার সঙ্গে ওই আত্মঘাতী হামলার সময়টা মিলে যাওয়ায় সন্দেহটা হালে পানি পাচ্ছে। অতীতে বাহরাইনের সুন্নি নেতৃত্বাধীন রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইরান-সমর্থিত গণবিক্ষোভ দমনে সেনা পাঠাতে দেরি করেনি সৌদি আরব। ইয়েমেনেও সৌদিরা সেই একই পথে হাঁটলো। ফলে তেহরান-রিয়াদ দ্ব›দ্ব যে এখন আরও প্রকাশ্য ও প্রকট রুপ ধারণ করলো তা বলাই বাহুল্য।আলে সৌদ শাসক গোষ্ঠী ইয়েমেনের গণ জাগরণ দমনেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন। সৌদি আরবের কাছে ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ইয়েমেনের ভৌগোলিক অবস্থান এবং সৌদি রাজার প্রতি ইয়েমেনের একনায়কের আনুগত্য সানাকে রিয়াদের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এ কারণে গত কয়েক দশকে ইয়েমেনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছে সৌদি সরকার। গণআন্দোলনে মিশরের ¯ৈ^রশাসক মুবারকের পতনের পর ইয়েমেনের গণবিক্ষোভের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন আলে সৌদ রাজা। মুবারকের পতনের ফলে সৌদি রাজা মধ্যপ্রাচ্যে নিজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রকে হারান। ফলে সৌদি আরবের দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত ইয়েমেনেও মিশরের মতো গণ আন্দোলন দেখে প্রমাদ গণেন সৌদি রাজা। ইয়েমেনেও মিশরের মতো সরকারের পতন না ঘটে সেজন্য পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের কাঠামোর আওতায় আপোষে আলী আব্দুল্লাহ সালেহকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তাব উত্থান করে সৌদি আরব। ইয়েমেনের জনগণের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এ কৌশল অবল¤^ন করেন সৌদি রাজা। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়তে রাজী হয়েও পরে বেঁকে বসেন ইয়েমেনের ¯ৈ^রশাসক আলী আব্দুল্লাহ সালেহ। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রহস্যজনক বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে সৌদি আরব চলে যান সালেহ। ¯ৈ^রশাসক সালেহর আহত হওয়ার মাধ্যমে তার প্রতি জনরোষ কমে আসবে বলে সৌদি রাজা ব্যাপকভাবে আশা করেন। কিন্তু সালেহ আহত হয়ে সৌদি আরবে চলে যাওয়ার পরও ইয়েমেনে জনরোষ কমেনি এবং জনগণ দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো প্রায় প্রতি সপ্তাহে ইয়েমেনের গণবিক্ষোভগুলোতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যে ইসলামী জাগরণ চলছে, সে সম্পর্কে সৌদি রাজার প্রতিক্রিয়াকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত সৌদি সরকার মিশরের গণআন্দোলনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং সৌদি আরবের অভ্যন্তরেও গণবিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয়ত প্রতিবেশী দেশগুলোর আন্দোলন দমনের জন্য সৌদি আরবের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আরব দেশগুলোর গণআন্দোলন দমনের জন্য সৌদি সরকার বাহরাইনে সেনা পাঠিয়েছে, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের মাধ্যমে ইয়েমেন সংকটের সমাধান করতে চেয়েছে এবং জর্দান ও মরক্কোকে এ পরিষদের সদস্য করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিভিন্ন আরব দেশের সরকার পতন ও গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বাদশাহদের শাসনের ভারসাম্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে সৌদি রাজার অবস্থান আর আরব দেশগুলোর কাছে নেই। তেল বিক্রির বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েও আলে সৌদি পরিবার মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে কিংবা মার্কিন নীতি বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

ইতিহাস পরিক্রমায় দেখা যাচ্ছে, ইয়েমেনের এই বিদ্বেষনির্ভর আজকের যুদ্ধের জন্ম সা¤প্রদায়িক মনোভাব থেকে। শিয়াপন্থী হুতিরা নির্বাচিত সুন্নি প্রেসিডেন্টকে মানতে নারাজ তাদের গোত্রের ¯^ার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে। এমতাবস্থায়, অন্যান্য শিয়াপন্থী রাষ্ট্র হুতিদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে আর সুন্নি আরব রাষ্ট্রগুলো হুতিদের বিপক্ষে। আর যথারীতি যুক্তরাষ্ট্র তার আরব মিত্রদের পক্ষ নিয়ে সা¤প্রদায়িক মনোভাবকে উস্কে দিয়ে যুদ্ধের গতিবেগ আরও বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। শিয়া ও সুন্নি মুসলমান ধর্মের দুটি গোত্র। গোত্রে গোত্রে বিভেদ ও সা¤প্রদায়িক মনোভাবকে পুঁজি করে নিজেরাই নিজেদের অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর করছে। এছাড়াও সেখানে বহু পূর্বেকার দ্ব›েদ্ব মেতেছে শিয়া, সুন্নি ও পার্সিয়ানরা। ইয়েমেনে শিয়া-সুন্নি সক্সঘাত সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার ঠাণ্ডা লড়াইয়ে পর্যবসিত হয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি কোথায় চলে যাচ্ছে? মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি সক্সঘাতে মুসলমানদের রক্ত ঝরলে কে লাভবান হবে? দুই প্রভাবশালী দেশের সক্সঘাতে, অর্থাৎ দ্বিজাতি সত্তা তথা শিয়া-সুন্নির সক্সঘাত ছড়িয়ে আরব ভূখণ্ডে জাতিবিনাশী সংক্রমণ মহামারী হয়ে দেখা দিলে ভবিষ্যতে তার দুর্বিনীত বিস্তার কি থামানো যাবে? এই সক্সঘাত শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে খণ্ডবিখণ্ড করে দিতে পারে বলেও কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখন শিয়া-সুন্নি দ্ব›দ্ব উসকে দিয়ে দেশটিকে ধ্বংস করারই নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রয়াস চলছে। এ জন্য দৃশ্যত ইরানকে অনেকেই দায়ী করছেন। এখনই ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ থামানো না গেলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই মারাত্মক সঙ্কটে পড়তে পারে। ইয়েমেন সঙ্কট সৌদি আরবের জন্যও উদ্বেগজনক, কারণ ইয়েমেনের সাথে রয়েছে সৌদি আরবের দীর্ঘ সীমান্ত।

আরবরাষ্ট্রের এই জাতি ও গোষ্ঠীগত সা¤প্রদায়িক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে উত্তরণের উপায় পক্ষ-বিপক্ষ বাছাই করে যুদ্ধে নামা নয়, বরঞ্চ পারস্পরিক দ্ব›দ্ব নিরসনে উদ্যোগী হয়ে মধ্যস্থতা করা, যা এ মুহূর্তে করতে পারে আরব লীগ, জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলো। নিজ দেশের মধ্যে যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, বরঞ্চ পারস্পরিক দীর্ঘস্থায়ী ব্যবধান সৃষ্টি। তাই জাতিসক্সেঘর মধ্যস্থতায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি স¤প্রদায়ের বৈধ প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সাথে হুতি ও তার মিত্রদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করাই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে সম্মান জানাতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের ন্যায্য দাবিও মেনে নিতে হবে। মুসলমানেরা এভাবে ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাতে লিপ্ত হলে দূর থেকে ইসরাইল তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবে এবং পশ্চিমা শক্তি মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রকে তাদের সুবিধা অনুযায়ী পাল্টে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে অধিকতর তৎপর হয়ে উঠবে।

  • লেখাটি ইশা ছাত্র আন্দোলন-এর দ্বি-মাসিক মুখপাত্র ‘ছাত্র সমাচার’ মে-জুন’১৫ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন