সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

ছাত্র সমাচার (জুলাই-আগস্ট ২০০৩) সংখ্যায় প্রদত্ত হযরত পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) এর সাক্ষাতকার (পুন:প্রকাশিত)

f

ছাত্রদের কোন হক দীনি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা আমি জরুরি বলে মনে করি

মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)। এক বিপ্লবী মহাপুরুষ। ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া একজন সফল ও সাহসী মুজাদ্দিদ। তিনি তাসাউফকে জিহাদমুখী আর জিহাদকে তাসাউফমুখী করেছেন। হককে হক হিসেবে গ্রহণ করা এবং তার ওপর দৃঢ় থাকা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি বাংলদেশে ইসলামী রাজনীতির স্বতন্ত্র গতিধারা সৃষ্টি করেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে আদর্শিক ধারা তৈরি করে গুণগত পরিবর্তন এনেছেন। ইসলামী রাজনীতিকে করেছেন পরিশুদ্ধ, পরিশীলিত ও গণমুখী। শায়েখ (রহ.) এর অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল- তিনি গতানুগতিক রাজনীতির বাহিরে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন চেয়েছেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তন তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য প্রয়োজন সুদূর-প্রসারী পরিকল্পনার আলোকে যথার্থ প্রস্তুতি গ্রহণ। প্রয়োজন সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করা।

তিনি ইসলামী বিপ্লবের যথার্থ প্রস্তুতি গ্রহণের লক্ষে তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- আত্মপ্রত্যয়ী, সুদূরপ্রসারী চেতনালালনকারী বিপ্লবকামী সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় শায়েখ (রহ.) আজ আমাদের মাঝে নেই। প্রায় একযুগ আগে তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন। এ প্রজন্মের অনেকে আমরা তাঁকে দেখিনি। তাঁর চিন্তাধারা কাছ থেকে উপলব্ধি করার সুযোগ পাইনি। শায়েখ (রহ.) এদেশে ইসলামী বিপ্লবের ভীত রচনা করেছেন। ইসলামী রাজনীতির স্বতন্ত্র গতিধারা তৈরি করেছেন। তিনি বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন। একজন বিপ্লবপ্রত্যাশী কর্মী হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই তাঁর চিন্তাধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করতে হবে। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বিশ্ব ইসলামী রাজনীতির অন্যতম দিকপাল যুগের মুজাদ্দিদ মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) এর জীবনাদর্শ নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার লক্ষে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) রিসার্চ সেন্টার এর মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে তাঁর জীবনী সংকলনের কাজ চলমান রয়েছে।

হযরত পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির উত্তাল সময়গুলো অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার সাথে অতিক্রম করেছেন। তাঁর সেদিনের সেই ঐতিহাসিক বিচক্ষণ ও সাহসী ভূমিকার ফলে ইসলামী আন্দোলন তার নিজস্ব গতিপথে টিকে ছিল। আল্লাহ না করুন! তিনি যদি না থাকতেন অথবা উত্তাল সমুদ্রের বিক্ষুদ্ধ তরঙ্গ সামলিয়ে দক্ষ নাবিকের ন্যায় সতর্ক প্রহরায় এ তরীকে তীরে না ভেড়াতেন, তাহলে বস্তুবাদী রাজনীতির প্রবল ¯্রােতে ইসলামী বিপ্লবের এ দুঃসাহসী পথচলাও হয়তো হারিয়ে যেত! লাখো বিপ্লবীর স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হতো! আজ এদেশের আকাশে ইসলামী বিপ্লবের যে সূর্য দীপ্তমান, তা হয়তো মেঘের আড়ালে হারিয়ে যেতো!

হযরত পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) ছাত্র সমাচার জুলাই-আগস্ট ২০০৩ সংখ্যায় এক ঐতিহাসিক সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন। সাক্ষাতকারটিতে তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইসলামী রাজনীতির গতিপথ, প্রিয় সংগঠন ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন। দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা।

এখন ২০১৭ সাল। এক যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অনেক পানি গড়িয়েছে। দেশের রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক ভাঙ্গা-গড়া হয়েছে। কিন্তু কী আশ্চর্য! শায়েখ (রহ.) আজ থেকে একযুগ আগে যা বলেছিলেন আজ তা জ্বলন্তবাস্তব হয়ে আমাদের সামনে হাজির। সাক্ষাতকারটি একযুগ আগের হলেও তার প্রাসঙ্গিকতা শেষ হয়ে যায়নি। বরং বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য আমরা সাক্ষাতকারটি কিছুটা পরিমার্জন করে পুনঃপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমাদের প্রত্যাশা, এ সাক্ষাতকার ইসলামী বিপ্লবের জানবাজ কর্মীদের আত্মা ও চিন্তার খোরাক জোগাবে। ইসলামী হুকুমতের আকাক্সক্ষাকে আরো তীব্র করে তুলবে। ঘুমন্ত চেতনাকে জাগিয়ে তুলবে। হৃদয়ে বিপ্লবের ছাই চাপা অঙ্গারকে দাবানলের মতো প্রজ্বলিত করবে। সর্বোপরি ইসলামী বিপ্লবের কঠিন, দুর্গম ও বিপদসংকুল দীর্ঘ পথে রাহনুমায়ী করবে। অন্ধকারে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। কর্তব্যবোধে সবাইকে নতুনভাবে উজ্জিবীত করবে, ইনশাআল্লাহ।
-সম্পাদক

ছাত্র সমাচার : আপনার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
পীর সাহেব চরমোনাই : চরমোনাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পরে চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া মাদরাসা থেকে ১৯৫৬ সালে ফাযিল পাস করি। ১৯৫৭ সনে লালবাগ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করি।

ছাত্র সমাচার : আপনার শিক্ষকদের মধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তাঁদের নাম বলবেন কি?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমার যারা ওস্তাদ ছিলেন, যাদের সংস্পর্শে আমার জীবন ধন্য তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-
১. হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী [সদর সাহেব হুযুর (রহ.)]
২. হযরত মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)
৩. শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক
৪. ঢাকাইয়া হুযুর নামে খ্যাত মাওলানা আবদুল মজিদ (রহ.)
৫. মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ (রহ.) ও
৬. মুফতি আবদুল মুঈজ হুযুরসহ অনেকে যাদের নিকট আমি চিরঋণী।

ছাত্র সমাচার : আপনি যখন অধ্যয়নরত ছিলেন আর এখন যারা অধ্যয়নরত আছে, তাদের মধ্যে আপনি কেমন পার্থক্য লক্ষ্য করছেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমরা যে সময় মাদরাসায় অধ্যয়নরত ছিলাম তখনকার সময়ে ছাত্ররা আমলের দিক দিয়ে যেমন অগ্রগামী ছিল, ঠিক লেখা-পড়ার প্রতিও ছিল অত্যন্ত মনোযোগী। আর এখনকার মাদরাসার সিংহভাগ ছাত্রদের মধ্যে আমলের খুবই অভাব দেখা যায়। অনেক মাদরাসার ছাত্রকে দেখলে বুঝা যায় না, সে মাদরাসার ছাত্র নাকি কোন স্কুল-কলেজের ছাত্র। নেক আমল যেমন ছাত্ররা ছেড়ে দিয়েছে, তেমনিভাবে কিতাবের সাথেও ছাত্রদের সম্পর্ক অনেকাংশে কমে গেছে।

ছাত্র সমাচার : এখনকার ছাত্রদের জন্য গ্রহণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
পীর সাহেব চরমোনাই : হ্যাঁ, অবশ্যই বলব। বর্তমানে যারা ছাত্র বা যুবক তাদের বিশেষ করে পাশ্চাত্য সভ্যতার কৃষ্টি-কালচার, লেবাস-পোশাক, আচার-আচরণসহ ইসলামবিরোধী বা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এমন যা আছে, তার সবকিছু বর্জন করা জরুরি। ছাত্র-যুবকসহ আমাদের সকলকে একথা বিশ্বাস করতে হবে, মুসলমানের উন্নতি একমাত্র ইসলাম ছাড়া অন্য কোথাও নেই। ইসলামি তাহযিব-তমদ্দুনের মধ্যেই একমাত্র মুসলমানের কল্যাণ নিহিত।

ছাত্র সমাচার : ছাত্রজীবনে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বা না হওয়া সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : একসময়ে বুযুর্গানে দীন ছাত্রদেরকে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হতে নিষেধ করতেন এবং সে নিষেধের যৌক্তিকতাও ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম ও দেশের বিরুদ্ধে যে গভীর চক্রান্ত চলছে এবং চক্রান্তকারীরা দেশের ভবিষ্যত কোমলমতি ছাত্রদের মধ্যে যেভাবে ইসলাম ও দেশ সম্পর্কে বিভ্রান্তির বেড়াজাল সৃষ্টি করছে, এর মোকাবেলা এবং এসকল চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতনতার জন্য বর্তমান সময়ের ছাত্রদের কোন হক দীনি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থাকা জরুরি বলে আমি মনে করি। এ ছাড়াও অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সকল বিপ্লব বা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের একটি গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিলো। ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মাঠে নামলে সফলতা ছাড়া কখনও ঘরে ফিরে নি। ছাত্রসমাজের এ-ইতিহাসই ইসলাম ও মুসলমানের বর্তমান দুঃসময়ে ইসলামি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার দাবি রাখে। তবে ছাত্রদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, সংগঠনে সম্পৃক্ততার কারণে যেন তারা মূল থেকে অর্থাৎ পড়ালেখায় গাফেল হয়ে না যায়।

ছাত্র সমাচার : অধ্যয়নকালীন কি কোন ছাত্রসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : না, প্রচলিত কোন ছাত্র-রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে আমরা ‘নাসিরে মিল্লাত’ নামে একটি ছাত্রসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম এবং সে সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি। দেশব্যাপী বিস্তৃত এ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছি।

ছাত্র সমাচার : আপনার কর্মজীবন কখন, কিভাবে শুরু করেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ১৯৫৭ সালে দাওরায়ে হাদিস ফারেগ হয়ে চরমোনাই মাদরাসায় হাদিসের দরসদানের মাধ্যমে আমার কর্মজীবন শুরু হয় এবং এক নাগাড়ে ১৫বছর এখানে হাদিসের খেদমত করেছি।

ছাত্র সমাচার : আপনি বাংলাদেশে চিশতিয়া সাবেরিয়া তরিকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তো কখন থেকে, কিভাবে এ-তরিকার সাথে সম্পৃক্ত হলেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ছাত্রজীবন থেকেই এ তরীকার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমার শায়েখ তথা বাবাজান কর্তৃক বায়আতের ইযাযত লাভ করি। বাবাজানের ইন্তিকালের আগের বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় যখন তিনি আর সফর করতে পারছিলেন না, তখন থেকে তাঁর নির্দেশে আমি দীনি দাওয়াতের সফর করা শুরু করি।

ছাত্র সমাচার : একজন আলেম হয়ে আবার মুরিদ হওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : আলেম আর গাইরে আলেম বলে কথা নয়। পীরের মুরিদ হওয়া এবং পীর সাহেবের দেয়া সবক আদায় করা প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। কারণ ইলমে যাহের শিক্ষা করার জন্য যেমন ওস্তাদের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনিভাবে ইলমে বাতেন শিক্ষা করার জন্যও ওস্তাদের প্রয়োজন রয়েছে। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুল (সা.)- এর নিকট থেকে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। আবার হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত ওমর ফারুক (রা.)-সহ খিলাফতের দায়িত্বে মনোনীত অন্যান্য সাহাবাদের নিকটও সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম বায়আত গ্রহণ করেছিলেন।

ছাত্র সমাচার : আপনি একজন পীর হয়ে রাজনীতিতে এলেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমি যে রাজনীতি করি, এটা আমার ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক মানুষকেই খেলাফতের দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহপ্রদত্ত এই খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে হলে ইসলামী রাজনীতি বা ইসলামী আন্দোলন করতেই হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করাতো কোন ঐচ্ছিক বিষয় নয় যে, একজন মুসলমান হয়ে আমি এ থেকে দূরে থাকব। বরং ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বা ইসলামকে অপরাপর মতবাদের ওপর বিজয়ী করার রাজনীতি করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। এক্ষেত্রে পীর, আলেম, ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মাঝে পার্থক্য নেই। দায়িত্ব অবহেলা করলে সকলেই সমানভাবে দায়ী হবে। অনেকে ইসলামী রাজনীতিকে প্রচলিত ধারার রাজনীতির সাথে তুলনা করে গুলিয়ে ফেলে। এ থেকেই মূলত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আসলে ইসলামে রাজনীতি কোন নতুন বিষয় না। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর নবুওয়তী জিন্দেগীতেই রয়েছে শ্রেষ্ঠ রাজনীতির সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বোত্তম রাজনীতিবিদ। প্রিয় নবী (সা.) নিজে রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, গণসংযোগ করেছেন। ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষে বহু রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ইসলামের প্রথম চারখলিফা সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। অতএব যারা বলে ইসলামে রাজনীতি নেই, হয়তো ইসলাম সম্পর্কে তাদের পূর্ণাঙ্গ ধারাণা নেই অথবা প্রকৃত ইসলামের সাথে তাদের বিদ্বেষ রয়েছে।

ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আপনার অবস্থান কী ছিল?
পীর সাহেব চরমোনাই : ‘স্বাধীনতার বিরোধী ছিলাম একথা প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতেও রাজি আছি’ আমার এ বক্তব্যই সাক্ষ্য দেয় স্বাধীনতা আন্দোলনে আমার অবস্থান কি ছিল।

ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৩২বছর অতিক্রান্ত হতে চলছে, গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা কতটুকু পূরণ হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জত ও নির্যাতিত মজলুম মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল দেশবাসী এখনও পায় নি। সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ধর্মীয় স্বাধীনতা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের দলবল একমাত্র স্বাধীন থাকে, বাকী সকলেই থাকে পরাধীন। স্বাধীনতার সুফল যদি পেতে হয়, তবে দেশ পরিচালনায় সৎ, যোগ্য, খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রয়োজন। ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত দেশের জনগণ স্বাধীনতার সুফল পাবে না এবং প্রচলিত অবস্থাকে বহাল রেখে দেশের উন্নয়ন করাও সম্ভব নয়।

ছাত্র সমাচার : স্বাধীনতার সুফল পেতে বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ব্যতীত স্বাধীনতার সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে এমন খাঁটি ইসলামি সরকার উপহার দিতে হবে যাদের কথায় ও কাজে মিল রয়েছে। সরকারের কর্তব্য হলো, মানবরচিত সংবিধান পরিবর্তন করে কুরআন-সুন্নাহর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা। সকল রাজনৈতিক দলই যেহেতু জনগণের কল্যাণ ও দেশের উন্নতির কথা বলে, সেহেতু স্থিতিশীল সরকার ও উন্নত রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য সকলকে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

ছাত্র সমাচার : জামায়াত বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ ইসলামি রাজনীতি (তাদের ভাষায়) করে আসছে। আপনি কি কখনো তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : না, আমি কোনোদিনই জামায়াতের তথাকথিত ইসলামি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না।

ছাত্র সমাচার : একজন আলেম হয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত হলেন না কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের সকল হক্কানি আলেম-ওলামা জামায়াত ও এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদি সাহেব সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখেছেন যে, এ দল মুখে ইসলামের কথা বললেও কর্মকাণ্ডে ও আকিদায় তার বিপরীত। এজন্য আমি জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত হইনি।

ছাত্র সমাচার : আপনি জামায়াত সম্পর্কে বলেছেন তারা ইসলামি দল নয়। আপনার যুক্তি কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : জামায়াতে ইসলামীর আকিদার মধ্যে রয়েছে- তারা সাহাবাদেরকে সত্যের মাপকাঠি বা মিয়ারে হক মনে করে না। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব সাহাবা (রা.) সত্যের মাপকাঠি। তোমরা তাদের মধ্যে যেকোনো একজনের অনুসরণ ও অনুকরণ করলেই সফলকাম হবে।’ ‘যে আমার সাহাবাদের সমালোচনা করবে সে আমার সমালোচনা করল, যে আমার সমালোচনা করল সে আল্লাহর সমালোচনা করল।’ ‘এমন সমালোচনাকারীদের সাথে তোমরা কোন আত্মীয়তার সম্পর্কেও করিও না।’ জামায়াত আশারায়ে মুবাশারা, হযরত মুয়াবিয়া (রা.)-সহ অনেক সাহাবাদের ব্যাপারে জনমনে কুধারণা সৃষ্টি করছে যা মুসলমান হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। এ কারণেই আমি চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলাম, জামায়াত কোন ইসলামি দল নয়। যদি তারা প্রমাণ করতে পারে- তারা ইসলামি দল, তবে আমি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে জামায়াতে যোগ দেব। কিন্তু তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি। একবার বাগেরহাটের মোংলায় বাহাসে বসার জন্য আমার নিকট থেকে ১৫০টাকার স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর নিয়েছিল কিন্তু তৎকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আজম সাহেব স্বাক্ষর দিতে এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের এই দুর্বলতাই প্রমাণ করেছে আমার দাবি সত্য।

ছাত্র সমাচার : নেজামে ইসলাম পার্টি ছেড়ে খেলাফত আন্দোলন গঠনের কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে তৎকালীন সময়ে সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ, বুদ্ধিজীবী, ইসলামি চিন্তাবিদগণ হযরত হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলন গঠন করেন।

ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে আপনার অবস্থান ছিল কোন পর্যায়ে?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির এবং হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম।

ছাত্র সমাচার : হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নির্বাচনে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা ইসলামি সংগঠনগুলোর সমর্থন কতটুকু পাওয়া গেছে?
পীর সাহেব চরমোনাই : হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নির্বাচনে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সমর্থন ছিল। কিন্তু জামায়াত নিজেদেরকে ইসলামি সংগঠন হিসেবে পরিচয় দিয়েও হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-কে সমর্থন দেওয়া তো দূরের কথা, বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর বিরোধিতা করেছে সবচেয়ে বেশি।

ছাত্র সমাচার : হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে সে সময়ে আপনাকে কেমন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে?
পীর সাহেব চরমোনাই : সে সময় আমাকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। এমনকি তৎকালীন সময়ে ক্ষমতাসীন একমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি নির্বাচন থেকে পিছপা না হলে চরমোনাই মাদরাসার মঞ্জুরি বাতিল করা হবে। কিন্তু এ রকম বিভিন্ন হুমকি-ধমকির প্রতি কর্ণপাত না করে দীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হযরত হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)-এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। কর্মীদেরকেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সাথে আপনি সম্পৃক্ত হলেন কীভাবে?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের পূর্বপর্যন্ত নেজামে ইসলাম পার্টিতে ছিলাম। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সর্বপ্রথম শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক, বায়তুশ শরফের পীর সাহেব মাওলানা শাহ আবদুল জব্বার, মাওলানা সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল-মাদানী, মাওলানা ব্যারিস্টার কোরবান আলী, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী প্রমুখরা আমাকে সাথে নিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন। সাক্ষাৎকারে তা সম্ভব নয়। তবে সংক্ষেপে বলবো, আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সকল প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন, ঠিক সেই মুহূর্তে সাঈদী সাহেব উধাও। অনেক খোঁজাখুজি করে জানা যায়, জামায়াত নেতা গোলাম আজম সাহেবের বাসায় তিনি অবস্থান করছেন। এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা আছে। এরশাদের পেটুয়া বাহিনীর হামলায় ঢাকার রাজপথ তাওহিদি জনতার রক্তে রঞ্জিত হয় এবং সেদিন শেষপর্যন্ত জাতীয় প্রেসকাবে আমাকেই ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে হয়। শুরু হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের অগ্রযাত্রা যা আজও চলছে আল্লাহর ফযলে।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী ঐক্যজোটে জামায়াতকে শরিক করা হয়নি কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামী ঐক্যজোটের যারা শরিক দল ছিলেন তাঁদের সকলেই একমত হয়েছিলেন, জামায়াত কোন ইসলামি দল নয়। সে জন্যই জামায়াতকে ইসলামী ঐক্যজোটে শরিক করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নি। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ছাড়া যারা সেদিন জামায়াতের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা সকলেই এখন স্বার্থের ধান্ধায় জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় চারদলীয় জোটে আছেন।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী ঐক্যজোট থেকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বেরিয়ে এল কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইসলামী ঐক্যজোটে শরিক হয়েছিল ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, কোন নারীর নেতৃত্বাধীন জোটে অংশগ্রহণের জন্য নয়। আমরা যখন দেখি যে, ইসলামী ঐক্যজোট মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত ব্যতীত বিনাশর্তে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে অংশ নিয়েছে, তখনই আমরা এই জোটের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত হই। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা বলেছিলাম, ইসলামের স্বার্থ ছাড়া আমরা কোন জোটে যাব না। আমি যা বলি তা-ই বিশ্বাস করি। আমি ইসলামকেই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করি। অতএব ইসলামকে ছোট করে আমি কারো সাথে আপোষ করতে পারি না। এতে যদি আমার সাথে কেউ না থাকে, আল্লাহর ওপর ভরসা করে আমি একা চলব।
আসল ব্যাপার হলো, ইসলামী ঐক্যজোটের কিছু নেতার হটকারী সিদ্ধান্ত আমরা না মেনে নেয়ায়, আমাদের সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের নৈতিক মানোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহর রহমতে এদেশে আমরা ইসলামের পক্ষে একটি স্বচ্ছ ও শক্তিশালী গতিধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।

ছাত্র সমাচার : গত নির্বাচনে (২০০১ সালের নির্বাচন) আপনি বলেছিলেন আওয়ামী লীগের বিপরীতে একটি ব্যালট-বাক্স হবে। কিন্তু নির্বাচনে দেখা গেছে আপনারা আলাদা জোট করেছিলেন। এর কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমরা একটি ব্যালট বাক্স করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দও আমাদের সাথে বৈঠক করেছেন। আমরা তাদেরকে বলেছি, আমাদের মূল দাবি ক্ষমতা নয়। আমাদের মূল দাবি হচ্ছে ইসলামের স্বার্থ। আপনারা ক্ষমতায় গেলে ইসলামের কোন একটি দাবি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করলে আমরা আপনাদের সাথে নির্বাচনী জোটে অংশ নিতে পারি। বিএনপি আমাদের এই শর্ত মেনে নিতে রাজি হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে একদল ক্ষমতালোভী আলেমদের নিঃশর্ত সমর্থন আমাদের এই তৎপরতাকে ব্যাহত করে। এই জোটে ইসলামের কোন স্বার্থ না থাকায় আমাদের পক্ষে জোটে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কতিপয় লোক চক্রান্ত না করলে এবং বিএনপি আমাদের শর্ত মেনে নিলে নির্বাচনে বাক্স একটিই হত।

ছাত্র সমাচার : সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাথে জোট গঠন করলেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : ক্ষমতায় গেলে ইসলাম, দেশ ও মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন কর্তৃক ঘোষিত ৮ দফা বাস্তবায়নের ওয়াদা করায় আমরা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সাথে জোট করি।

ছাত্র সমাচার : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ কাক্সিক্ষত ফলাফল লাভ করতে না পারার কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : দেশের জনগণের নিকট ইসলামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝাতে সক্ষম হয়নি বিধায় কাক্সিক্ষত ফলাফল লাভ করা যায়নি।

ছাত্র সমাচার : আগামী দিনে কোন জোট বা ফ্রন্ট করার চিন্ত আপনার বা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আছে কি?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমি বা ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইসলামের স্বার্থ ছাড়া অতীতে কোন জোট বা মোর্চায় অংশগ্রহণ করেনি, আগামী দিনেও ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত কোন জোট বা মোর্চায় শরিক হবার পরিকল্পনা আমাদের নেই। ইসলামি নিয়ম-নীতির ওপর অবিচল থেকে দীনের কোন স্বার্থ দেখলে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

ছাত্র সমাচার : বিগত সরকারগুলোর চেয়ে বর্তমান ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জোট সরকারের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : আমি এখন পর্যন্ত যা দেখেছি, আওয়ামী লীগ-বিএনপি কেউ ইসলামের পক্ষের নয়। উভয়ই ইসলামের দুশমন, কেউ প্রকাশ্যে দুশমনি করে আবার কেউ গোপনে দুশমনি করে। ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকার ধোঁকা দেয়ার জন্যই ইসলামি মূল্যবোধের কথা বলছে।

ছাত্র সমাচার : ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী সরকারের নিকট জনগণের প্রত্যাশা কী? সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কতটুকু সক্ষম হয়েছে?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী জোট-সরকারের নিকট জনগণের প্রত্যাশা ছিল- সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ বন্ধ করা, কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা, ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিল করা, ইসলামের নামে যারা ভ-ামি করছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের ঈমান-আকিদা হেফাজতের ব্যবস্থা নেয়া, ইসলামি কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ব্যাপক প্রচলন করা, নাস্তিক, মুরতাদ ও ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে সংসদে ব্লাসফেমি আইন পাস করা। সর্বোপরি ইসলামী শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনাই ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী জোটসরকারের নিকট জনগণের দাবি। ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসীর দাবিদার সরকার প্রকৃতপক্ষে দেশের ৯০% মুসলমানের প্রত্যাশা পূরণে স¤পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ছাত্র সমাচার : আপনি কেন সবসময় নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : এটাতো আমার কথা নয়; বরং আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর হুকুম। এ ব্যাপারে আমি চুপ থাকলে তো আল্লাহর কাছে অপরাধী হয়ে যাব। আর অন্যায় ও অনিয়ম জাতীয়ভাবে হলে তো তার প্রতিবাদও জাতীয়ভাবেই করতে হয়। নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে শুধু আমি একাই বলি; এমন নয়। বরং এদেশের সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরামই নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। আমি যেহেতু রাজনৈতিক ময়দানেও কাজ করি, এ জন্য এ প্রসঙ্গে আমার কথাগুলো প্রচার হয় বেশি। কিন্তু এ ব্যাপারে এদেশের সকল হক্কানী ওলামায়ে কেরাম আমার সাথে একমত আছেন। এখন যেসব আলেমরা বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তারাও কিন্তু একসময় নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলেছেন। সাঈদী-নিজামী সাহেবরাও বলেছেন। শ্রদ্ধেয় শায়খুল হাদিস সাহেব ও আমিনী সাহেবরা তো অল্প কিছুদিন আগেও নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তারা যে এখন নারী নেতৃত্বকে জায়েজ মনে করেন; এমন হয়তো নয়। কিন্তু কেন তারা এখন নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বলছেন না বা একে বরণ করে নিয়েছেন, এর উত্তর তারাই দেবেন। আমিতো এর কোন যুক্তি খুঁজে পাই না। নারী নেতৃত্বকে মেনে নিয়ে আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে পারব, এমন ভরসাও পাই না। বিএনপিতে তো বেগম জিয়ার চেয়ে যোগ্য লোকের বোধ করি অভাব নেই। বিএনপির অনুগামী ইসলামপন্থীরা এ ব্যাপারে কোন রকম ওজর পেশ করেছেন বলেতো আমি শুনিনি। এতে নারী নেতৃত্বের প্রতি তাদের স্বতঃস্ফুর্ততাই প্রমাণিত হয়। এটা ইসলামের জন্য কী করে কল্য্যাণকর হতে পারে, তা আমার বুঝে আসে না। আল্লাহর রাসূল (সা.) যে বিষয়ে অভিশাপ দিয়েছে, একে তো আমরা নেয়ামত মনে করতে পারি না।

ছাত্র সমাচার : দেওয়ানবাগির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : দেওয়ানবাগি নিজেকে পীর দাবি করে তার বিভিন্ন পুস্তক, পত্র-পত্রিকায় আল্লাহ, রাসুল (সা.), সাহাবা, কুরআন-হাদিস, ইসলাম ও মুসলিম সম্পর্কে যে সমস্ত কটূক্তি করেছে, তা জেনে কোন মুসলমান বসে থাকতে পারে না। এই ভণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করলে ঈমানি দায়িত্ব পালন হবে না মনে করে, ঈমানি দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে দেওয়ানবাগির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। শুধু আমরাই নই, এ আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

ছাত্র সমাচার : দেওয়নবাগিবিরোধী আন্দোলনে দেশের হক্কানি ওলামায়েকেরাম, পীর-মাশায়েখসহ সর্বস্তরের জনগণের সমর্থন থাকার পরেও এ আন্দোলন সফল না হওয়ার পেছনে কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : ভণ্ড দেওয়ানবাগিকে বিগত ও বর্তমান উভয় সরকারই পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এ কারণে তাওহিদি জনতার এ আন্দোলন সফল হচ্ছে না।

ছাত্র সমাচার : ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও কাদিয়ানিদেরকে অমুসলিম ঘোষণা না করার কারণ কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : বর্তমান চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার আলেমদের ম্যাডামকে অখুশি না করার মানসিকতা এবং ক্ষমতাসীনদের মাঝে ইসলামের প্রতি দরদ ও মহব্বত না থাকাটা এর কারণ বলে মনে করি।

ছাত্র সমাচার : ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিএনপি বাতিল করছে না, এই ব্যাপারে আপনি কিছু বলবেন কি?
পীর সাহেব চরমোনাই : এরা যে তখন শুধু ক্ষমতার জন্যেই ইসলামী জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল তা আজ স্পষ্ট হয়েছে। তার বাস্তব প্রমাণ হলো, আওয়ামী লীগের সময় যে দু’জন বিচারপতি ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, বিএনপি তথা চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে ওই দুই বিচারপতিকে বাদ দেয়া তো দূরের কথা, বরং তাদেরকে অস্থায়ী থেকে প্রমোশন দিয়ে হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়। সুতরাং প্রমাণ হয় বিএনপি সরকারও ইসলাম বিদ্বেষী ও ধোঁকাবাজ।

ছাত্র সমাচার : মালিবাগে মসজিদ রক্ষার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী চার শহিদ প্রসঙ্গে কিছু বলুন?
পীর সাহেব চরমোনাই : মালিবাগের ঘটনা জোট সরকারের ইসলাম বিদ্বেষী মানসিকতাকে জাতির সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে। সেখানে চার শহিদের মধ্যে একজন ছাত্র আন্দোলনের কর্মী এবং একজন ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করেছেন, মুসলমানের ঈমানি চেতনা কত শাণিত! আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দুই শহিদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের কবর যিয়ারত করতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্য বলে মনে করি। বাহ্মণবাড়িয়া, মালিবাগসহ সকল শহিদের স্মৃতি আমার শহিদি তামান্নাকে আরো বেশি জাগ্রত করে তোলে। আমি ইসলামী আন্দোলনের জন্য উৎসাহিত হই এবং অনুপ্রেরণা পাই। হাফেজ আবুল বাশার ও রেজাউল করিম ঢালী নামে আমাদের দুটি গোলাপ হয়তো ঝরে গেছেন। কিন্তু জীবন দিয়ে তাঁরা প্রমাণ করে গেছেন, ‘হয়তো শাহাদাত নয়তো ইসলামি হুকুমত’ এ-দাবি ছাত্র আন্দোলনের মুখেই মানানসই।

ছাত্র সমাচার : চার শহিদদের খুনিদের গ্রেফতার করে বিচার না করার জন্য কে দায়ী?
পীর সাহেব চরমোনাই : এই ঘটনা এবং এর বিচার না হওয়ার জন্য মূলত চারদলীয় জোট সরকারই দায়ী। তারা এ ঘটনার মূলনায়ক তৌফিককে বাঁচানোর জন্যই বিচার করছে না।

ছাত্র সমাচার : আমেরিকা বাংলাদেশকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে। এই ব্যাপারে কিছু বলবেন কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এদেশের মুসলিমরা মার্কিনিদের ইসলাম ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করাই কালো তালিকাভূক্তির কারণ। তবে আমরা আমেরিকার কালো তালিকাভূক্তিতে ভীত নই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা মরলে শহিদ আর বাঁচলে গাজী। এজন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও সত্য কথা বলাই আমাদের ঈমানি দায়িত্ব বলে মনে করি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুঃশাসনও এর জন্য দায়ী।

ছাত্র সমাচার : জাতিসংঘ নামক বিশ্ব সংস্থা থাকার পরেও ইসলামী জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার দাবি তুললেন কেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : বর্তমানে যে জাতিসংঘ বিশ্বে মোড়লিপনা করছে এই জাতিসংঘ আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত। আজ নিরাপদ বিশ্বের জন্য আমেরিকাই হুমকি। অতএব এই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত থাকলে প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রকেই আমেরিকার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। জাতিসংঘের ভূমিকা থাকবে ন্যায়ের পক্ষে; কিন্তু বর্তমান জাতিসংঘ ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না বলেই মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা আজ সময়ের দাবি।

ছাত্র সমাচার : ওআইসির ভূমিকা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : ওআইসি মুসলমানের পক্ষে যেই ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। লক্ষ্য করা গেছে যে, তারা মার্কিনিদেরকে তোয়াজ করে চলে। তারা তোষণনীতিতে অভ্যস্ত। তোষণনীতির দ্বারা কোন সংস্থা নিরপেক্ষ থাকতে পারে না।

ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু, দুর্বল ও পশ্চিমা ঘেঁষা।

ছাত্র সমাচার : সন্ত্রাস, মাদক, চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ এসব অপরাধের উৎস আপনার দৃষ্টিতে কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : যেই সমস্ত অপরাধের কথা বলা হল এসব অপরাধের মূল উৎস অনৈতিকতা। সন্তানদেরকে ছোটসময় ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে সৎপথে চলার ব্যবস্থা না করায় সন্তানরা নৈতিকতা হারিয়ে অনৈতিকতার দিকে পা বাড়ায়। ধর্ষণের উৎস হলো বেপর্দা ও অশ‑ীল ছায়াছবি। যা আমাদের দেশে তৈরি করা হয় অথবা পার্শ¦বর্তী রাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়।

ছাত্র সমাচার : এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্মূলে সরকার ও দেশের শান্তিকামী জনগণের করণীয় কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : সকল অপরাধের মূলোৎপাটন করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে সকল অন্যায় দূরিভূত হবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কতটুক অগ্রসর হয়েছেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের মতো মানবরচিত কোন তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে ইসলামি শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সকল আলেম-ওলামা, ইসলাীম চিন্তাবিদ ও ইসলামি দলসহ সকল স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া। শুধু ইসলামের জন্যে ঐক্য হলেই বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। ইসলামী শাসনব্যবস্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হোক তা দেশের জনগণ চায়।

ছাত্র সমাচার : আপনি যেই ঐক্যের কথা বলছেন তা কীভাবে হতে পারে, এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন কি?
পীর সাহেব চরমোনাই : মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধারণ কর।’ কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতে যদি ঐক্য হয়, তবে তা হতে পারে। এ ছাড়া কোন দল বা ব্যক্তির ভিত্তিতে ঐক্য হলে, সেই ঐক্য দ্বারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আমি ইসলামী দল, আলেম-ওলামাকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে বহুবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সকলের কাছে এ দাওয়াত নিয়ে নিজে হাজির হয়েছি। ঐক্যের প্রয়োজন আছে একথা সকলেই বলে। কিন্তু কাজের সময় লক্ষ্য করেছি, তাঁদের অনেকেই যেদিকে স্বার্থ পেয়েছেন সেদিকেই ধাবিত হয়েছেন।

ছাত্র সমাচার : ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সাথে দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামি চিন্তাবিদদের সমর্থন কতটুকু রয়েছে?
পীর সাহেব চরমোনাই : দেশের হক্কানি আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন আমাদের প্রতি আছে। কেউ কেউ প্রকাশ করতে পারছেন, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারছেন না।

ছাত্র সমাচার : দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সঠিক পরিকল্পনা, নেতৃত্বে সততা ও যোগ্যতা পূর্বশর্ত। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোতে সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্বের দীনতা প্রকট। যে কারণে অতীব সম্ভাবনাময় দেশ হয়েও আমাদের অবস্থা আজ অত্যন্ত করুণ। অসৎ নেতা-নেত্রীদের সীমাহীন দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। দেশের সামগ্রিক অবস্থা চিন্তা করেই বাস্তবতার আলোকে আমি আজ গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকল্পে ৮দফা পেশ করেছি১। ঘোষিত ৮দফার বাস্তবায়ন যত তাড়াতাড়ি হবে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ততো তাড়াতাড়ি হবে।

ছাত্র সমাচার : আদর্শ নাগরিক তৈরিতে শিক্ষাব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এক্ষেত্রে কী ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন?
পীর সাহেব চরমোনাই : বাংলাদেশে বর্তমানে যে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে, এ শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ মানুষ নৈতিকতার পরিবর্তে অনৈতিকতার দিকে অগ্রসর হয়। তাই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ‘নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও জাতীয় উন্নয়নে সার্বজনীন ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা’ প্রবর্তনের যে দাবি জানিয়েছে, সে দাবি পূরণের কোন বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। আদর্শ নাগরিক গঠনে ইসলাম ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ে নতুন পাঠ্যক্রম তৈরি করে ছাত্রদেরকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। অনৈতিক কর্র্র্মকা- প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।

ছাত্র সমাচার : বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোকের বসবাস। এখানে ইসলামী সরকার গঠন কীভাবে সম্ভব?
পীর সাহেব চরমোনাই : ইসলাম শুধু মুসলমানদের জন্য নয়; বরং সকল মানুষের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ শান্তির বিধান। ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে শুধু মুসলমানদের কল্যাণ হবে- এ ধারণা ভুল। বরং ইসলাম সকল ধর্ম, বর্ণ মানুষের কল্যাণ ও শান্তির একমাত্র গ্যারান্টি। আমি মনে করি, এদেশের সংখ্যালঘুদেরও ইসলামী শাসনের পক্ষে আন্দোলন করা উচিত। কারণ, ইসলাম ছাড়া তাদের স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষার কোন গ্যারান্টি নেই। অমুসলিমরা হল ইসলামী রাষ্ট্রের আমানত। আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রে অন্যান্য সকল ধর্মের নাগরিকরাই ছিলেন। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রেতো সকল ধর্মাবলম্বীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বের ইতিহাসে একটি শ্রেষ্ঠ কল্যাণ রাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, খেলাফতে রাশেদাসহ সকল যুগেই ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকরা শান্তির আশায় ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে।

আর ইসলামী সরকার গঠন করতে হলে সকল নাগরিক মুসলমান হতে হবে, এটা একটি অমূলক ও ভ্রান্ত ধারণা। ইসলামী সরকারের জন্য মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অপরিহার্য নয়; বরং বিশ্বের প্রতিইঞ্চি মাটিতে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আর ইসলামী সরকার হলে অমুসলিমদের অসুবিধাতো নয়ই; বরং সুবিধাই হবে বেশি।

ছাত্র সমাচার : ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠন সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
পীর সাহেব চরমোনাই : ১৯৯১ সালে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পরিপূরক শক্তি হিসেবে। যে প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, সে প্রত্যাশা পূরণে ছাত্র আন্দোলন অনেকটা সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। ছাত্র আন্দোলনের সর্বস্তরের দায়িত্বশীল ও কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলবো, শুধু প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বা ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং সুনির্দিষ্ট টার্গেটকে সামনে রেখে এ সংগঠনের জন্ম। অতএব টার্গেটে যতদ্রুত পৌঁছা যায় সে প্রচেষ্টা সকলের মাঝেই থাকা চাই। ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংশি‑ষ্ট সকলকে আন্দোলনের ময়দানে যেমনিভাবে প্রথম সারিতে থাকতে হবে, তেমনি ক্লাসের পড়ালেখায়ও অন্যান্যদের চেয়ে অগ্রগামী থাকতে হবে। ইলম, আমল, যোগ্যতা সবদিক থেকে হতে হবে সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ। সিরাতে-সুরতে হতে হবে সকলের মধ্যমণি। আল্লাহর দরবারে কবুলিয়াত অর্জন থাকতে হবে মুখ্য টার্গেট। হিম্মতে খুলুস, নিয়তে খুলুস ও তারবিয়াতে খুলুসের মাধ্যমে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীলগ্নে আমি আবারও সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আমার দেয়া সার্বক্ষণিক পালনীয় তিনটি নির্দেশ-
১. মাসে কমপক্ষে চারজনকে দীনি সংগঠনে সম্পৃক্ত করা
২. কমপক্ষে মাসের ১দিনের আয়/ব্যয় পরিমাণ অর্থ সংগঠনের ফান্ডে জমাদান এবং
৩. প্রতিদিন দুই রাকআত সালাতুল হাজত আদায় করে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সফলতার জন্য আল্লাহর কাছে রোনাজারি করা। এ তিনসবক যেন প্রত্যেকের নিয়মিত আমলে পরিণত হয়।

ছাত্র সমাচার : ছাত্র সমাচার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
পীর সাহেব চরমোনাই : ছাত্র সমাচার নিয়মিত দেখার সুযোগ হয় না। তবে মাঝেমাঝে যতটুকু দেখেছি তাতে বর্তমান সময়ের ছাত্রসমাজ ও ইসলামি আন্দোলন সংশি‑ষ্টদের জন্য পত্রিকাটিকে উপযোগী বলেই মনে হয়। ছাত্র সমাচার যেহেতু সংগঠনের একমাত্র মুখপত্র এবং এর মালিকানাও সম্পূর্ণ সংগঠনের, সেহেতু এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সকলেরই সমান প্রচেষ্টা থাকা উচিত। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্টসহ আমার সকল মুহিব্বিনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, অন্তত প্রতিসংখ্যা এককপি ছাত্র সমাচার ক্রয় করে নিজে পড়া এবং অন্যদেরকে পড়তে দেওয়া। এ পত্রিকা যত উন্নত হবে, ইসলামি বিপ্লবের সহায়ক একটি ক্ষেত্র ততবেশি মজবুত হবে, ইনশাআল্লাহ।

ছাত্র সমাচার : হযরত! শত ব্যস্ততার মধ্যে সাক্ষাতকারে আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পীর সাহেব চরমোনাই : তোমাদেরকেও অসংখ্য মোবারকবাদ। আল্লাহ তোমাদের এ প্রয়াসকে কবুল করুন।

০১
হযরত পীর সাহেব চরমোনাই (রহ.) ঘোষিত ৮দফা:

১. কোরআন-সুন্নাহ্বিরোধী কোন আইন পাস না করা এবং বিদ্যমান কোরআন-সুন্নাহ্বিরোধী আইন পর্যায়ক্রমে সংশোধন করা; সেই সাথে সাংবিধানিকভাবে এর গ্যারান্টি থাকা।
২. জাতীয় শরীয়াহ্ বোর্ড ও বিচার বিভাগে শরীয়াহ্ বেঞ্চ গঠন করা এবং আল্লাহ্-রাসূল (সা.) ও শরীয়তের বিরুদ্ধে কটুক্তিকারীদের শাস্তির বিধান করা।
৩. আদর্শ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ার লক্ষে শিক্ষার সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় দীনি শিক্ষা বাধ্যতামূলক রাখা। নতুন প্রজন্মের নৈতিকতা রক্ষাকল্পে চরিত্র বিধ্বংসী অপসংস্কৃতি বন্ধ করা।
৪. ভিক্ষাবৃত্তি একটি জাতীয় অভিশাপ, এ অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য ভিক্ষুকমুক্ত দেশ গড়া। এ লক্ষে বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকদের সরকারীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা এবং কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৫. সন্ত্রাস-দুর্নীতি একটি জাতীয় গজব। এ গজব থেকে বাঁচার জন্য সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া। এ লক্ষে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের সংশোধনের ব্যবস্থা করা; সংশোধন না হলে তাদের মূলোৎপাটন করা।
৬. বেকারত্ব একটি জাতীয় বোঝা ও অনগ্রসরতার প্রতীক। এ বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষে ব্যাপক শিল্পায়ন ও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি করে বেকারত্ব দূর করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, সার-ঔষধ ও বীজের দাম কমানো এবং গরীব কৃষকদের মাঝে সহজশর্তে ঋণ প্রদান করা।
৭. নারী সমাজের যথাযথ সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠা। সংখ্যালঘুদের সকল ধর্মীয়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী ও অধিকারের নিশ্চয়তা। সকল পর্যায়ে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সম্মানজনক বেতন-ভাতা, আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।
৮. দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জাতীয় নিরাপত্তা বিধানকল্পে সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা।

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন