সংবাদ/বিবৃতি

The superiority of Muslims remain in” establishing truth and resisting against injustice”. It is a holy duty for a Muslim to do this work with his/her level best . Especially, students are perfect soldiers for this work. That is why, students are active and effective manpower of a country and a nation.

স্বাধীনতা যে জনপদে পথ ভুলে যায়

আবু তাহের

শত শত বছর ধরে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী, পরিব্রাজক, সাহিত্যিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে ভূস্বর্গ হিসাবে খ্যাত কাশ্মীর। এটাকে শুধু উপামা বলা চলে না, বাস্তবিকই কাশ্মীরের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য আর সবকিছুকেই হার মানায়। কালের আবর্তে সব রঙ এসে মিশে গেছে যেন রক্তের লাল রঙে। বিধ্বস্ত বাড়ি ঘর, শত শত মা বোনের আহাজারী, লাশের স্তুপ, বারুদের গন্ধ যেন নরকে পরিণত করছে পৃথিবীর এই স্বর্গকে। আর এটা এখন নিত্যদিনকার খবর।

সম্প্রতি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদরদপ্তরে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীদের হামলায় অন্তত ১৭ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। কাশ্মিরের উরি এলাকার এ ঘটনায় হামলাকারীদের চারজনও নিহত হয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে কাশ্মিরের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে চালানো হামলাগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ ধরনের অপর একটি ঘটনায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হয়েছিল। ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ছয় অনুপ্রবেশকারী পাঞ্জাবের উচ্চ নিরাপত্তায় ঘেরা পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে প্রবেশ করে নির্বিচার গুলি চালিয়েছিল।

এগুলো নতুন কোন খবর নয়। আর তাই পুরোনো ক্ষতকে নতুন করে জখম করা হল। দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্ষত জিইয়ে রাখা হয়েছে। কিছুদিনে আগে ভারতশাসিত কাশ্মিরের শ্রীনগরে পুলিশের ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয় এক স্কুল ছাত্রের বুক। কারফিউ ডাকে ভারত। বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট সেবা। কারফিউ ভঙ্গ করে নিহত ছাত্রের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছে বিক্ষুব্ধ হাজারো মানুষ। গত দু মাসে চলা সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি মানুষ। ভারতের ¯^াধীনতার ৭০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কারফিউয়ের মধ্যে ঈদুল আযহা উদযাপন করে কাশ্মির। ঈদের দিনেও অনুষ্ঠিত হয়নি রাজধানী শ্রীনগরে ঐতিহ্যবাহী হযরতবাল মসজিদে ঈদের জামাত। গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহগুলোতে জামাত অনুষ্ঠান করতে দেয়া হয়নি। আর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য ভারত ও পাকিস্তান দুদেশ দু’দেশকে দায়ী করে। আর বরাবরের মতই ¯^াধীনতাকামী কাশ্মিরের মানুষ তাদের নিজ¯^ ভুখণ্ড বলে দাবী করে। মূলত কাশ্মির কার?

১৩৪৯ সালে শাহ মীর কাশ্মিরের প্রথম মুসলমান শাসক হিসাবে শাসন করেন। তার আমলেই সেখানে সালাতিন ই কাশ্মির বা ¯^াতি রাজবংশের সূচনা হয়। তারা ছিল প্রায় পাঁচশ বছর। তারপরে ১৫২৬ থেকে ১৭৭১ সাল অবধি থাকে মোগল সা¤্রাজ্যের অধীনে। এরপরে আফগান দুররানি সা¤্রাজ্যের অধীনে থাকে ১৭৪৭ থেকে ১৮২০ সাল অবধি।
১৮২০ সালে রণজিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মির অধিকার করে। তার আমলে ডোগরা রাজপুত বংশের গোলাব সিং তাঁর কমান্ডার নিযুক্ত হন। বৃটিশ শাসকদের সঙ্গে অমৃতসর চুক্তি’র ভিতর দিয়ে ১৮৪৬ সালে জম্মু ও কাশ্মির ৭৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গোলাব সিং কিনে নেন। ১৯২৫ সালে হরি সিং হন কাশ্মিরের রাজা। তার রাজত্বকালেই ১৯০৫ সালে জন্ম শেখ আবদুল্লার। তিনি ১৯৩০ সালের দিকে শ্রীনগর সরকারী হাইস্কুলে জুনিয়ার শিক্ষকের চাকরি পান। ১৯৪২ সালে একটি রিডিং রুম স্থাপন করেন শ্রীনগরে। সেখানে আলোচনা হত কাশ্মিরী মুসলমানদের দুঃখদুর্দশা কিভাবে দূর করা যায়, লেখাপড়া কিভাবে শেখানো যায়। একই সময়ে গোলাম আব্বাস জম্মুর মুসলমানদের নিয়ে একটা সংগঠন তৈরি করেন। অন্যদিকে পাঞ্জাবে ও লাহোরে কাশ্মিরী ও পাঞ্জাবী মুসলমানদের নিয়ে গঠিত ‘অল ইন্ডিয়া কাশ্মির মুসলিম কনফারেন্স’ কাশ্মিরের রাজনীতি নিয়ে চর্চা করতে থাকে। এদিকে দাবী উঠে ‘মুসলমানরা ¯^তন্ত্র’। বিক্ষোভ শুরু হয় কাশ্মিরে। দাবী ছিল মুসলমানদের চাকরি দিতে হবে, লেখাপড়া শিখতে দিতে হবে। ক্রমশ: ক্ষোভ বিক্ষোভ বাড়তে থাকে।

রাজা হরি সিং তাদের কাছ থেকে একটা ডেপুটেশন নিয়ে শোনে এরা কি বলতে চায়। তখন আবদুল কাদির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিচারের সময় জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাজার রক্ষীরা গুলি ছোঁড়ে। তাতে ২১ জন মারা যায়। শুরু হয়ে যায় কাশ্মিরের ¯^াধীনতা আন্দোলন। শেখ আবদুল্লাহ বললেন, ‘এইভাবে আবেদন নিবেদন করে চলবে না, রাজনৈতিক দল করতে হবে।’ তিনি প্রেমনাথ বাজাজ, গিরিধারীলাল ডোগরার মত হিন্দুদেরকেও নিয়েছিলেন সেই দল গঠনে। তৈরি হয় ‘অল জম্মু এন্ড কাশ্মির মুসলিম কনফারেন্স’। কিন্তু শিখ ও হিন্দুরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হবার পরে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংগঠন করার জন্য দলের নাম বদল করে হল ‘ন্যাশানাল কনফারেন্স’।

এদিকে তখন বৃটিশ রাজত্বে দুটো ভাগ ছিল। একটা বৃটিশ ইন্ডিয়া আর একটা করদ রাজ্য। করদ রাজ্যের সংখ্যা ছিল ৫৬৫টি। কিছু রাজ্য খুব বড় ছিল, যেমন মাইসোর, কাশ্মির, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি। বাকীগুলো অধিকাংশই ছিল ছোটছোট। রাজতন্ত্রে প্রজার কোন ক্ষমতা ছিল না। ফলে রাজাকে ক্ষমতাচ্যূত করার দাবী উঠতে থাকে সব জায়গায়। ‘অল ইন্ডিয়া স্টেটস পিপল্স কনফারেন্স’ গঠন হয় সব রাজ্যের মানুষকে নিয়ে। তার প্রেসিডেন্ট হন জহরলাল নেহরু। তিনি ঘোষণা করেন, ‘রাজাকে ক্ষমতাচ্যূত করে ভিতরে গণতন্ত্র আনতে হবে। আর নেটিভ স্টেটকে ইন্ডিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। হয় ইন্ডিয়ায় যেতে হবে, নয় পাকিস্তানে যেতে হবে। ¯^াধীন থাকতে পারবে না।’ নেহেরু কাশ্মিরে গিয়ে শেখ আবদুল্লার সাথে সমঝোতা করেন। তারপর থেকেই ন্যাশানাল কনফারেন্স এর মধ্যে গোলমাল শুরু হয়, বিভাজন হয়। জম্মুর মুসলমান নেতা গোলাম আব্বাস আলাদা ‘মুসলিম কনফারেন্স’ গঠন করেন। তাকে জিন্না সমর্থন দেন। শেখ আবদুল্লার সঙ্গে জিন্নার সম্পর্ক খারাপ হয়। ন্যাশানাল কনফারেন্স মহারাজ হরি সিংকে জানায়, ‘তুমি তল্পিতল্পা গুটিয়ে কাশ্মির ছেড়ে যাও।’

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃটিশ সরকার জানায় কাশ্মির ও করদ রাজ্যগুলো ¯^াধীন হয়ে যাবে। নেহরু তা মানেননি। দেশের প্রায় সব রাজারা ১৫ আগস্টের মধ্যে নেহেরুর ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে যুক্ত হলেও কাশ্মির, জুনাগড় এবং হায়দ্রাবাদ তাতে সায় দিল না। ইতিহাসের এক নাজুক মুহূর্তে পাক-ভারতের ¯^াধীনতা লাভের অব্যবহিত পর কাশ্মিরের ভাগ্য নির্ধারণের প্রশ্নটি মুখ্য হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের উপজাতীয় পাঠান মুজাহিদরা কাশ্মির দখল করে নিচ্ছে, এই অজুহাতে আতংকিত মহারাজা হরি সিংকে ভারতের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য করা হলে ভারত জম্মু ও কাশ্মিরে তার সেনাবাহিনী পাঠিয়ে রাজ্যটি দখল করে নেয়। মুজাহিদদের অগ্রাভিযান ভারতের আবেদনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মাঝপথে থেমে যায়। মোট উপত্যকার এক-তৃতীয়াংশ ‘আজাদ কাশ্মির’ হিসেবে ভারতের দখলমুক্ত হয়। বাকী দুই-তৃতীয়াংশ জম্মু ও কাশ্মীর ভারত বিপুল সেনাবাহিনী দিয়ে আজ অবধি দখল করে রাখে। শুরু হয় নির্যাতন।

বর্তমানে দু দেশই কাশ্মিরকে তাদের দখলে রাখতে চায়। আর কাশ্মির? ¯^াধীনভাবে বাঁচতে চায়। তারা ¯^াধীন ছিল, ¯^াধীনই থাকতে চায়। আর এই দুদেশে রাজনীতির চালে বিশেষ করে বলি হচ্ছে মুসলমানরা। এর বেশ কিছু উদাহরণ উপরে দেয়া হয়েছে। কোন একটা অযুহাত দাঁড় করিয়ে ভারত সরকার বারবার মুসলমানদের উপর জুলম, নিপিড়ন চালাচ্ছে। বেনজির ভুট্টো সরকার, জেনেভার মানবাধিকার সম্মেলনে কাশ্মিরে ভারতের মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলেও তা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছিল ভারতের কূটচালে। ভারত আজ পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মিরে কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল, আন্তর্জাতিক কিংবা স্থানীয় মানবাধিকার গ্রæপকে প্রবেশ করতে দেয়নি। আর এক্ষেত্রে পাকিস্তানেরও যে যথেষ্ট ¯^দিচ্ছা রয়েছে তাও নয়। যদিও হিসেব কষে দেখলে ভারত বারবার আগ্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কাজ ঘটিয়েছে।

কাশ্মিরের আজাদী আন্দোলনের আপোষহীন নেতাদের মধ্যে বর্ষীয়ান ও প্রভাবশালী নেতা হচ্ছেন অল পার্টি হুররিয়াত কনফারেন্স নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানী। ভারত সরকার তাঁকে কয়েক মাস ধরে গৃহবন্দী করে রেখেছে। আয়েশা আন্দ্রাবী একমাত্র ¯^াধীনতাকামী মহিলা নেত্রীকে বিগত ২৮ অগাস্ট, ’১০ গ্রেফতার করা হয়েছে। আজাদী আন্দোলনের অপর শীর্ষ নেতা মাসরাত আলম বেশ কিছুদিন ধরে আত্মগোপনে থাকলেও বিগত ১৯ অক্টোবর/২০১০ তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের ¯^াধীনতা দাবিতে জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট, হরকত উল-জিহাদ-আল ইসলামি, লস্কর-এ-তৈয়্যবা, জৈস-এ-মুহাম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন এবং আল বদর বাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করছে।

কাশ্মিরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে সংলাপ, সমঝোতা ও ন্যায়নীতির বদলে ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল বড় রকম রাজনৈতিক ভুল, যার মাসুল গুনেছে ভারত সরকার। দীর্ঘস্থায়ী সেনা মোতায়েন মানে অত্যাচার, অবিচার, অনাচার যা জনমনে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, দেখা দেয় ঘৃণা ও বিদ্বেষ। গত কয়েক দশক ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনী আইনশৃক্সখলা রক্ষার নামে নারী ধর্ষণ, নর-নারী হত্যা, বীভৎস নির্যাতনের যে গভীর ক্ষত কাশ্মিরী জনগণের মনে তৈরি করেছে তার অন্তর্জ্বালা কী সহজে জুড়াবে, ক্ষত শুকাবে?

আর এই চলমান অচলাবস্থা নিয়ে পাকিস্তানের সাথে সংলাপে বসতেও নারাজ ভারত সরকার। তাদের বরাবরের অভিযোগ পাকিস্তান কাশ্মির দখল করে রেখেছে। বর্হিবিশ্বও এ ব্যাপারে নাক গলাতে আগ্রহী নয়। তাদের মত হল এই সমস্যার সমাধান দু’দেশের হাতে। তারাই এর সমাধান করবে। জুলুম নির্যাতনে পাকিস্তানের তেমন অংশ না থাকলেও মজার বিষয় হলো, কাশ্মির তারাও হাতছাড়া করতে নারাজ। বেশ কিছুদিন পূর্বে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাশ্মিরে যারা ¯^াধীনতা সংগ্রামের জন্য আত্মত্যাগ করেছে তাদের ভুললে চলবে না। আমাদের সমস্ত প্রার্থনা তাদের সঙ্গে আছে। আমরা ঐ দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন কাশ্মির পাকিস্তানের অংশ হবে।’

আর আমরা বিশ্ববাসী প্রহর গুনছি পারমানবিক যুদ্ধের। প্রতি মুহূর্তে ডামাডোল বাজছে যুদ্ধের। যে যার মত করে কসরত দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক ইস্যুগুলো বরাবরের মত করে চাঙ্গা হচ্ছে। আর রক্তঝরছে কাশ্মিরে। আমরা আশা করি, দু’দেশই নমনীয় হয়ে (বিশেষ করে ভারত) সংলাপে বসবে। কাশ্মিরকে ছাড় দিতে হবে। ছাড় দিতে হবে পৃথিবীর ভূ¯^র্গকে। সভ্য দুনিয়ায় বসে বর্বর, জঘন্য, কুৎসিত ভারতের এই রূপ আমরা দেখতে চাই না। দেখতে চাই না বিভৎস মা বোনের রক্তঝরা দেহ। আর যদি এ নাই হয় তবে হয়ত ভারতকে এর কঠিন মাসুল গুণতে হতে পারে। যেমনটি গুণছে অনেক দিন যাবত।

লেখক
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সম্পর্কিত কার্যক্রম

সদস্য ফরম

নিচে তথ্যগুলো দিয়ে পাঠিয়ে দিন