সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম (সংক্ষিপ্ত বিবরণ)
আ হ ম আলাউদ্দীন

ইসলামের আবির্ভাবের বহু পূর্ব থেকেই আরব বণিকগণ বাণিজ্যের জন্য ভারত উপমহাদেশে আগমন করে। এ উপমহাদেশে ইসলামের আগমন ঘটেছে মূলত তিন ভাবে ক) ইসলাম প্রচারক বুজুর্গ, সূফী-সাধকদের মাধ্যমে খ) আরব বণিকদের মাধ্যমে, গ) মুসলিম শাসকদের মাধ্যমে।
আরব বণিকরা মালাবার হয়ে চীনের পথে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করতেন। এ উপমহাদেশের আদি নাম সিন্দ ও হিন্দ আরবদেরই দেয়া নাম। জানা যায় আরবের সাবা কওমের নামানুসারে নামকরণকৃত শহর সাবাউর (উর অর্থ শহর) আজও ঢাকার অদূরে সাভার নামে পরিচিত। এছাড়া বাররুন হিন্দ (ইন্ডিয়ান ভূখন্ড) বরেন্দ্র ভূমির কথা তো সর্বজনবিদিত।
ঐতিহাসিকদের মতে উপর্যুক্ত প্রে¶িতে ইসলামের শুরুর দিকেই আরব মুসলিম বণিকদের মাধ্যমেই এ উপমহাদেশে প্রথম ইসলামের আগমন ঘটে। বাণিজ্যের পাশাপাশি দ¶িণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে সর্বাগ্রে তারা আগমন করে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকার উপক‚লীয় অঞ্চল, রংপুর এবং ভারতের দক্ষিণাত্যের এলাকাসমূহে মুলতান, আহমদাবাদ, পাঞ্জাব ও সিন্দুতে এবং সিন্দুর নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহে যথা দেবল, মানসূরাহ, খোজ্জদার এলাকায় ব্যাপকভাবে তারা দাওয়াতী কার্যক্রম চালায়। লোকজন তাদের দাওয়াতে ইসলামে দীক্ষিত হতে থাকে।
রাসূল সা.-এর জীবদ্দশায় তার চাচত মামা হযরত আবুয ওক্কাস উহাইদ বিন মালেকসহ ৪জন সাহাবা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ক·বাজার ও মিয়ানমারের আরাকান এলাকায় ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তারা এখান থেকে চীন পর্যন্ত ইসলাম প্রচার করেছিলেন। চীনের ক্যান্টন সমুদ্রতীরে অবস্থিত সাহাবী আবু ওয়াক্কাস মালিক বিন ওহাইবের মসজিদ ও কবর সে সাক্ষ্যই দেয়। ৬২৯ খ্রি. মালিক বিন দিনার রা. চেরামান জুমা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মাপিলার জাতি-গোষ্ঠিই সম্ভবত ভারতের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সম্প্রদায়। তখন থেকেই দায়ীদের দাওয়াতের মাধ্যমে প্রচুর স্থানীয় মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন।
যতদূর জানা যায়, ভারত থেকে কতেক লোক মদীনায় গিয়ে রাসূল সা. এর সংস্পর্শ লাভেও ধন্য হন। তাদের মধ্যে যাদের নাম জানা যায়, বাবা রতন আল-হিন্দ অথবা রতন আবদুল্লাহ আল-হিন্দ মদিনায় গিয়ে রাসূল সা. এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বলে জানা যায়। শুধু তাই নয়, মালাবারের অনুগত চেরদেশের রাজা চেরম রাসূল সা. এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলেও জানা যায়। পরবর্তীতে বহু সূফী-দরবেশ ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রচার করতে থাকেন। তাদের উত্তম চরিত্র, সৌহার্দপূর্ণ আচার-ব্যবহার, ¯^চ্ছ লেন-দেন, তাকওয়া, পরহেযগারী দেখে লোকজন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ব্যাপকভাবে ইসলামে দীক্ষিত হয়।
হযরত উমর রা. কর্তৃক পারস্য বিজয়ের পর উপমহাদেশীয় অঞ্চলসমূহকে খিলাফতভ‚ক্ত করার প্রতি মুসলমানদের দৃষ্টি প্রসারিত হয়। হযরত উমর রা. কর্তৃক নিযুক্ত বাহরাইন ও ওমানের শাসনকর্তা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উসমান বিন আবদুল আস-সাকাফী রা. ¯^ীয় ভ্রাতা আল-হাকামকে সিন্ধুর বরুচ অঞ্চলে এবং অপর ভ্রাতা মুগীরা বিন আবুল আসকে দেবল অভিযানে প্রেরণ করলে তারা তথাস্থ ক্ষমতাসীনকে পরাজিত করে ভারতের সীমানায় প্রথম ইসলামের বিজয় কেতন উড্ডীন করেন। এসময়ে আগত সাহাবীদের মাঝে যাদের নাম জানা যায় তারা হলেন-আবদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ ওতবান, আশ-ইয়াম বিন আমর তামীমী, সোহার বিন আল আবদী, সুহাইল বিন আদি প্রমূখ।
হযরত উসমান রা. এর শাসনামলেও ভারতবর্ষে সিন্ধুনদসহ সিন্ধু অঞ্চলের বহু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ইসলামের ছায়াতলে আনতে সক্ষম হন।
হযরত আলী রা. এর খিলাফতকালে সিন্ধুর উত্তর পশ্চিমাঞ্চল মুসলিম সাম্রাজ্যভ‚ক্ত হয়েছিলো। হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে প্রথমে আবদুল্লাহ বিন সাওয়ার আবদীর নেতৃত্বে অতঃপর সিনান বিন সালমাহ হুযাইলীর নেতৃত্বে ভারত সীমান্তে আক্রমণ চালানো হয়। ৪৪ হিজরীতে প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন আবু সুফরাহ ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে পাঞ্জাবের লাহোর ও বান্না এলাকা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। কিন্তু মুআবিয়া রা. এর পরবর্তীকালে মুসলমানদের ঘরোয়া সমস্যার কারণে তারা ভারতবর্ষের প্রতি মনযোগ দিতে পারেননি।

উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালীদের শাসনামলে পূর্বাঞ্চলীয় এদেশসমূহের গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ ভারতবর্ষের মোট তিনটি অভিযান প্রেরণ করেন। পরপর দুটি অভিযান উবায়দুল্লাহ বুদাইলের নেতৃত্বে ব্যর্থ হলে সপ্তদশবর্ষীয় তরুন সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিরমের নেতৃত্বে ভারত অভিমূখে প্রেরণ করেন।
হিন্দু শাসকদের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ ও বিক্ষুব্ধ হয়ে জাঠ ও মেঠ সম্প্রদায় মুহাম্মদ বিন কাসিমের সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন। এমনকি মারকানের অধিপতি একদল সৈন্য দিয়ে বিন কাসিমকে সহযোগীতা করেন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দে রাজা দাহিরকে পরাজিত করে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের দৃঢ় ঈমান, উন্নত চরিত্র নৈতিকতা,সুষ্ঠু পরিচালনা ও দক্ষতা দেখে হিন্দু শাসক কর্তৃক নির্যাতিত নিপীড়িত জনতা দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।
মুহাম্মদ বিন কাসিম রাজধানী দামে¯ে^ক ফিরে গেলে খলীফা সুলায়মান ইয়াযিদ বিন মুহাল্লাবকে সিন্ধু দেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তার মৃত্যুর পর তার ভাই হাবীব শাসন ক্ষমতায় আসেন। তারপর ৭২৪ খ্রি. শাসক জুনায়েদ হাবীবের স্থলে শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। ৭৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি ভারতের অনেক এলাকা জয় করেন এবং বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন।

সুলতান মাহমুদ গজনভী ১০০০ খ্রি. থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতবর্ষে মোট ১৭ বার অভিযান পরিচালনা করে প্রত্রেক বারই বিজয় অর্জন করেন। মি. কেনী তার সম্পর্কে বলেন, মাহমুদ যেমন বিরাট রাজ্য জয় করেছেন তেমনি বিজ্ঞাতার সঙ্গে সুশাসন করতেও সক্ষম হয়েছেন।
সুলতান মুহাম্মদ ঘুরী ১১৭৩ খ্রি. গজনী অধিকার করে ভারত অভিযানে মনোনিবেশ করেন। অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তিনি দিল্লি, আজমীর, সিন্ধু, কনৌজ, গুজরাট, বিহার ও বাংলা অধিকার করেন। ভারত উপমহাদেশের প্রথম সুলতান হিসাবে মুহাম্মদ ঘুরীকে আখ্যায়িত করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার আজাদ করা গোলাম কুতুব উদ্দিন আইবেক ১২০৬ খ্রি. দিল্লির শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে মামলুক সালতানাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় যে বংশ ১২৯০ খ্রি. পর্যন্ত ভারত শাসন করে। এরপর খিলজি সালতানাত, তুঘলক সালতানাত, সাইয়িদ সালতানাত, লোদি সালতানাত এবং সর্বশেষ মুঘল সা¤্রাজ্য ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। প্রায় হাজার বছর মুসলমানগণই এই উপমহাদেশ শাসন করে।

শাসকগণের নাম ও সময়কালের বিবরণ
ধারাবাহিক ভাবে ১০ জন মামলুক সুলতান, পাঁচজন খিলজি সুলতান, ১০ জন তুঘলক সুলতান, ৪ জন সাইয়িদ সুলতান, ৩ জন লোদি বংশীয় সুলতান ও তারপর মোঘল সম্রাটগণ ভারত উপমহাদেশ শাসন করেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ মুসলিম শাসনাধীনে ছিলো। এ সময় পর্যন্ত যেসব মহান সুলতান ও সম্রাট ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন তাঁদের নাম ও শাসনকাল উল্লেখ করা হলো।

মামলুক সালতানাত
ভারত উপমহাদেশের প্রথম সুলতান হলেন মুহাম্মদ ঘোরি। তাঁর মুত্যুর পর তার আজাদ করা গোলাম কুতুব উদ্দিন আইবেক শাসন ¶মতায় অধিষ্ঠিত হলে মূলত তাঁর থেকেই মামলুক বংশ শুরু।
* কুতুব উদ্দিন আইবেক ১২০৬-১২১০
* আরাম শাহ ১২১০-১২১১
* শামস উদ্দিন ইলতুৎমিশ – ১২১১-১২৩৬
* রুকন উদ্দিন ফিরোজ ১২৩৬ (কিছুকাল)
* বাজিয়াত উদ্দীন সুলতান ১২৩৬-১২৪০
* মুইজ উদ্দিন বাহরাম ১২৪০-১২৪২
* আলাউদ্দিন মাসউদ ১২৪২-১২৪৬
* নাসির উদ্দিন মাহমুদ ১২৪৬-১২৬৩
* গিয়াস উদ্দিন বলবন ১২৬৬-১২৮৬
* মুইজ উদ্দীন কায়কোবাদ ১২৮৬-১২৯০

খিলজি সালতানাত
* জালাল উদ্দিন ফিরোজ খিলজি ১২৯০-১২৯৬
* আলাউদ্দিন খিলজি ১২৯৬-১৩১৬
* উমর খান খিলজি ১৩১৬ (কিছুকাল)
* কুতুব উদ্দিন মোবারক শাহ ১৩১৬-১৩২০
* খসরু খান ১৩২০

তুঘলক সালতানাত
* গিয়াস উদ্দিন তুঘলক ১৩২০-১৩২৫
* মুহাম্মদ বিন তুঘলক ১৩২৫-১৩৫১
* মাহমুদ বিন মুহাম্মদ (মার্চ-১৩৫১)
* ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৫১-১৩৮৮
* গিয়াস উদ্দিন তুঘলক ১৩৮৮-১৩৮৯
* আবু বকর শাহ ১৩৮৯-১৩৯০
* নাসির উদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ১৩৯০-১৩৯৩
* সিকান্দার শাহ (মার্চ-এপ্রিল) ১৩৯৩
* নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ ১৩৯৩-১৪১৩ দিল্লী পূর্ব।
* নাসির উদ্দিন তুঘলক শাহ ১৩৯৪-১৪১৪ দিল্লী পশ্চিম।

সাইয়িদ সালতানাত
* খিজির খান ১৪১৪-১৪২১
* মুবারক শাহ ১৪২১-১৪৩৪
* মুহাম্মদ শাহ ১৪৩৪-১৪৪৪
* আলম শাহ ১৪৪৫-১৪৫১

লোদি সালতানাত
* বাহলুল লোদি ১৪৫১-১৪৮৯
* সিকান্দার লোদি ১৪৮৯-১৫১৭
* ইব্রাহিম লোদি ১৫১৭-১৫২৬

মুঘল সম্রাটগণ
* জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর ৩০/৪/ ১৫২৬-২৬/১২/১৫৩০
* নাসির উদ্দীন মুহাম্মদ হুমায়ুন ২৬/১২/১৫৩০-১৭/০৫/১৫৪০, ২২/০২/১৫৫৫-২৭/০১/১৫৫৬
* জালাল উদ্দীন মু. আকবর ২৭/০১/১৫৫৬-২৭/১০/১৬০৫
* নূর উদ্দীন মু. সেলিম জাহাঙ্গীর ১৫/১০/১৬০৫- ০৮/১১/১৬২৭
* সালেফ উদ্দীন মু. শাহরিয়ার ২৩/০১/১৬২৮
* শাহাব উদ্দিন মু. খুররম শাহজাহান ০৮/১১/১৬২৭-২/০৮/১৬৫৮
* মুহিউদ্দিন মু. আওরঙ্গজেব আলমগীর ৩১/০৭/১৬৫৮-০৩/০৩/১৭০৭
* আবুল ফাইয়াজ কুতুব উদ্দিন মু. আজম ১৪/৩/১৭০৭-০৮/০৬/১৭০৭
* কুতুব উদ্দিন মু. মুয়াজ্জম বাহাদুর শাহ ১৯/১০/১৭০৭-২৭/০২/১৭১২
* মায়াজ উদ্দিন জাহান্দার শাহ ২৭/০২/১৭১২-১১/০২/১৭১৩
* ফররুখশিয়ার ১১/১/১৭১৩-২৮/০২/১৭১৯
* রাফি উদ্দিন দারাজাত ২৮/০২/১৭১৯- ০৬/০৬/১৭১৯
* রাফিউদ দৌলা শাহ জাহান ০৬/০৬/১৭১৯- ১৯/০৯/১৭১৯
* রওশান আকতার বাহাদুর মাহমুদ শাহ ২৭/০৯/১৭১৯-২৬/০৪/১৭৪৮
* আহমাদ শাহ বাহাদুর ১৬/৪/১৭৪৮/-২/১০/১৭৫৪
* আজিজ উদ্দিন আলমগীর ২/১০/১৭৫৪-২৯/১১/১৭৫৯
* মুহিউদ্দিন মিল্লাত শাহজাহান– ১০/১২/১৭৫৯-১০১১/১৭৬০
* আলী গওহার শাহ আলম ২৪/১২/১৭৫৯-১৯/১১/১৮০৬
* মির্যা আকবর আকবর শাহ ১৯/১০/১৮০৬- ২৮/০৯/১৮৩৭
* আবু জাফর সিরাজ উদ্দিন মু. বাহাদুর শাহ জাফর ২৮/৯/১৮৩৭-১৪/০৯/১৮৫৭

লেখক
কেন্দ্রীয় তথ্য-গবেষণা ও প্রচার সম্পাদক
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন